তৃপ্তি মিত্র, লেখিকা ও আবৃত্তিকার, কলকাতা:

সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আশ্চর্য রকমের এক আকর্ষণ। আমরা যা কিছু সুন্দর দেখি তা আমাদের মনের মতো বলে ভাবি৷ সুন্দরতা বা সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ের অবচেতনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে৷ রূপ দেখে কেউ মোহিত হবেন না, এমনটা প্রায় বিরল। তা সে প্রকৃতির শোভা হোক কি মানব মানবী৷ অপরূপ এই পৃথিবীতে কতো না রূপের সম্ভার ৷ ফুল তার মধ্যে অন্যতম৷ ফুলের সৌন্দর্যের কাছে পরাস্ত হননি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। 

শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই ফুলের প্রতি একটা আকর্ষণ আছে। আমরা সকলেই জানি মানব মনের সহজাত ধর্ম হল "সৌন্দর্য প্রেম"৷ এই সৌন্দর্য প্রেমের জন্যই আমরা সহজেই ফুলের রং, পাপঁড়ির বিন্যাস এবং ফুলের গন্ধে এক স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করি৷

ফুল আমাদের কাছে ভালোবাসার ও পবিত্রতার প্রতীক। আবার আমাদের মানব সংস্কৃতির পরতে পরতে জড়িয়ে গেছে এই ফুল৷ জন্ম থেকে মৃত ব্যক্তির শেষ যাত্রার সাথী হল ফুল। এছাড়াও মানব শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ক হিসাবে ও কাজ দেয় ফুল৷

তবে আমরা যতই ফুলের সৌন্দর্য প্রেমে আকৃষ্ট হই না কেন। জগতে এমন কিছু ফুল আছে যা মানব জাতি এমন কি সমস্ত প্রাণী কুলের কাছে অত্যন্ত ভয়ংকর৷ আমাদের পারিপার্শিক পরিবেশের সঙ্গে এমন অজস্র ফুল মিশে আছে৷ যাদের আমরা অজান্তেই লালন পালন করি৷ পুটুস, ছত্রা বা মুনিয়া যার বৈজ্ঞানিক নাম "ল্যান্টানা ক্যামরা" তাদের মধ্যে অন্যতম৷ ল্যান্টানা ক্যামরা বা পুটুস ফুলটি মুলত অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকার মতো গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের ফুল৷ অবশ্য এখন ভারত,

বাংলাদেশ সহ আরো অনেক জায়গায় ফুলটি দেখতে পাওয়া যায় ৷

সৌখিন ফুল প্রেমীদের বাগানে, পার্কে এমন কি রাস্তার ধারে, জঙ্গলে সর্বত্রই এই ফুলটি তার শোভাবর্ধন করে চলেছে৷ মানুষ থেকে ভ্রমর, প্রজাপতি সকলেই এর সৌন্দর্যের মাধুর্য্যে পরাস্ত৷ ফুলটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ হল--একই গাছে বিভিন্ন রঙের ফুলের সমাহার৷ এবং আরো মজার হল, সদ্য ফোটা ফুলটি সাদা বা হাল্কা রঙের হয়৷ এই ভাবে আস্তে আস্তে সব থেকে পুরনো ফুলটি গাঢ় রঙ ধারন করে৷ ফুলগুলি সাধারণত একটি গুচ্ছে অনেকগুলি করে ফোটে৷ এই ভাবে বিভিন্ন রঙের মিশ্রনে ফুলগুচ্ছকে সত্যিই অপূর্ব লাগে৷ তার এই রূপে আকৃষ্ট হয়ে ভ্রমর, প্রজাপতি, মৌমাছি সদলবলে হানা দেয়৷ ফলে পরাগ মিলন কার্যটি খুব দ্রুত হয়, যার ফলে বংশ বিস্তার প্রক্রিয়াটি ও সহজ হয়৷

এই ফুলটির সৌন্দর্য্যের আড়ালে যে ভয়ঙ্কর রূপটি রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি না৷

ফুলটি দেখতে সত্যিই খুব সুন্দর। কিন্তু এটি বিশ্বের কুখ্যাত দশটি আগাছার মধ্যে একটি৷ ক্রমে এই ফুলের গাছ ভারতের অরণ্যকে লুট করে নিচ্ছে ৷ এটি আগাছা প্রকৃতির গাছ হওয়ায় সাধারণত অদম্য শক্তির অধিকারী হয় ৷ যার ফলে এরা যে কোন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে৷ বপন ছাড়াই নিজে নিজে বংশ বিস্তার করে৷ জীবন চক্র স্বল্পমেয়াদী হলে ও বংশ বিস্তার খুব দ্রুত হয়৷

এই গাছটি এতটাই বিষাক্ত যে অনান্য উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গম হতে দেয় না ৷ মুলের বৃদ্ধি হতে দেয় না৷ এই গাছে পেন্টাসাইক্লিক বা ট্রাইটারাপিনয়েড নামক বিষাক্ত উপাদান থাকে। যা গবাদি পশুর পক্ষেও মারাত্বক৷

দিনে দিনে মানুষের মধ্যে এই ফুল রোপনের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। পার্কে, গার্ডেনে এমন কি বাড়িতে ও অনেকে এই গাছ লাগাছে৷ বিভিন্ন নার্সারিতেও দেদার বিক্রি হচ্ছে৷ কিন্তু আমরা মানুষেরা যদি সচেতন এবং সাবধান না হই তা হলে আমারা অচিরেই আমাদের বিপদ আমরা নিজেরা ডেকে আনছি এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours