দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

কানাডা আমেরিকার আদিবাসীরা হচ্ছে ইনুইট বা এস্কিমো জাতি।বারো হাজার বছর ধরে এরা কানাডাতে আছে, উত্তর কানাডা, কুইবেক রাজ্যের ভেতরে, বা নর্থ ওয়েস্ট টেরিটোরিতে। নুনাভিটা, রাজ্যে... আর ইয়েলো নাইফ এখন রাজধানী। এদের ভাষা ইনুকটিউট। আমেরিকানদের সাথে এই ইন্ডিয়ানদের বহু চুক্তি হয়।আগে হতো যুদ্ধ আর আমেরিকানদের অত্যাচার এই আদিবাসীদের ওপর। দেশ ওদের কিন্তু শয়তানীতে কে পেরেছে ব্রিটিশদের সাথে? নিউইয়র্কের ম্যানহাটনকে নেটিভদের কাছে থেকে পঞ্চান্ন ডলারে কিনে নেয় আমেরিকানরা। টরন্টো, মিসিসাউগা, ওকলাহোমা, সব নাম ইন্ডিয়ানদের। ১স্ট নেশনের চুক্তির পর ইন্ডিয়ানদের জায়গা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে ওরা  থাকে তাকে বলে রিসার্ভ। এরকমের হাজারটা রিসার্ভ আছে সারা নর্থ আমেরিকাতে। আমাদের দেশের আদিবাসীরা যেমন সরকারি কাজ খুব একটা পায় না বা অবহেলায় আছে ঠিক তেমনি ইনুইটরাও খুব খারাপ অবস্থায়  বাস করে। ১৯৫০ থেকে কানাডিয়ান সরকার বহু উন্নয়নের কাজ করেছে এদের জন্য। বহু ইন্ডিয়ান এখন পড়াশুনা করে ভালো কাজ করে, তাদের সংখ্যা খুব কম। ক জন আমাদের সাঁওতাল, শবর ভাইয়েরা সরকারি কাজ পান? এই রিসার্ভ আমি থেকেছি কয়েকবার। ভাঙা বাড়ি, জল নেই, টয়লেট খারাপ। বেশির ভাগই ড্রাগ  আর ভদকার ওপর আছে। খুব করুন অবস্থা। এদের কিন্তু প্রচুর সম্পত্তি আছে চুক্তি অনুযায়ী। ওদের জমির ওপর দিয়ে হাইড্রো র তার গেলে। খুঁটি বসলে বহু টাকা দিতে হয়। এরা ট্যাক্স দেয়না, শিকার, মাছ ধরার অধিকার, এবং সরকারি সাহায্য পেয়ে থাকে। 
ল্যাব্রাডোর, বা কুইবেকে যেখানে ওরা থাকে নানা উপজাতি, মোহক, বিগ ফুট, আরো নানা জাতি, এরা শিকারের ওপর নির্ভর। ফাঁদ পেতে বেজি, শেয়াল, ভল্লুক ধরে। এদের প্রধান খাবার তিমি, শীল, বা যে কোনো জন্তু, মাছ। ইগলু বলে আর কিছু নেই এখন।যখন শিকার করতে যায় বরফের মধ্য তখন তাবু খাটানোর মতো ইগলু বানিয়ে নেয় বরফ কেটে। কুকুরের স্লেজ আছে সবার, এখন স্কিদু চালায় স্কুটারের মতো রিকশা। শহরে ইনুইটদের দেখা যায় না।নেটিভদের নিয়ম অনুযায়ী এরা অন্য বিয়ে করলেই ইন্ডিয়ান স্ট্যাটাস চলে যায়। আমি মন্ট্রিয়লের কাছে ওকা বলে একটা রিসার্ভ ছিলাম। ওকার গল্প আমি লিখেছিলাম প্রতিদিনে । সে এক অভিজ্ঞতা বটে। আপনাদের দ্বারা হবে না। পারবেন গাজা খেতে ওদের সাথে? পারবেন ক্যানো করে জঙ্গলে গিয়ে শিকার করতে? পারবেন এক ঘরে তিমি ছালের তলায় মেয়েদের সাথে শুতে? বোটকা গন্ধে আপনার অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসবে। সরকার যদি ওদের পাওনা না দেয় সব রিসার্ভার ইনুইটরা রাইফেল নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে? রেন্ট কন্ট্রোলের টাকা তুমি দেবে না অবসর প্রাপ্ত নাগরিকদের? সরকার লুঠ করে চলবে নেতার অনুপ্রেরণায়? এদের রক্তে বইছে রাগ, প্রতিশোধ। এতো অন্যায়ের, খুনের, দখলের কথা এরা ভোলেনি। সমাধান এখুনি করতে হবে, কোনো ধামাচাপা কমিশন করতে দেয় না বা মানে না। শুনে আপনাদের ভালো লাগবে যে একজন বাঙালি বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী ইয়েলো নাইফে আছেন বহুদিন ধরে। ইউনুইটদের জন্য বহু পরিকল্পনা এবং সাহায্য করে চলেছেন। রাজ্য সরকার তার হাতে অনেক ভার দিয়েছেন। লক ডাউন কাটলেই আমি যাবো ওখানে কাজ করতে। আরো অনেক কিছু জানতে। ভালো থাকবেন। (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours