কাকলি সেনগুপ্ত, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

ধরা যাক এই বর্ষায় একদিন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হল, আর আপনার বাড়ির সামনের ছোট রাস্তা হয়ে গেল কোমর ডোবানো জলের  মিষ্টি একটা নদী। প্রশ্ন উঠবে, এবার আপনি কী করবেন? বাড়ির বাচ্চাদের বলবেন, কাগজের নৌকা বানাও আমরা ডিঙ্গা ভাসাব?  নাহ, আপনি মোটেও সেরকম কিছু করবেন না। বৃষ্টি—বিলাসের পথ আটকাবে প্রয়োজন। আপনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে ফোনে ধরলেন আপনার ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিকে। অনুযোগ করলেন, নরমে- গরমে। তারপর জল নামাতে পাম্প চালানো হতে পারে, আবার বৃষ্টি থামলে নিজে থেকেই জল নেমে যেতে পারে। যে কোনও ভাবেই, আপনি ফিরলেন স্বাভাবিক ছন্দে। 

  এরপর একটা নতুন পর্ব। একদিন জনপ্রতিনিধি এলেন। জানতে চাইলেন, সব ঠিকঠাক তো? আপনারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি তখন রাস্তার পাশের নর্দমার দিকে তাকিয়ে বললেন, জল কিন্তু আবারও জমবে। নর্দমায় প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট ফেলা আপনারা বন্ধ করেননি। কাজেই আবারও বন্ধ হবে  নর্দমা, জল জমবে রাস্তায়।  হিমালয়ের বরফ গলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে এই প্ল্যাস্টিক। বুঝলেন? এভবেই পৌরসভার দিকে তোলা আঙুল, নিশানা বদলে আপনাদের দিকে চলে এল।

   এই সংলাপ কাল্পনিক। কিন্তু এমনটা হতেই পারে। ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’ ছাড়া বাকি সবটাই প্রমাণসাপেক্ষ। সত্যের পক্ষে বা বিপক্ষে দাগ কাটতে কাটতেই  সময় গড়িয়ে যায়। পরিবার থেকে শুরু করে খাপ-পঞ্চায়েত, সেখান থেকে জল গড়িয়ে কোর্ট কাছারি। একটাই দৌ্ড়, জয়ের অভিমুখে। একজন দুঁদে আইনজীবী তাঁর মক্কেলকে বলেছিলেন, আমি জেতার জন্য সওয়াল করি। জয়ের জন্য যুক্তি সাজাই। কারও মনের দিকে তাকাই না। কোর্টে পা রাখার পরে কিছুই আর আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। মক্কেল ভদ্রলোক বলেছিলেন, সত্য এত কঠিন তা  আগে বুঝিনি। 

এরপর সময় এগিয়েছে, বদলেছেও বলা যায়। বর্তমান সময় টেকনোলজির  হাত ধরে সত্যের নাগাল পেতে চাইছে মানুষ। অপরের প্রাইভেসি সেন্সকে অস্বীকার করে, অকারণ আলোর বৃত্তে হাজির  করছে পরম নির্জনতা।  যেন ঢোল ডগরে ঘা পড়েছে, হাট বসলেই হয়।  



 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours