শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে, পীর - মাশায়েখ আলেম - ওলামা ও দেশের শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। গত ০৭ ডিসেম্বর,  এমনটাই দাবী করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের 'আমীর' মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উল্লেখ্য তিনি 'পীর'ও। যদি প্রশ্ন করা হয় কে বা কারা, পীর - মাশায়েখ আলেম - ওলামা ও দেশের শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ, বাসদ,গণসংহতি আন্দোলন ওয়াকার্স পার্টি অর্থাৎ যারা সেকুলার চেতনার ধারক তারা কখনো কোন পীর মশায়েখ  আলেম উলামার বিরুদ্ধে বলেছে? একবারও বলেনি। তাহলে কারা? আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কি  গালি দিচ্ছে? না,তাও দেয়নি। বরং এই দুই বৃহৎ দলের রাজনৈতিক নেতারা জামাই আদর করে তাদের ধর্মসভায় ডেকে আনেন হিউজ পয়সা খরচা করে। কোন কোন হুজুরের আগমন ঘটে হেলিকপ্টারে! তবে কি নাস্তিকেরা কুরুচিপূর্ণ কিছু বলে ? যদিও সর্বাংশে তা সত্য নয়, তবুও যু্ক্তির খাতিরে ধরে নিলাম নাস্তিকেরা কুরুচিপূর্ণ  কিছু বলেছে। কিন্তু কোন কোন আলেম পীর মাসায়েখ তো সরাসরি নাস্তিকদের খুন  করার কথা বলতেছেন! কেবল বলতেছেন নয়, মেরে ফেলার হুমকি ও হুকুম দুটোই দিচ্ছেন প্রকাশ্যে।  তাই নয় কি? পৃথিবীর যে কোন সভ্য দেশে কাউকে খুন করার কথা বলাতো ফৌজদারি অপরাধ।  বাংলাদেশের আইনেও তাই। অথচ এ বিষয়ে প্রশাসন নিরব।আপনাদের ভাষায় যারা 'নাস্তিক' তারা কোন দিন কি একটি বারের জন্যও কোন আলেম ওলামা পীর মাশায়েখের গায়ে হাত তোলার কথা বলেছে? বলেনি, তা বলার প্রশ্নও আসে না। খুন করার কথা বলা তো দুরের কথা। তাহলে কোন কোন পীর মাশায়েখ আলেম ওলামা কেন  নাস্তিকদের খুন করতে চান? আর সব সময় 'নাস্তিকদের'  বিরুদ্ধে বিষেদাগার না করলে তো মঞ্চ গরমই হয় না। মনে হয়, দেশে খাদ্যে ভেজাল দেয়া ব্যবসায়ী,দূর্নীতিবাজ,  খুনি, ভুমিদষ্যূ, লুটেরা,  ড্রাগ ডিলার, বলৎকারী- ধর্ষকের চেয়ে নাস্তিকের সংখ্যা বেশি। দেশে যেন নাস্তিক গিজগিজ করছে।

এক সময় আপনারা তো কমিউনিস্টদের 'নাস্তিক' বলে গালি দিতেন। এখনো আপনাদের সে ধারনা পাল্টেনি। 'ইসলাম' পন্থী দলগুলো আওয়ামী লীগকেও গালি দেয়, বিএনপিকেও গালি দেয়। যদিও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাঁধে চড়েই তাদের পথ হাটতে হয়। এবং হাটতে হবেও। কারন শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার সামনে  তুলনা করলে আলেম ওলেমা পীর মাশায়েখেরা  নেহায়েত শিশু বৈ কিছু নয়। অথচ এই কথিত ইসলামপন্থী দের মুরিদ কাম কর্মিরা  শ্লোগান দেয়, "কিসের মুজিব কিসের জিয়া, দেশ চলবে কোরআন দিয়া"। এদের পূর্বসুরীরাই এক সময় শ্লোগান দিতো ' " আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান"   আবার 'ইসলামী খেলাফত' চাওয়া, একটি দল রয়েছে। যারা একটা ফতোয়া নিয়েই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেন না। তারা আবার দুনিয়া ব্যাপী ইসলামী 'খেলাফত'  চায়! বাংলাদেশেই যত 'ইসলামী দল'  আছে সারা দুনিয়ায় এতগুলো ইসলামী দল আছে কি না সন্দেহ। ঠিক বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলোর মত।  এই যুগে  খিলাফতের ভাবনা এক আজব বিষয়। ১৯২০ খৃষ্টাব্দে আরবরা যখন, তুর্কি খিলাফতের বিরোধিতা করে বৃটিশদের হয়ে লড়াই শুরু করেছিলো। তখন, এ উপমহাদেশের মুসলিমরা খিলাফত আন্দোলনের ব্যানারে তুরস্কের খলিফাদের রক্ষায়  মাঠে নেমেছিলো। ভারতবর্ষের আলী ব্রাদার্স  খিলাফত আন্দোলন শুরু করে তাতে মুসলিমরা যোগ দেয়। এবং সে আন্দোলন  এতই তুঙ্গে উঠেছিলো যে 'মহাত্মা' গান্ধীও সে আন্দোলন সমর্থন দিতে বাধ্য হয়! বাধ্য শব্দটি এজন্য বললাম, গান্ধীজি তার এক সাক্ষাৎকারে খিলাফত আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি  স্বীকার করেছিলেন, যে, পরিস্থিতির কারনে তিনি আলি ব্রাদার্স এর খিলাফত আন্দোলন সমর্থন করেন।  কি আজব বিষয় ভারতের একজন হিন্দু  সমর্থন করলেন ইসলামী খিলাফত। হাস্যকর বটে।

প্রসঙ্গে ফিরি,  কারা আলেমা ওলামা পীর মাশায়েখদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যাবহার করে। গতকাল এক হুজুরের বক্তব্য শুনলাম, তিনি বলছিলেন, যে সকল আলেম, ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে, তারা আসলে,  সরকারের নিকট থেকে কিছু সুযোগ সুবিধা (টাকা) নেয়ার জন্যই এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি  করছে। এরা মুনাফেক।  আবার,  লা মাজাহাবি- ওহাবী বা সালাফিরা বলছে, হানাফিরা বেদাতি শিরক কুফরিতে ডুবে আছে। যারা তাবলীগ করে তারা বেদাতি। কুফরি করছে। তওহিদ থেকে দুরে সরে গেছে। তারা পীরদের বলছে, ভন্ড। সকল মাজার ভেঙ্গে ফেলে দিতে চাইছে। মুরিদদের বলছে মাজার পুজারী। এক হুজুর তো বলেছেন, যারা, মাজারে এক টাকা দান করবে তারা মারা গেলে তাদের জন্য দোয়া দরুদও চলবে না। তারা 'জাহান্নামী'!  আবার যারা, পীরপন্থী তারা বলছে, সালাফি, ওহাবী লা মাজাহাবিরা এজিদের বংশধর! বলার অপেক্ষা রাখে না, কোন মুসলিমকে এজিদের বংশধর বলা কেবল কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যই নয়, তার চেয়েও বড় কিছু। আমরা ইউটিউবের কল্যানে দেখতে পাচ্ছি এক হুজুর আরেক হুজুরকে 'কুত্তা' পর্যন্ত বলতেছে! ফাসেক, মুনাফেক, ভন্ড, মিথ্যুক তো বলছেই। কাফের মুরতাদও বলেছেন একে অপরকে, সেই শীর্ষ আলেম মুফতি সাহেবেরাই। কদিন আগেও  ফরিদপুরে আহলে হাদীসের একটি  মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার দৃশ্য দেখলাম । হলফ করেই বলা যায়, মসজিদ ভাঙ্গার নেতৃত্বে  আলেম ওলামারাই ছিলেন। আওয়ামী লীগ বিএপি বা কোন  বাম সংগঠন যায়নি। এমনকি, কোন  'নাস্তিক' যায়নি মসজিদ ভাঙ্গতে। যারা মসজিদটি ভেঙ্গেছে তাদের কাফের, মুনাফেক, হেফজতে ইবলিশও বলা হয়েছে, যদিও তারা সকলেই মুসলমান। শায়খ নামে পরিচিত চরম  নারী  বিদ্বেষী এক ধর্মীয় বক্তা বলেছেন, 'বাংলাদেশে শতকরা ৯৫ ভাই ওয়াজকারী মিথ্যুক'! এক হুজুর তো মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ঈমামের বেতনকে 'বেশ্যার পয়সা" থেকেও খারাপ বলেছেন। তাহলে কি দেখা যায়?  আলেম হুজুর মুফতি শায়খ পীরেরা কেবল দেশ, শিল্প কলা, সংঙ্গিত, সংস্কৃতি,সাহিত্য নারী বিদ্বেষী বক্তব্যই সীমাবদ্ধ থাকেন না, তারা নিজেরা নিজেরাও একে অপরকে কেবল কুরুচিপুর্ণ নয়, জঘন্য ভাষাতেই সমালোচনা করে থাকেন।

 আপনারা রাজনৈতিক দল করে রাজনীতি করবেন। আর আপনাদের কথা ও কাজের সমালোচনা করলে তখন আপনারা হয়ে যাবেন আলেম -ওলামা, পীর -মাশায়খ! রাজনীতি ও গণতান্ত্রে সমালেচনা গুরুত্বপূর্ণ  এবং তা সাংবিধানিক অধিকার। গণতন্ত্রে,  রাজনীতিতে পীর -মুরিদি ওস্তাদ- সাগরেদগীরী চলে না। ওস্তাদ গীরী ও  পীরগীরী  করতে চাইলে মাদরসা ও দরগা -মাজারেই থাকুন। সরকার বা আম জনতা  কেউ কিছু বলবে না।  কিন্তু  হাফেজ, মুফতি আলেম ওলামা পীর মাশয়েখ  হয়ে, খুন, ধর্ষন,বলৎকার  করলে, জমি দখল করলে, সমাজে ধর্মের নামে অরাজগতা করতে চাইলে বা জঙ্গিবাদে জড়ালে আপনাদের বিষয়ে আমজনতা কেবল কুরুচিপূর্ণ কথাই বলবে না, আইনের আশ্রয়ও নেবে। এমন কি প্রতিরোধও গড়ে তুলবে, যদি পবিত্র ধর্ম ইসলামকে নিজেদের  অপকর্মের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। "কত রঙ্গ জান রে বন্ধু কত রঙ্গ জান মাছ দরিয়ায়,জাল ফালাইয়া ডাঙ্গায় বইসা টানো!" রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই, কখনো ছিলো না। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে গেলে একই সাথে খেলোয়াড় রেফারি ও আম্পায়ার  হওয়ার সুযোগ থাকে না। রাজনীতিও একটি খেলা। ভয়ংকর খেলা। এ খেলায় শঠতা  আছে, বদমাইশি,  বিচক্ষণতাও আছে।  আনডিউ প্রিভিলাইজ নেয়ার সুযোগ নেই। পেলেও তা ক্ষণস্থায়ী।  শেষতক 'দোস্তি পাক্কা মাগার খরচা আপনা আপনা' হয়ে যায়। জনগন এত বোকা নয়, তারা সবই জানে। তা নেতার মুখোশ হোক বা পীর দরবেশের। জনগণ সব শুনে দেখে বুঝে, কেবল  কিছু বলে না।  যখন বলে তখন পরগাছা তো দুরের কথা বটবৃক্ষও উল্টে ফেলে। সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আসে তখন তাকে বলে, বিপ্লব। 

(www.theoffnews.com - BNP Awami League Bangladesh) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours