ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

আজ  ' অতীত ঐতিহ্যের আতসে দুর্গাপর ' ধারাবাহিকের  অন্তিম  পর্ব।এই  ধারাবাহিকের  পাঠকবৃন্দ- এর কাছে  অনেক কিছু   অজানা  থেকে  গেল। বর্তমান  শিল্পশহর দুর্গাপুরের অতীত ঐতিহ্য শুধু উজ্জ্বল নয়  গৌরবের। 
              পূর্বেই  দুর্গাপুরে  উৎপন্ন  অজয়  ও দামোদরের  উপনদী  ও শাখানদীগুলির  বিষয়ে  উল্লেখ করা হয়েছে। কুনুরের  আরও দুটি  শাখা  নদী  আছে। এর  এপঞ্চগঙ্গা' নদীটির  উৎপত্তি  ভাল্কী গ্রামের  একটি  মাঠ থেকে। গুসকরা -আউসগ্রাম  রাস্তা পাশ  দিয়ে  প্রবাহিত হয়ে  ধনটিকুরী  গ্রামের  রাস্তায়। বর্ষাকাল এ  আছড়ে পড়ে  রাস্তায়  যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।  সোমাইপুর  গ্রামে  কুনুরে মিলিত  হয়েছে। ক্ষীন  স্রোতধারার  নদীটির  অস্তিত্ব  বোঝা যায়  বর্ষাকালে ।তবুও  নদীর  নাম  কেন  পঞ্চগঙ্গা  সেটার  সঠিক  কোন যুক্তি  পাওয়া যায় না। 
              একদা  গোপভুমের  রাজা  মহেন্দ্রর  রাজধানী  অমরার  গড় থেকে উৎপন্ন  হয়েছে  গুসকরা  নদী। সারা বছর শুষ্ক  থাকলেও  বর্ষায়  এই  নদী  ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এই  নদী তীরেই  গড়ে উঠেছে  আউসগ্রামের  বানিজ্য  ক্ষেত্র  গুসকরা  বাজার। গুসকরার  নিকটস্হ  বসতপুরে কুনুরের  সাথে  মিশেছে  গুসকরা  নদী।  ষোড়শ  শতকের  কবি  মুকুন্দ রাম চক্রবর্তী  ' চন্ডী মঙ্গল  কাব্যে '  এই  নদীর  উল্লেখ করেছেন।  
             দুর্গাপুরে উৎপন্ন  সবচয়ে  উল্লেখ যোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ  নদী  খড়ি  বা  খড়গেশ্বরী ।এই  নদীটি  ভাগীরথীর শাখা নদী।  নদীর উৎসস্হল  আউসগ্রাম  ২ নং  ব্লকের মাড়ো  গ্রাম। উৎস  থেকে  সঙ্গম স্হলের দৈর্ঘ্য ১৪০ কিঃমিঃ। 
 নদীটি  বুদবুদ, গলসী, ভাতার,বর্ধমান সদর মন্তেশ্বর,  পূর্বস্হলী , কাটোয়া  ও  নাদনঘাট  থানা  অতিক্রম  করেছে। খড়ি  নদীর  যাত্রাপথে  পাঁচটি  নদী  এই  নদীর  সাথে  মিশেছে। কলিগ্রামের  কাছে  গৌড়নদী ,কাটোয়ার সিঙ্গির  সন্নিকটে  কারুলিয়া  গ্রামের  পশ্চিমে  ব্রাক্ষনী  ও খন্ডেশ্বরী, নাদনঘাটের দক্ষিণ  পূর্বে  জালুইডাঙ্গাতে।  বাঁকা ও আরো  দক্ষিণে  বেহুলা নদী।  সমুদ্রগড়ের   এর  সন্নিকটে  ভাগীরথীতে  মিশেছে।  মোহনা  থেকে  পুর্বস্হলীর  নিমদহ  পর্য্যন্ত  নৌকা  চলাচল করে। 
             খড়ী  বা  খড়গেশ্বরীকে  নিয়ে  একটি  কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।মাড়ো গ্রামে   কালাচাঁদ  গোস্বামী  নামে এক  ধর্মপ্রাণ  ব্রাক্ষন  বাস  করতেন। তিনি  ছিলেন  নিঃসন্তান। এক  বছর  অনাবৃষ্টি  হওয়ায় গ্রামের  মানুষ  কালাচাঁদ  এর  শরণাপন্ন  হ'ল।  তাঁর  পরামর্শে গ্রামে 'মুনুই' দেওয়া  হ'ল  । কালাচাঁদ  কতর কন্ঠে  মাকে  ডাকলেন  সেই  রাতেই  প্রচন্ড বৃষ্টি  হলো।  
           কালাচাঁদ  পরদিন সকালে  বাড়ীর  কাছে  এক অপূর্ব সুন্দরী বালিকার  দেখা  পেলেন। তার  গায়ের রং  খড়ির  মতো  সাদা। মেয়েটি  জানালো  সে  মাতৃ পিতৃহীন  অনাথ। কালাচাঁদ  তাকে  কন্যা  স্নেহে  বাড়ী  নিয়ে  যেতে  চাইলে  সে  একটি  শর্ত  দিল  তাকে  সসন্মানে  রাখতে হবে  এবং  উচ্ছিষ্ট  খেতে  দেওয়া  যাবে না। 
               খড়িকে  ব্রাক্ষনের  স্ত্রী  ভালো  চোখে  দেখতো   না ।  যতই বড়  হয় সন্দেহ  বাড়ে। সে  মনে  করে  কালাচাঁদ  এর  সাথে  তার  অবৈধ  সম্পর্ক আছে।  তাই  খড়ির  উপর  অত্যাচার  শুরু হয়।  একদিন  উচ্ছিষ্ট খেতে  দেওয়ার  নিজের  জিভ কেটে  খড়ি  স্বমূর্তি  ধারন  করে  বলেন  দেখ  আমি  কে।  কালাচাঁদ  ও তাঁর  স্ত্রী  গলবস্ত্র  হয়ে  ক্ষমা  চাইলেও  খড়ি  ছুটতে থাকে।  পিছনে পিছনে  মা  মা  বলে  ছুটতে থাকে  কালাচাঁদ।  কথিত আছে  খড়ি  যেভাবে  গেছে  নদীও  সেভাবে  প্রবাহিত  হয়েছে। এক  স্হানে  খড়ি  লাফিয়ে  যায়, সেখানে  একটি  মাঠের মধ্যে  প্রবাহিত  হয়েছে। সেই মাঠটিকে বলা হয় 'মালোক তলার মাঠ'। 
            কালাচাঁদ  হঠাৎ  দৈববানী  শুনতে  পান " তোর  সেবায়  আমি  সন্তুষ্ট। তুই  ফিরে যা  গিয়ে  আমার  পূজা  কর। "
            সেই  থেকে  উৎসস্হলে  খড়ীর  পুজা  হয়। 
            পাহাড়  ঝর্না  থেকে  নদীর  উৎপত্তি  হয়। কিন্তু  দুর্গাপর জনপদে  কোন  পাহাড়  বা  ঝর্না  নেই, তবুও  এখান থেকে  এতগুলি  শাখা ও উপনদীর  সৃষ্টি  হওয়া সত্যিই  বিস্ময়কর।  প্রকৃতির  অদ্ভুত  খেয়াল। 

*** দুর্গাপুর  নিয়ে  ভবিষ্যতে  আবার  লেখার  ইচ্ছা  রইলো।ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে  লেখা  অসমাপ্ত রইলো***

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours