সুস্মিতা পাল, লেখিকা ও শিক্ষিকা, কলকাতা:
   
       মেঘলা মন নিয়ে জানালার ধারে একা বসে ছিলাম আনমনে। মনে মেঘ জমতে কোনো ঋতুর হিসাব মানা ক্যালেন্ডার লাগে না, তার বারো মাসই আষাঢ় শ্রাবণ। তবে আজ সকালটাও বৃষ্টিস্নাত। ভেজা লাইটপোস্টে বসে আছে একটা দলছুট কাক।' কাকভেজা ' শব্দটা কোথা থেকে তৈরি হোলো - বোঝা যায় এমন ছবি দেখলে। 
        আজন্ম কোলকাতার বুকে কেটেছে, তাই  দিগন্তখোলা প্রকৃতির অঙ্গনে বর্ষার নাচের ছন্দ অশ্রুত অ-দৃষ্টই থেকে গেছে। মু্ন্নারের পাহাড়ে একবার অনেক উঁচুতে মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে যখন প্রায় চূড়ার দরজায়, কি জানি কেন পাহাড়ের মুখ হোলো আঁধার, দুয়োর দিলেন তিনি। ঝমঝমিয়ে নেমে এলো বৃষ্টিধারা। কোথাও কোনো ছাউনি নেই। সেদিন দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল বৃষ্টির সঙ্গে, নেমে এসেছিলাম সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে বরষার ভালোবাসার ধারা-পাতে । জীবনের ধারাপাতে এই স্মৃতিরাই সঞ্চয়ী সংখ্যা।
      ক্লাসে যখন 'ছিন্নপত্র' পড়াই, কল্পনা থেকেই ছাত্রীদের বোঝাই - শান্তিনিকেতনের মাঠে বর্ষার অভিসার, তার ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়া কিভাবে কবিগুরুর মনকে আকুল করত, গান ও সুর গুনগুনিয়ে উঠত তাঁর মনে। চেতলা- রাসবিহারী এভিন্যু - কালীঘাটের ঘিঞ্জি পাড়ার বাসিন্দা মেয়েরাও কষ্ট করেই হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করে। কত সহজ স্বাভাবিক দৃশ্য বা অনুভূতিও অধরা থেকে যায়, চেষ্টা করেও হাতের নাগালে পাই না সারাজীবন। কালিদাসের আষাঢ়স্য প্রথম দিবস থেকে যুগ যুগান্ত পেরিয়ে প্রেম পথ চলেছে ভিজতে ভিজতে, কবিরা তাদের সাজিয়ে তোলেন মেঘমল্লারের সুরে, মানুষের মনে তারা হয়ে থাকে চিরন্তনী। আমিও আজ তাই কাব্যি দেব মেপে আমার মেঘলা মনের আঙিনাতে। 
'মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা, /মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা।'

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours