সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

"সুরক্ষিত জীবন হ'লে, সেই জীবনেই তো সোনা ফলে"

হ্যাঁ আমরা প্রত্যেকেই জানি যে মানব জীবনে স্বাস্থ্যই হচ্ছে সম্পদ।আর এই সম্পদকে রক্ষা করার জন্য আমরা সবাই  কি কি না করি বলুন তো। যখন যে যা বলে আমরা তার সবকিছুই প্রয়োগ করি আমাদের শরীরের উপরে। ধরুন আপনি খুব অসুস্থ নানা ওষুধ খেয়েও কোন কাজ হচ্ছে না এমন কোন ডাক্তার বৈদ্যি নেই বা এমন কোন টেস্ট নেই যা আপনি করেন নি। অথচ আপনার শরীরটা ঠিক জুতের যাচ্ছে না।তখন যদি কেউ আপনাকে এসে বলে কোন ওঝার কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক করে এলে আপনার সব সমস্যা চলে যাবে, ওমনি আপনি কিছু না ভেবেই দৌড় লাগাবেন সেই ওঝার কাছে। অথবা কেউ যদি কখনো কোন কুসংস্কারের কথা বলে তখন আপনিও আগেপিছে না ভেবে তাই-ই করে বসবেন। পরে অবশ্য সে ভুল ভাঙবে তবুও। এরকম তো নানা ধরনের ঘটনার কথাই আমরা প্রায়শই জানতে পারি সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে। অথচ কিছু কিছু ছোট খাটো নিয়ম বিধি যদি আমরা নিজেরা মেনে চলি তা হলে হয়তো জীবনের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবো। কিন্তু আমরা কি তা করি কখনো!!

এই তো দেখুন না আজকাল এমন কোন বাড়ি আছে যে বাড়িতে একটা বা তার বেশি মোটরবাইক নেই। বিশেষ করে ইয়ং জেনারেশন যে বাড়িতে আছে সে বাড়িতে। তারা তো এক এক জন এক একটা বাইক নিয়ে যে ভাবে রাস্তায় দৌড়ে বেড়ায় তাতে তাদের দেখলেই ভয়ে পিলা চমকে ওঠে। অথচ লক্ষ্য করে দেখবেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছেলেরই নিজের সুরক্ষার জন্য মাথায় কোন হেলমেট থাকে না। ফলস্বরূপ, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তখন তাদের জীবনটাই শেষ হয়ে যায়। অথচ নিয়ম করে যদি কেউ ঐ হেলমেট পরে তা হলে কিছুটা হলেও হয়তো জীবনটা রক্ষা পেত। এর থেকে আমরা কি জানলাম- যে গাড়ি চালানোর সময় হেলমেট পরাটা অত্যন্ত জরুরী।

হেলমেটের কথা যখন উঠলোই তখন চলুন আজ আমরা এমনই এক আশ্চর্য হেলমেট সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই।
আজ আমরা প্রত্যেকেই জানি যে এই সময় সারা বিশ্ব জুড়ে করোনা নামে এক মরনব্যধী এসে হাজির। যার ফলে প্রতিদিনই ওই মরনব্যধীতে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তেমনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তবে এ কথাটাও ঠিক, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যাটাও কিন্তু নেহাতই কম নয়। এ সব কিছুই অবশ্য সম্ভব হয়েছে সকল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তৎপরতায়। প্রত্যেক রাজ্যই তার সামর্থ্য অনুযায়ী আক্রান্ত মানুষজনদের কে পরিষেবা প্রদান করে চলেছে। প্রত্যেক রাজ্যের ডাক্তার থেকে শুরু করে নার্স এমন কি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাদের নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন ওই সব আক্রান্ত মানুষদের শুশ্রূষার জন্য ।

আমাদের এই সুস্থ হয়ে ওঠার পিছনের আসল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা। সম্প্রতি মুম্বাই শহরে এমন ভাবেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে একটা অত্যাধুনিক স্মার্ট হেলমেটের মাধ্যমে। যে হেলমেটের সমনে লাগানো থাকছে দুটি ক্যামেরা। স্বাস্থ্যকর্মীরা এই স্মার্ট হেলমেটটি মাথায় পড়ে প্রতি এক মিনিটে ২০০ জন মানুষের শরীরের জ্বর মাপছেন। শুধু মুম্বাই-ই নয় পুনেতেও এই স্মার্ট হেলমেটের মাধ্যমে জ্বর মাপা হচ্ছে।

কোথাও কোভিড-১৯ এর আক্রান্তের সংখ্যা আকাশ ছোঁয়া কিনা তা আগেভাগে বুঝে নিতে বিভিন্ন এলাকায় এমন কি বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও ওই স্মার্ট হেলমেটের মাধ্যমে জ্বর মানছেন ওখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা। মুম্বাই এর এক একটি বস্তিতে ৬০০০ জন মানুষকে শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে যেখানে সাধারণ থার্মোমিটারের সাহায্যে  দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যাচ্ছিল (কারণ প্রতি ঘন্টায় ওই সাধারণ থার্মোমিটারের সাহায্যে ২০০ থেকে ৩০০ জনের বেশি লোকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব নয়) সেখানে এই স্মার্ট হেলমেটের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১৩ থেকে ১৪ জনের বেশি লোকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে। মিনিটের হিসেব করলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০০ জন। 

এই স্মার্ট হেলমেটটিতে যে দুটি ক্যামেরা লাগল থাকে তার একটির সাহায্যে সামনের জনদের ছবি তোলা হয় আর একটি ক্যামেরায় তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়।এই সব তথ্যকে নথিভুক্ত করে রাখার  জন্য এটি একটি স্মার্টওয়াচ এর সাথে সংযুক্ত করা থাকে।এখানেই স্টোর হয় একসাথে বহু মানুষের নথি, যা কিনা পরবর্তী সময়ে একটা সুইচ দাবলেই  ভেসে ওঠছে প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা।

৬৪ জিবি ডেটা স্টোরেজ ক্ষমতা সম্পন্ন এক একটি স্মার্ট হেলমেটের মূল্য ৬ লক্ষ টাকা।বৃহমুম্বাই পুরসভাকে এ রকমই চারটি হেলমেট দান করেছেন একটি স্চ্ছোসেবী সংগঠন যার নাম "ইন্ডিয়ান জৈন সংঘ" যাদের  মূল উদ্দেশ্য একটাই, মুম্বাইতে সংক্রমণের হার শূন্যতে নামানো। আপাতত কন্টেইনমেন্ট জোনেই এই হেলমেটের সাহায্যে জ্বর মাপা হচ্ছে। ওখানকার এক স্বাস্থ্যকর্মী নিলু জৈন এর কথা অনুযায়ী এখন প্রতি ৬০০০ জনের শরীরের তাপমাত্রা মাপা মাপতে সময় লাগছে মাত্র আড়াই থেকে তিন ঘন্টা। 

এই স্মার্ট হেলমেটির ব্যবহার যে ভারতবর্ষেই প্রথম হয়েছে তা নয়।এর আগে এই স্মার্ট হেলমেটির মাধ্যমে জ্বর মাপা হয়েছে ইটালি, দুবাই এমন কি চিনেও।

সত্যিই বিজ্ঞান আজ প্রযুক্তিগত দিক থেকে কতটা এগিয়ে গেছে ভেবে দেখুন, সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে...কি বলুন?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours