শেখর রায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
                  
ছয় বছর আগের হিন্দুর পক্ষশক্তি বিজেপির বর্তমানে অ-হিন্দু কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলছে। যে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতার বাইরে, সেখানে দাবী তোলে হিন্দু মন্দিরের উপর রাজ্য সরকারী নিয়ন্ত্রণ চলবে না। আর যে রাজ্যে ক্ষমতায়, সেখানে নির্লজ্জের মত সব হিন্দু মন্দির রাজ্য সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন রাখে। গত বছর বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ‘চার ধাম মন্দির পরিচালনা আইন’ রাজ্য বিধান সভায় পাস করে যার অধীনে রাজ্যের ৫১টি মন্দির পরিচালনা, ভক্তদের দানে তৈরী তহবিলে হস্তক্ষেপ বহাল তবিয়তে চলছে। তার আগের বছর (২০১৮) তে মহারাষ্ট্রের  বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস (পদচ্যুত) হিন্দুদের ক্ষোভ উপেক্ষা করে রাজ্য আইন প্রণয়ন করে শনি সিগ্নাপুর মন্দির ও মহালক্ষ্মী আম্বাবাই মন্দির সরকারী নিয়ন্ত্রনে আনে। ২০১৭ সালে হরিয়ানায় বিজেপি সরকার চণ্ডী দেবী মন্দির, পাঁচকুলা এবং দুর্গা মাতা মন্দির নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনে। উত্তরাখণ্ড ছাড়া আর এই সব রাজ্যে ভোটে বিজেপি এবার ধরাশায়ী। 
বিজেপি সাংসদ ডঃ সুব্রামন্যম স্বামী উত্তরাখণ্ড বিজেপি সরকারের মন্দির অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। সুপ্রিম কোর্ট এমন অধিগ্রহণকে বেআইনি ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছে। কারন অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানদের উপর কোন হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়না যখন শুধু হিন্দু মন্দির নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা যা মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ। মন্দির নিয়ন্ত্রনের সপক্ষে কোন যুক্তিপ্রমান পেশ করতে তারা ব্যর্থ হয় যে উক্ত মন্দিরগুলিতে কোন আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে।  
ভোটের প্রচারে বিজেপি বলতো যে দেশে সংখ্যালঘু তোষণ চলে ঐ কংগ্রেসি জামানার সংখ্যালঘু কল্যান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এবং এই মন্ত্রনালয় সমাজে বিভাজন বাড়িয়েছে, তাই একে তুলে দেয়া উচিত। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর তুলে দেয়া দুরে থাক, মুসলিমদের জন্য মুসলিম মন্ত্রী রেখে নতুন নতুন স্কিমের মাধ্যমে অর্থ সাহায্যদাণ বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। কোন শিখ, জৈন বা খ্রিস্টান মন্ত্রী রাখা যায়নি। 
একদিকে হিন্দু সমাজে গোরক্ষা প্রচার করে অন্যদিকে গোপ্রজাতি মোষের মাংস রপ্তানিতে মোদীর ভারত তৃতীয় স্থানে আছে। গোমাতার মতই শিবের ও যমরাজের বাহন মোষের দেয়া দুধ, ঘৃত ইত্যাদি সমউপকারি খাদ্য যার হত্যা দক্ষিণ ভারতের হিন্দুদের কাছে বেদনার। মোষ পুজার উৎসব অন্ধ্র প্রদেশের আদার, কর্ণাটকের কাম্বালা ও তামিলনাড়ুর জালিকাটু নামে বিখ্যাত।
কংগ্রেসি আমলের করা বিতর্কিত আদেশনামার চাপে পড়ে হিন্দু ধর্মীয় বিদ্যালয়গুলি একের পর এক বন্ধ হয়ে চলেছে, যখন মাদ্রাসা, খ্রিস্টীয় কনভেন্ট স্কুলগুলি দিন দিন প্রসার লাভ করে চলেছে। তথাপি এই RTE নামে আদেশনামা মোদী সরকার বহাল রেখেছে। এইভাবে হিন্দু সমাজ ন্যায় বিচারে আজো বঞ্চিত। 
বিজেপি নামে হিন্দুত্ববাদি দল কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে তার আদর্শ ও নীতি বদলে যায়। মুসলিম তোষণে পশ্চিম বঙ্গে দলে রাখে মুসলিম সংখ্যালঘু সেল, আবার খ্রিস্টান অধ্যুষিত মিজরামে রাখে মিশনারি সেল। গোয়া রাজ্যে বিদেশী টুরিস্টদের খিদমত করতে হোটেলে ঢালাও গো মাংস পরিবেশনের অনুমতি দেয়, আবার দেশের হিন্দি বলয়ে গোমাংস বর্জনের পক্ষে প্রচার করে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours