সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:


"হে প্রভু দয়া করো আমি বাঁচব যতদিন, এভাবেই যেন বেঁচে থাকি নাম গোত্রহীন"

হ্যাঁ, আমাদের মানব সভ্যতার আসল পরিচয়ই হলো তাঁর নাম। আর এই কারণেই আমরা প্রত্যেকে এই নামের জন্যই সমাজে পরিচিত। তার একটাই কারণ,এ সমাজ কোনো নাম গোত্রহীন মানুষদের ঠিক মেনে নিতে পারে না।

অথচ আপনারা জানলে অবাক হবেন এই পৃথিবীতে এমন একজন নাম গোত্রহীন মানুষ আছেন যার কথা আপনারা এর আগে হয়তো কখনো শোনেন নি।

চলুন, আজ আমরা এমনই এক নাম গোত্রহীন মানুষের সম্পর্কে কিছু কথা জানি।

এই পৃথিবীর বৃহত্তম জঙ্গলের নাম ব্রাজিলের  আমাজন। এই নামটির সাথে পরিচিত নন এমন ব্যক্তি এ দুনিয়ায় মেলা ভার। অথচ ভাবুন এই আমাজন জঙ্গলেই এক নাম গোত্রহীন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একাই বেঁচে আছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এবার আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে তাহলে কতদিন ধরে ওই মানুষটি ওখানে আছেন ? আদৌ কি ঐ মানুষটি বেঁচে আছেন ? যদিও বা বেঁচে থাকেন তবে সে কি ভাবেই বা তার জীবন যাপন চালাচ্ছেন ? হ্যাঁ, আমার মনেও যে এরকম প্রশ্ন আসে নি তা নয়।

তা হলে আর কি.......চলুন, আমরা এই মানুষটির জীবন যাপন  সম্পর্কে আজ একটু জেনে নিই----

এই মানুষটিও তাঁর গুষ্টি বা গোত্রের একমাত্র সদস্য যিনি তাঁর জীবনের দীর্ঘ ২২ টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এই জঙ্গলেই। বর্তমানে তিনি ব্রাজিলের রন্ডুনিয়া নামক এক অঞ্চলে বসবাস করেন।

ব্রাজিলের "ন্যাশানাল ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন" বা 'ফুনাই' নামক এক  ইন্ডিজেনিয়াস সংস্থা গঠিত হয়েছিল ৫ই ডিসেম্বর ১৯৬৭ সালে। তারা ওখানকার  কিছু স্থানীয় নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই । ওই সংস্থাটিই প্রথম ১৯৯৬ সালে এই  মানুষটির খোঁজ পায়। তার পর থেকে প্রতিনিয়ত ওই মানুষটির উপর নজরদারি করে চলেছে এই সংস্থাটি। তাদের ধারণা ওই মানুষটির আনুমানিক বয়স ৫০ বছরের থেকে কিছু বেশি হবে যিনি এই সময় টিতে ওই জঙ্গলেই একা থাকতেন। তাদের মাধ্যমেই জানা গেছে যে লোকটি এখনো সুস্থ আছেন এবং তিনি পেঁপে ও ভুট্টার চাষ করছেন।  

নৃগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার অল্পকিছু গবেষণা পত্রে বা সংবাদপত্রের নিবন্ধে এই খবরটা প্রকাশিত হলেও তারা কেউই ওই মানুষটির সাথে কথা বলে উঠতে পারে নি তার কারণ ওই মানুষটি কোন গোষ্ঠীর বা কোন গোত্রের সে কথা কোন গবেষণা পত্রে উল্লেখ নেই । তাই ওই মানুষটি সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। ওই ব্যক্তিটির শিকার  পদ্ধতির ধরন দেখে ব্রাজিলের এক গণমাধ্যম অবশ্য তাঁর একটা উপাধি ঠিক করেছে। তারা ঐ মানুষটিকে  উপাধি দিয়েছেন 'দা হোল ইন্ডিয়ান'। এই নামকরণটি আসলে করা হয়েছে "হোল" অর্থাৎ "গর্ত" নামটি থেকে। কারণ এই হোল বা গর্ত করে তার ওপর বাঁশের চটা ও গাছের পাতা দিয়ে বিশেষ ধরনের একটা ফাঁদ তৈরি করা হতো যাতে ওই গর্তের ভিতরে অনায়াসে কোনো শিকার পড়ে। তা ছাড়া এই গর্তটিকে নিজের সুরক্ষার কাজেও ব্যবহার করা হতো। এই গর্তটির মুখের দিকটা একটু ছোট হয় আর গভীরতা প্রায় ৬ ফুট।

এই মানুষটি ২০০৯ সালে একবার বন্দুকবাজের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও তিনি সে সময় নিজের সুরক্ষা নিজেই করতে পেরেছিলেন। 

ব্রাজিলের এই সংস্থাটি এও দাবি করে যে ওই ব্যক্তিটি নিজের থাকার জন্য একটি কুঁড়েঘরও নাকি তৈরি করেছিল সাথে তৈরি করেছিলেন কিছু আসবাবপত্রও। এর মধ্যে সবথেকে উল্লিখিত হলো কাঠ বা কষ দিয়ে তৈরি মশাল ও তির।২০১৮ সালে ফুনাই সংস্থাটি এই মানুষটির সম্পর্কে একটা ভিডিও প্রথম প্রকাশ্যে আনে।  

একটু সচেতনতার অভাবেই হয়তো আজ শেষ হতে যাচ্ছে এই ধরনের শ্রেণীর মানুষ গুলো। পৃথিবীতে খুঁজলে হয়তো এরকমই আরো অনেক গোত্রহীন মানুষ সম্পর্কে জানা যেতে পারে। যদি প্রশাসন ও সংবাদ মাধ্যম একত্রিত হয়ে কাজ করে। আশায় থাকলাম এ রকম আরো অজানা কিছু তথ্য আমাদের সবার সামনে উঠে আসবে আগামী দিনে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours