ইরানী বিশ্বাস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও পরিচালক, বাংলাদেশ:

জন্মের পর থেকে শুনে আসছি, ভারত বাংলাদেশ দখল করে নেবে। স্বাধীনতার ৫৯ বছর অতিক্রম করলেও বংলাদেশ এখনো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বমানচিত্রে চিহ্নিত হয়ে আছে। ফিরে যাই ১৯৭১ সালে। ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ ঘটনা থেকে জানতে পেরেছি, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই বন্ধুত্বের কারণে পাকিস্তান ভারতের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অতর্কিতে ভারতের উপর আকাশপথে বোমানিক্ষেপ করে। তখন শ্রীমতি গান্ধী সিদ্ধান্ত নেন, সরাসরি বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন করা হবে। এবং জেনারেল আরোরা’র নেতৃত্বে পূর্ববাংলায় সেনা পাঠানো হয়। ১৯৭১ সালে ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী সেনা আত্মসর্ম্পন করে। পাকিস্তান একই দিনে দুইটি দেশের কাছে পরাজয় শিকার করেছিল।তাই সেদিন ৩টি দলিলে স্বাক্ষর করেছিল পাকিস্তান। ভারত যদি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর না করতো, তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে সেদিন কোন ভাবেই স্বাধীনতার দলিল পাওয়া সম্ভব হতো না। অথচ বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ক্ষমা পাওয়া রাজাকারবাহিনী কৌশলে ভারত বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে। কারণ তারা তো কখনোই চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। পরাজিত হওয়ার গ্লানি ঘোচাতে কৌশলে ভারতের প্রতি আক্রশ বাড়িয়ে চলেছে। 

গতকাল নিউজে প্রকাশিত হয়েছে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে মিডিয়া তথা সাধারন জনগনের গসিপের শেষ নেই। পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হবার জোগাড়। ‘ভারত  হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, পেঁয়াজ দেওয়া বন্ধ করেছে। তাদেরই আবার ইলিশ পাঠানো হয়েছে।’ কথাগুলি আমার নয় আমজনতার। আমি বাদে বাকি সবাই বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতিতে বোদ্ধা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম 

- ভারত পেঁয়াজ দিতে চায় না, না দিলে না দেবে, প্রবলেম কি?

- মাগনা তো দিচ্ছে না। 

- পয়সা দিয়ে যখন কিনতেই হবে, তাহলে ভারত কেন? অন্য অনেক দেশ আছে।

আমাদের দেশে প্রান্তিক কৃষক ফসল উৎপাদন করে ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। যে বছর ধানে বাম্পার ফলন হবে, সে বছর ধান কেনার মানুষ নাই। যে বছর আলু বাম্পার হবে, আলু গরু অথবা ঘোড়ার খাদ্য হয়। লাল চিনি কেউ কেনে না। অথচ প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে এসব ফসল আমদানীর জন্য কোটি কোটি টাকার এলসি খোলে। কোরবানীর সময় দেশি গরু খামরি গরুর দাম পাচ্ছে না। অথচ ইন্ডিয়া থেকে কবে গরু আসবে সে আশায় এ দেশের মানুষ বসে থাকে।উৎসব এলে ইন্ডিয়ান ড্রেস, কসমেটিকস, গয়না না হলে উৎসব ঠিক জমে না। এ কেমন দেশ প্রেম? ইন্ডিয়ার উপর রাগ কিসের? ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে, নাকি জনগনকে বেশি টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হবে, নাকি ভারতের পেঁয়াজ ছাড়া আপনার মুখে খাবার ঠিক স্বাদ লাগবে না !! ভারতে সারা বছর পেঁয়াজের চাষ হয়। ভারতের রাজস্থানে এই মৌসুমে পেঁয়াজ হয়। সেখানে এখন বন্যা প্লাবিত। নিজেদের চাহিদা মেটাতে তারা রপ্তানী বন্ধ করেছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা হলে, দেশের জনগনের কথা চিন্তা করে রপ্তানী বন্ধ করার মতো এত মহৎ হতে পারতো? বরং ব্যবসায় লাভের কথা ঠিক রাখতে বিদেশে রপ্তানী নয় বরং আমদানী করতো। বাংলাদেশের সাধারন মানুষ ইলিশ খেতে পারে না। অথচ ইলিশ রপ্তানী করে অর্থ উপার্জন  করে লাভবান হচ্ছে একদল মানুষ। ভারতের উপর না ক্ষেপে, একবার বলতে তো পারতেন, ভারতের পেঁয়াজ বর্জন করবো।আর কখনো ভারতের পেঁয়াজ খাবো না। ওদের দেখে দেশপ্রেম শেখা উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের প্রধান ভুল ছিল সাধারণ ক্ষমা করা। তিনি বাঙালীকে ভালবেসে ক্ষমা করেছিলেন। যার পরবর্তী ফলাফল ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। অজান্তে অন্যায় করে অনুসুচনা করলে তাকে ক্ষমা করা যায়। কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ভান করলে তাদের ক্ষমা করা উচিত নয়।দেশে প্রতিনিয়ত দেশদ্রোহীদের বংশধর বেড়ে যাচ্ছে। তাদের এখনই প্রতিরোধ না করতে পারলে পরিণতি ভয়াবহ হবে।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours