প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূূর্ব বর্ধমান:

দাবী-দাওয়া পূরাণার্থে কর্মীদের (শ্রমিক) সংঘবদ্ধভাবে কাজ-কর্ম বন্ধকরণই "ধর্মঘট"। পৃথিবীর দেশে দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসাবে ধর্মঘটকে শ্রমিক শ্রেণি বারেবারে ব্যবহার করেছেন, আজও করছেন। এমনকি সরকারের  বিরোধিতা করার জন্যও কোথাও কোথাও বিরোধী দল ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটকে হাতিয়ার করে প্রতিবাদে সামিল হন। 

এখন প্রশ্ন এটাই যে ধর্মঘটকে কোন দেশের সরকার কি সমর্থন জানায়? অর্থাৎ সরকারে থেকে কখনো বিরোধী দলের ডাকা ধর্মঘটকে সমর্থন করা যায় কি? 

আমাদের দেশে দাবি ন্যায্য হলেও সেই দাবির সপক্ষে ধর্মঘটকে সরকার কোনওদিন মানে না। তবে ভারতবর্ষ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় একটা কাঠামো বর্তমান তাই কখনো কখনো রাজ্যস্তরে দেখা গেছে যে দল সরকার পরিচালনা করে, সেই দলের শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট ডাকলে সরকার নীরব সমর্থন জানায় সেই ধর্মঘটকে। পশ্চিমবঙ্গে বিগত সময়ে বামফ্রন্ট সরকারকে দেখা গেছে তাঁদের শ্রমিক সংগঠনের ডাকে ধর্মঘটে তাঁরা নীতিগত সমর্থন  জানিয়েছে। যদিও এযাবৎ কালে বিগত ৯ বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ডাকে কোন ধর্মঘট হতে দেখিনি। তাই তৃণমূল সরকার তাঁদের শ্রমিক সংগঠনের ধর্মঘটে কি ভূমিকা পালন করতে পারে সে অভিজ্ঞতা রাজ্যবাসীর নেই। 

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন বামপন্থীরা যখন ক্ষমতায় ছিল এরাজ্যে তখন কি বিরোধী দলের ডাকা কোন ধর্মঘটকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে? 

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব পাঠকের উপরই ছেড়ে দিলাম। অনেকেই বলছেন তৃণমূল দল বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বামেদের ডাকে আগামী কালকের বন্ধকে সমর্থন করলে ভালো হতো। আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সকলেই কম বেশি বুঝছি মূল লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে যদি তৃণমূল আগামী ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ এর ধর্মঘটকে এরাজ্যে সমর্থন করতো তাহলে তৃণমূলের ভালো বৈ মন্দ হতো না।

তবে এ ভাবনা যাঁরা ভাবছেন তাঁদের বুঝে নেওয়া দরকার -

প্রথমত: তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গোপন বোঝাপড়া প্রমাণিত সত্য।

দ্বিতীয়ত: তৃণমূল বামেদের ডাকা অতীতের সব কটি ধর্মঘটে বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। 

তৃতীয়ত: তৃণমূল দলটি কংগ্রেস ভেঙ্গে তৈরি হলেও কংগ্রেসের থেকেও বেশি কমিউনিস্ট বিরোধী। 

চতুর্থত: এই ধর্মঘটকে এরাজ্যের সরকার সমর্থন জানালে সারদা সহ অন্যান্য চিটফান্ডের যে তদন্তগুলি আপাতত বন্ধ আছে তা উস্কে দেওয়া হবে।  

তবে একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে বলা যেতে পারে ধর্মঘট যদি জনস্বার্থ ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে হয় তাহলে সে ধর্মঘটকে সমর্থন জানানোই নৈতিকতা। সেই ধর্মঘটকে বানচাল করার জন্য রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে (পুলিশ ও প্রশাসন) ব্যবহার না করাই উচিত। 

আমরা সকলেই জানি একটা বন্ধ মানেই রাজ্য, দেশ স্তব্দ হয়ে যাওয়া। কারখানার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরুনো বন্ধ হয়ে যাওয়া। ক্ষতি হয়ই।  লকডাউনের এত দিন পর নতুন করে যেখানে ট্রেন, বাস, যানবাহন সচল করা গেছে তা বন্ধ করার কি মানে এই প্রশ্নও উঠছে স্বাভাবিক। তবুও বলতেই হয় ধর্মঘট জনগনের অধিকার বজায় রাখার উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণ এক আন্দোলন। পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণী আজও এই অস্ত্রটিকে ব্যবহার করে থাকেন। আবার একশ্রেণীর মানুষের চোখে চিরকালই ধর্মঘট মন্দের।

আগামীকাল বামপন্থীদের ডাকে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের দাবীগুলির মধ্যে প্রধান প্রধান দাবিগুলো হলো কৃষকের পণ্যের ন্যায্য মূল্য, ১০০ দিনের পরিবর্তে ২০০ দিন কাজ, আয়কর দেন না এমন পরিবারকে নূন্যতম ৭৫০০ টাকা দিতে হবে, রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানার বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে, সকল বেকারের কাজ, প্রতি বছর SSC সহ সরকারি নিয়োগের পরীক্ষা চালু রাখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির রাশ টানা। এই দাবিগুলো এসময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায্য দাবী এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

এখন দেখার আগামীকালকের সাধারণ ধর্মঘটে কতটা মানুষের সারা পাওয়া যায় দেশজুড়ে এবং এ রাজ্যে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours