অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, লেখিকা, দুর্গাপুর:

পশুদের ভাষা অনেক মানুষ বুঝতে পারে, আমি এই বয়সে এসে উপলব্ধি করেছি। কোন বাড়ির ভেতর আচমকা ঢোকা বিড়ালকে হয়ত 'হ্যাট হ্যাট' করে তাড়িয়ে দিচ্ছি তখন সেই বিড়ালটার করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকাটা লক্ষ্য করেছি, করুণ আবেদন, যেন বলতে চাইছে যে খুব নিরুপায় হয়েই সে আমার বাড়িতে ঢুকেছে, আমি যেন ওর উপর এতটা নির্দয় না হই, আবার রাস্তার কোন সারমেয়কে হয়ত কখনও কোন খাবার দিয়েছিলাম, তাকে দেখেছি দূর থেকে সে আমাকে লক্ষ্য করে ছুটে ছুটে আমার কাছে চলে আসতে, ভেবেছি হয়ত কিছু খাওয়ার লোভে, কিন্তু তা নয় ,তখন খাবার দিলেও সে খায় না, আমি নিজে জটিল মননের শিকার তাই ভাবতে পারি না কোন ইতর প্রাণী নিঃস্বার্থে আমাকে শুধু ভালোবেসেই, আমার কাছে এসেছে। 

আমার পরিচিত এক ব্যক্তি তিনি পেশায় একজন গীটার প্রশিক্ষক প্রচন্ড পশু প্রেমিক, নিজের ঘরে চড়ুই পাখির বাসযোগ্য আস্তানা তৈরী করে, রাস্তার কুকুর দের বাড়িতে আশ্রয় দেয়, তো একদিন দেখি তার বাড়ির বেড়াল তার সহধর্মিণীকে কামড় দিয়েছে, কিন্তু সেই কামড় দেওয়াতে ভদ্রমহিলার কোন রাগ নেই যেন কোন বাচ্চার ছেলেমানুষি দেখে মজা পেয়েছেন, তিনি কামড়  হজম করে হাসতে হাসতে এসে নিজের স্বামীকে এসে বর্ণনা করছেন ,ঐ বিড়ালটির নাম করে বলছে যে সে কি হিংসুটে, ভুলু (কুকুর টির নাম) ওর খাবারটা খেয়ে নিয়েছে, সেটা ওর বৌ দেখেও কেন ভুলুকে কিছু বলেনি ,সেই রাগে বিড়ালটা ওকে কামড় দিয়েছে, আমি আশ্চর্য হয়ে গেছিলাম সেদিন ঐ স্বামী স্ত্রীর আচরণ দেখে যে কতটা পশুদের প্রতি ভালোবাসা থাকলে তাদের সূক্ষ সূক্ষ আচরণ গুলিরও ব্যাখ্যা দিতে পারে। আমার পরিচিত এক ব্যক্তির ভাইকে দেখেছি একটি নির্দিষ্ট সময়ে সে গেটের বাইরে রুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং ঠিক ঐ সময়ই একটি নির্দিষ্ট গরু গেটে চলে আসে ঐ রুটিটি খেতে। চন্ডিদাস বাজারে এক দোকানদার রাস্তার কুকুরদের সাথে কি সুন্দর বাংলায় কথা বলে এবং কুকুরগুলো কেউ দেখি কি সুন্দর তার নির্দেশ পালন করছে। একদিন ঐ চন্ডিদাস বাজারেই দেখছি একটি কমবয়সী চ্যাংড়া হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে আর তার বাম কাঁধে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে এক শালিক পাখি।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours