দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
 

বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এক নব অধ্যায় রচিত হলো বুধবার। এদিন অবশ্যই আর  পাঁচটা, সাপ্তাহিক ঐতিহ্যবাহী উপাসনার দিনের থেকে একটু আলাদা। কারন করোনা মোকাবিলায় বীরভূম জেলা পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টাকে কুর্ণিশ জানাতে আজ বিশ্বভারতীর উপাসনার আচার্য এক মহিলা পুলিশ আধিকারিক, এমনটাই শোনা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। স্বাভাবিক ভাবেই, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। উঠেছে মৃদু গুঞ্জন। 

যদিও ঐতিহ্য মেনে কবির প্রিয় বর্ষা ঋতুর গানের মধ্যে দিয়েই যেন উপাসনার সুর বাঁধা হয় এদিন। তখন শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে অতিথি আসনে  বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আর উপাসনার আচার্য রূপে আসন অলংকৃত করছেন শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখোপাধ্যায়।   

   বুধবারের সকালেই শান্তিনিকেতনের কাঁচ মন্দিরে  বেদ মন্ত্রের মাধ্যমে উপাসনা শুরু। হয় স্বস্তি বচন। 
   এ দিনের উপাসনায় কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, আধিকারিক এবং বেশ কিছু পড়ুয়া। উপাসনার মূল বিষয় ছিল,করোনা যোদ্ধা দের সন্মান জানানো।  আচার্য রূপে কস্তুরী মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্র-রচনাবলী থেকে বর্ষার সজীবতার কথা বলেন।  বর্ষা ঋতুর সঙ্গে সাজুয্য রেখে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং অন্য পড়ুয়ারা। 
    তবে বিশ্বভারতীর ইতিহাসে হয়ত এই প্রথম কোন পুলিশ আধিকারিক উপাসনার আচার্য রূপে স্বীকৃতি পেলেন। যা করোনা যোদ্ধা হিসেবেই সমস্ত পুলিশ কর্মী দের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এহেন উদ্যোগে খুশি বীরভূমের  পুলিশ মহলও। 
এদিনের উপাসনায় আদর্শ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়েছিল। মন্দিরে প্রবেশের আগেই প্রত্যেককে থার্মাল গান দিয়ে তাপমাত্রা যেমন পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকের হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়।

কর্মীমণ্ডলীর যুগ্ম-সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “দেশ জুড়ে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুলিশ কর্মীরা যেভাবে লড়াই করছেন, আজকের উপাসনার মধ্যে দিয়ে আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। "
কেউ বলেছেন, করোনা যোদ্ধা হিসেবে বিশ্ব ভারতী অবশ্যই পুলিশ কে সম্মান জানাতে পারেন, অন্যভাবে। তাঁদের সম্বর্ধনা দিয়ে। কিন্তু মন্দিরে আচার্য্য পদ দিয়ে কেন?
   
প্রবীণ আশ্রমিক সুবোধ মিত্র অবশ্য অন্য কথা বলেন, এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। বিশ্ব ভারতীর ঐতিহ্যের পরিপন্থী। হতে পারে, পুলিশ আধিকারিক হিসেবে তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। অনেক সম্মান তাঁর প্রাপ্য, সেটা অস্বীকার করছি না। তবে, মন্দিরে আচার্য্য পদে অভিষিক্ত হতে গেলে তাঁকে বিশেষ গুণের অধিকারী হতে হবে। এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো বর্তমান উপাচার্য বিশ্ব ভারতীর ঐতিহ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তাঁর হাতে বিশ্ব ভারতী বিপন্ন। একের পর এক যে সিদ্ধান্ত তিনি নিচ্ছেন, তা ঠিক ভাবতে পারছি না। আমি বিশ্ব ভারতীর আচার্য্য এবং পরিদর্শককে এর প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি লিখবো। 

উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিতে অপারগ কেউ রবীন্দ্রনাথের উৎসর্গ কাব্যের একটি লাইন উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ' বুঝি গো আমি, বুঝি গো তব ছলনা, যে কথা তুমি বলিতে চাও, সে কথা তুমি বলো না'। 
অনুষ্ঠান যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও, আশ্রমের অলিন্দে কেউ যেন মিটি মিটি হাসছে! বিশ্ব ভারতীতে কী এমনটাই হয়?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours