দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

ঐতিহ্য মেনে শ্রদ্ধার সঙ্গে বিশ্বভারতীতে পালিত হল ৭৯ তম কবিপ্রয়াণ দিবস। তবে সাংবাদিকদের ছিল না ছবি তোলার অনুমতি। এদিন কোরোনা আবহে একান্ত ঘরোয়া ভাবে উদযাপিত হল উপাসনা।পরে দুপুরে আম গাছের চারা রোপণ করে উদযাপিত হল বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানও। অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে 'ছবি তোলার অনুমতি নেই ' পোস্টার লাগানো। উপাসনা গৃহে ও আম্রকুঞ্জে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকার সময় সে ব্যাপারে সতর্ক করল  কর্তৃপক্ষ। 

প্রতি বছরই বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এবছর সাংবাদিকদের জন্য ছিল আলাদা।  এই বছর বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ছবি তোলার অনুমতি ছিল না। আম্রকুঞ্জের গেট কিংবা উপাসনা গৃহে ঢোকার মুখে বড় বড় পোস্টার ঝুলছে তাতে বড় করে লেখা - ‘ছবি তোলার অনুমতি নেই ’।এর আগে শুধু মাত্র উপাসনা গৃহে ছবি তোলার অনুমতি ছিল না। এবার আম্রকুঞ্জের অনুষ্ঠানেও ছবি তোলা বন্ধ করল কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনুষ্ঠান চলাকালীন এক ঘন্টা উপাসনা মন্দিরের সামনে দিয়ে সাইকেল ও বাইক আরোহীদের হেঁটে যেতে বাধ্য করা হল।তাই বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় পথচলতি মানুষজনের। গাড়ি, সাইকেল নিয়ে যেতে গেলে আটকে দেয় নিরাপত্তারক্ষীরা। এদিন বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পাশাপাশি আমজনতার ও ছবি তোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই মর্মে পোস্টারও দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন গেটে।সাদা পোষাকে যারা উপাসনায এসেছেন তাদেরই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে অনুষ্ঠানে যাওয়ার। যদিও এই ব্যাপারে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জন অসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার কোন মন্তব্য করেন নি। 

বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠানে  মোবাইল ফোন নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে ঢোকার সময় সকলকে সতর্ক করল বিশ্বভারতী  কর্তৃপক্ষ। এদিন ভোর ৫ টায় বৈতালিক হয়। সকাল ৭ টায় উপাসনা গৃহে ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কবিগুরুকে স্মরণ করা হয়। মন্দিরের আচার্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মনোনীত কর্মসমিতির সদস্য পদ্মশ্রী সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে রবীন্দ্রভবনের উদয়ন গৃহে কবিকক্ষে গুরুদেবের ব্যবহৃত চেয়ারে পুষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য আধিকারিক, অধ্যাপকেরা।যেহেতু জেলায় বেলা দুটো থেকে আংশিক লকডাউন আছে তাই দুপুর ১২ টায় আম্রকুঞ্জের জহর বেদীতে বৃক্ষরোপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য বছর বিকেলে এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাক্তন অধ্যাপক দীপক আচার্য। আম গাছের চারা রোপণ করা হয় আম্রকুঞ্জে।

২২ শে শ্রাবন থেকে  ১৬ অগাস্ট পর্যন্ত  বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবীন্দ্র সপ্তাহ পালিত হয়। এবছর অবশ্য করোনার প্রকোপ। জানা গেছে,  গুরুদেবের জীবদ্দশায় প্রথম  ১৯২৮ সালের  ২১ শে জুলাই বৃক্ষ রোপণ  এবং ১৪ জুলাই  হল কর্ষণ উৎসব  পালিত হয়।  স্বয়ং গুরুদেব এর সূচনা করেন।  ১৯৪২ সালের পর  ২২ শে শ্রাবণ  বৃক্ষ রোপণ এবং তার পরের দিন  হল কর্ষণ উৎসব  পালিত হয়।  বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে  নতুন প্রাণের উদ্বোধন।  জীবনের পক্ষে শপথ নেওয়া। মৃত্যু শেষ কথা নয়,  এক অর্থে রয়ে যাওয়া।

(ছবি সৌজন্যে: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours