রুদ্র সান্যাল, লেখক, শিলিগুড়ি:

সকাল সকাল খবরে বিকাশ দুবের মৃত্যু সংবাদ দেখে অনেককেই যারপরনাই আনন্দিত। সেই কারণেই তর্কের খাতিরে বা বাস্তবের খাতিরেই ধরে নিলাম, বিকাশ দুবের মৃত্যুটা সেই সব পুলিশ কর্মীদের নিকট আত্মীয়দের কাছে খুবই কাঙ্খিত ছিল যারা তার নৃশংস শিকার হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। এই বিকাশ একদিনে বিকশিত হয় নি। সেই নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে এর বিকাশ লাভ শুরু। সেই সময় কল্যাণ সিংহের সরকার। তারপর মুলায়ম সিংহ বা মায়াবতী বা অখিলেশ যাদব হয়ে এখন যোগীর দ্বারে এসে বিকাশের পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে। সেই কারণে তাকে মারার প্রয়োজন ছিল। 

কিন্তু বিষয়টা হলো, এই বিকাশ কে মেরে কি শান্তি ফিরবে? যোগী তো প্রায় প্রতিনিয়ত কাউকে না কাউকে এনকাউন্টার করে মারছেন। তাতে কি অপরাধ কিছু কমছে? এক বিকাশ মরবে। আর এক বিকাশ তৈরি হবেই।

সামন্ততান্ত্রিক উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে ঠাকুর শ্রেণী তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্যে, প্রতিনিয়ত একজন বা একাধিক এই ধরণের বিকাশের জন্ম দেবে। ফলে রক্তবীজের মতন এরা জন্মাতেই থাকবে। এদের মৃত্যু নেই। এরা অমর। তাই আজকে এক বিকাশের প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতেই সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য তাকে মরতেই হতো। 

সরকার বাহবা পাবে জনগণের কাছে থেকে। কারণ জনগণের স্মৃতি বড়ই স্বল্পমেয়াদী। সরকারের অন্যান্য ভুলভ্রান্তি বেশিদিন মনে থাকবে না কারুর। অপরাধীদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা সব সময়ই। তাই প্রয়োজন মাফিক তাদের এনকাউন্টার করে মারলে সরকারের সুবিধে বেশি। 
আসলে বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা সাধারন মানুষের মধ্যে এত বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে, তাই তারিখ পে তারিখ এর জায়গায় দ্রুত সিনেমার মতন ক্লাইম্যাক্সের পরিণতি চায় সাধারণ মানুষ। আর এক্ষেত্রেই জিতে যায় রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতৃত্ব। কারণ তারাও এই মৃত্যুর ফসল তুলতে আগ্রহী। এরাই তৈরি করে দুবৃত্ত। রাজনীতিতে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যে দুর্বৃত্তায়ন এদের প্রয়োজন। আবার এরাই নিজেদের প্রয়োজনে এই সব বিকাশ দের ধ্বংস করে। 

আমরা কোনদিনই ইউরোপীয় গণতন্ত্রের ধারে কাছে পৌঁছাতে পারবো না। তা আমরা যতই নিজেদেরকে অর্থনীতিতে এখন উন্নত রাষ্ট্র বলে দাপাদাপি করি না কেন? 

আমাদের ইতিহাসে গণতন্ত্র খুব বেশি দিন ছিল না। সেই ঐতিহাসিক মহাজনপদের সময় কিছুটা গণতন্ত্র ছিল। তারপর শুধুই রাজতান্ত্রিক শাসন এবং শোষণ। তাই আমাদের পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের বড়াই আসলে এক অর্ধ সিদ্ধ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক গণতান্ত্রিক কেক! যা খেয়েই আমরা সন্তুষ্ট। আসলে পরিবারতান্ত্রিক শাসনে আমরা এই ধরণের পারিবারিক সম্মান রক্ষার খুন প্রচুর খুঁজে পাই। আর তাই ঘটছে আমাদের গণতন্ত্রে নিয়মিত ভাবে। 

ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই তাই শত শত বিকাশের জন্ম হবে। আবার শত শত বিকাশের মৃত্যু হবে। বর্তমান ভারতবর্ষের গণতন্ত্রে এটাই ভবিতব্য, এবং আমরা তাই দেখে উদবাহু হয়ে নৃত্য করবো। সাময়িক আনন্দের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পাবো। রাজনীতিবিদরা তো সেটাই চান এখন।
তাই নয় কি?

ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বরূপ খুঁজতে গেলে, বিতর্কিত হলেও প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours