ইরানী বিশ্বাস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও পরিচালক, বাংলাদেশ:

পত্রিকার পাতা ওল্টাতে চোখে পড়লো একটা ফিচার। শুক্রবারের সাহিত্যপাতা কখনোই বাদ পড়ে না। আজকাল নতুন লেখকরা বেশ ভাল লিখছে। ভাবতে ভাবতে আনন্দে বুকটা ভরে ওঠে সীমার। আগামী দিনগুলি নিয়ে ভাবতে বসে যায়। আবার এই বাংলায় সৃষ্টি হবে জীবনানন্দ দাশ, মাইকেল মধুসুধন দত্ত, কাজী নজরুল কিংবা সুকান্ত ভট্টাচার্য। ভাবতে ভাবতে বড়ফ্রেমের চশমা চোখে দিয়ে পত্রিকার পাতায় চোখ রাখে। আজ একটা উপন্যাসের শেষের অংশ ছেপেছে। প্রায় এক দেড়মাস আগে থেকে ছাপা হচ্ছে নিয়ম করে। প্রথম দিকটা ততটা ভাল না লাগলেও আজ কেন যেন মন টানছে পড়ার জন্য। 
উপন্যাসের পাশে এক কলামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। এটা ঠিক কি বুঝতে পারল না সীমা। হাতের কাছে মোবাইল ফোনটা নিয়ে পত্রিকা অফিসে একবার ফোন করার চেষ্টা করলো। শুক্রবার বলে অফিসে বোধহয় তেমন কেউ থাকে না। পরের বারে একটা ছেলে টেলিফোনটা তুলল। এক কলামের লেখাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে ছেলেটি বিশেষ কিছু বলতে পারলো না। তবে লেখকের টেলিফোন নাম্বারটা দিয়ে যোগাযোগ করতে বললো।
ছুুটির দিনে সীমার বিশেষ কোন কাজ থাকে না। আর্ট কলেজের চাকরি ছাড়া অবসর সময় বাড়িতেই কাটে। বাবা মারা গেছেন বছরখানে হবে। বুড়ো মা চোখে ভাল দেখতে পায় না। দুর সম্পর্কের এক বোনের মেয়ে রিক্তা থাকে সীমার কাছে। সে এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পড়ছে। বাড়িতে দুটো কথা বলার মতো লোক নেই। বাড়ির ছাদে নানান গাছের বাগান করেছে। বিকালে সেখানে সময় কাটে অনেকটা। আর বারান্দায় রয়েছে ময়না আর খরগোসের খাঁচা। ওরা এখন পোষ মানিয়ে গেছে। খাঁচার দরজা খুলে দিলেও যেতে চায় না। পশু-পাখি পোষ মানে খুব সহজে। মানুষ এসব বোঝে না। 
দুপুরে গোসল সেরে, খাবার টেবিলে বসতেই রিক্তা এসে বললো,
- আন্টি আজ আমি বাসায় খাবো না। বন্ধুদের সাথে কেএফসিটে পার্টি আছে। 
রিক্তা চলে যাবার পর রিপনের মা এসে সীমাকে ঘেষে দাঁড়ালো। কিছু একটা বলবে হয়তো। একা জীবনে এতটা বছরে সীমা কম কিছুতো আর দেখেনি। আপনের চেয়ে পর নিয়ে তার যত নাড়াচাড়া। শুধু যে নিজের কাজের মেয়ে, তা নয়। অন্য বাড়ির কাজের মেয়েরা পর্যন্ত ছুটে আসে, 
- আপা, দ্যাশে মাইয়েডা লেহাপড়া করতাছে। কিছু ট্যাকা যদি দিতেন।
এভাবে অনেক সাহায্য করে সীমা। রিপনের মাকে দেখে বুঝতে পারে সীমা কিছু চাইবে নিশ্চয়ই। প্লেটের দিকে চোখ রেখে সীমা জিজ্ঞেস করে,
- কি ব্যাপার, কিছু বলবে?
- জ্বী একখান কথা কইয়াম চাই।
- কি কথা বলে ফেল। কিছু লাগবে? টাকা..
- জ্বী না আপা। আল্লার ইচ্ছায় আপনে কম কিছু দেন নাই। না চাইতেই সক্কল কিছু পাইয়াম।
- তাহলে?
- আফা, আপনে আর কতোদিন একলা থাইকপেন?
বিদ্যুৎ বেগে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় রিপনের মায়ের দিকে। মুখ খানা খুবই সরল। চেহারায় কোন লাবন্য নেই । চোখ দুটি নিস্পাপ। স্বামী-সন্তান নিয়ে কি সুখে আছে, মেয়েটা নিজেই জানে। অথচ মাত্র একমাস আগে রিপনের আব্বা তাকে মেরে রক্ত বের করে দিয়েছিল। সীমা শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। অথচ এই মেয়েটাই আজ তাকে একা থাকার কষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে। 
সীমার তাকানো দেখে একটু ভয় পেয়ে রিপনের মা চোখ নামিয়ে বলে,
- না মানে, কইতেছিলাম কি শ্যাষ বয়সে ক্যাডা দেখবো? মাইয়া মানষের স্বামী আর ছাওয়াল ছাড়া কোন পরিচয় নাই।
খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা গড়ানো সীমার পূর্ব অভ্যাস। রেষ্টের এক ফাঁকে মনে পড়লো পত্রিকা অফিস থেকে নম্বর দেয়ার কথা। ফোন করলে কেমন হয়। আগে হলে এ কাজটা সীমা কখনোই করতো না। নিজের পার্সোনালিটি ভীষন স্ট্রং। ইদানীং তাতে পরিবর্তন এসেছে। এখন ইচ্ছে করে পাশের ফ্লাটের ভাবীদের সঙ্গে গল্প করতে যায়। মাঝে মাঝে পুরানো বান্ধবীদের বাসায় ডেকে আড্ডাও দেয়।
পত্রিকার উপর লিখে রাখা টেলিফোন নম্বরে কল করে অপেক্ষায় আছে সীমা। একবার দুই বার করে তিনবারের বার কেউ একজন রিসিভ করেছে। বেশ বয়স্ক গলা। কিন্তু কোথায় যেন ভীষন চেনা মনে হচ্ছে।
- আচ্ছালাম ওয়ালাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আচছালাম। আমি কি মিস্টার স্বপন ওয়াহিদের সঙ্গে কথা বলছি?
- না, আমি ওর বাবা। আপনি কে বলছেন?
- আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি সীমা চৌধুরী বলছি।
- ওহ। ওকে কি খুব দরকার?
- না। মানে আজ ওনার একটা লেখা পড়লামতো। তাই পত্রিকা অফিস থেকে নম্বরটা নিয়ে..
- ও আচ্ছা। ওতো বাড়িতে নেই। একটু বাইরে গেছে। আসলে কি বলবো আপনার কথা? 
- বলবেন, আমি ঢাকা থাকি। আর্ট কলেজের শিক্ষক সীমা চৌধুরী।
- সীমা! তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো। আমি পলাশ ওয়াহিদ। আর স্বপন আমার ছেলে..
মোবাইলের রেড বাটনে সজোরে চেপে ধরে সীমা। দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এভাবে এক সময় সন্ধ্যে হয়ে যায়।

আর্ট কলেজে পড়ার সময় এক বয়স্ক লোক সীমার বাবাকে এসে ভীষন চেপে ধরলেন। লোকটা সীমাকে তার সেঝো ছেলের বউ করে নিতে চান। কারন হিসাবে তিনি বললেন, মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী। গুনেও তেমনি। টেলিভিশনে সীমাকে দেখে বয়স্ক লোকটা ভীষন ভক্ত হয়ে পড়েন। সে বছর বিদেশ থেকে টিম এসেছিল বাংলাদেশে। একটা এক্সিবিশনে সীমা হয়েছিল থার্ড। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশংসা পত্র নেবার সময় লোকটি সীমাকে দেখেছেন। আর মনে মনে ভেবেছেন, এমন একটি মেয়ে যদি তাদের বাড়ির বউ হতো। তবে গর্ব করে পুরো চট্টগ্রামের সকলকে বলতো,
- আমার ছেলের বউ, অনেক বড় আর্টিস্ট। প্রধানমন্ত্রী নিজে হাতে পুরস্কার দিয়েছেন। 

বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সীমা অবাক হয়েছিল। এ বাড়ির সকল বউরা একগলা গয়না পরে কাঠের পুতুলের মতো ঘুরে বেড়ায়। এমনকি সীমার শ্বাশুড়ি, যার বয়স ষাটএর কোঠায়। তিনিও গা ভর্তি গয়না পরে ঘুরছেন। বিয়ের কদিনের মধ্যে তাকে শ্বাশুড়িমা নিজের ঘরে ডেকে বলেছিলেন, তোমার শ্বশুর কিন্তু তোমাকে রূপ দেখে গলে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, গরীব হলেও পঙ্কে পদ্ম ফুটেছে। তারপর ছেলের বউ করে ঘরে এনে তুলেছিলেন। বিয়ের আগে বাপের দেয়া এক চিলতে সোনা পরতে, তখন দেখার কেউ ছিল না। বিয়ের সময়তো তোমাকে কম কিছু দেইনি। এখন থেকে সেগুলো পরবে।
মাথা নিচু করে সীমা জানিয়েছিল, 
     -  গয়নায় আমার এলার্জি আছে।
- এ্যা, গয়না পরতে মেয়েদের এলার্জি। বাপের জন্মেও শুনিনি। বাড়ির অন্য বউরা যেমন পরছে, তোমাকেও পরতে হবে। এই বলে দিলাম। 
কথা গুলো বলতে বলতে অন্যদিকে চোখ করে পান মুখে দিলেন। সীমা তেমনি চোখ নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
সীমার স্বামী ছিলেন একেবারে নিরীহ। মুখে রা শব্দটি পর্যন্ত নেই। বিয়ের পর সীমা অবাক হয়েছিল। নতুন বিয়ে হয়েছে, অথচ পলাশের কোন বন্ধু আজ পর্যন্ত তাকে দেখতে আসেনি। পরে কথায় কথায় জানতে পারে, ছোট বেলা থেকে বন্ধু-বান্ধব বাড়িতে আনা নিষেধ ছিল। এখনো স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি, তেমনই রয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে অফিস। ছুটির পর সোজা বাড়িতে। তাই বলে বউ নিয়ে খুব যে আদিখ্যেতা, তা কিন্তু নয়। এসব ছেলেদের দরদ সব শরীর নিয়ে। মন তারা বোঝে না। 
বিয়ের পর আট মাসের মধ্যে মাত্র তিনবার গিয়েছিল বাপের বাড়িতে। কোন বারই চার দিনের বেশি থাকতে পারেনি। ওমনি ফোন এসেছে সীমাকে পাঠানোর জন্য। তৃতীয়বার বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে যাবার সময় সীমার মা বলেছিলেন,
- আঁকার সরঞ্জামগুলো কি করবি, সঙ্গে নিয়ে যাবি?
মায়ের কথা শুনে, মনে মনে ভাবল সীমা। নিয়ে গেলে মন্দ হয় না। ও বাড়িতে কোন কাজ নেই। বসে বসে প্র্যাকটিস করা যাবে।
প্রথম প্রথম রং-পেন্সিল, ইজেল এসব নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা হয়নি। ভরদুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ জুড়ে সকলে ভাতঘুমে মগ্ন। সীমা ছাদের ঘরে দরজাটা হাট করে খুলে ছবি আঁকছে। ছাদের কিনারে একটা আম গাছে কাকের বাসা। তার ভেতর তিনটা কোকিলের বাচ্চা ফুটেছে। বিকালে খোলা আকাশ দেখার জন্য একবার গিয়েছিল ছাদে। সে সময় বাচ্চাগুলোকে চোখে পড়ে সীমার। দুপুরে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাদের ঘরে বসে ছবিটা আঁকছে সীমা। এতই মগ্ন যে, ঘরের ভেতর কেউ ঢুকে বেরিয়ে গিয়েছে, বুঝতেই পারেনি। কানের খুব কাছে ফিস, ফিস করে কথা আর হাতের চুড়ির টুংটাং শব্দ, সীমার মগ্নতা দুর করলো। সকলে হামলে পড়েছে সীমার ছবিটার ওপর। সকলেই বলছে আমি নেবো। বড়বউ জিজ্ঞেস করলো, 
    -   বেশ ভালইতো আঁকো। কোথায় শিখেছো?
- আর্ট কলেজে।
মেঝবউ বেশ আগ্রহ নিয়ে রশিয়ে রশিয়ে জিজ্ঞেস করল
- শুনেছি, সেখানে নাকি ভাড়া করে মেয়েদের আনা হয়। তারপর তাদের জামাকাপড় খুলে ছেলে-মেয়েদের ছবি আঁকতে বলা হয়!
- এ্যাঁ। সকলে এক সঙ্গে চোখ কপালে তুলে সীমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ঘরে ঢুকে পলাশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল সীমার দিকে। প্রথমে এর অর্থ বুঝতে পারেনি সীমা। অল্প কিছুক্ষন বাদে বাড়ির কাজের মেয়ে রীনা এসে বলল,
- ভাবি, নানী আপনারে ডাকে।
তখনও সীমা জানে না, সামনে কি হতে যাচ্ছে। মাথার ঘোমটা বাড়িয়ে ধীর পায়ে হেটে যায় শ্বাশুড়ির ঘরে। পুরানো দিনের পালঙ্কের ওপর পা তুলে বসে আছেন তিনি। গলায় ভারি হার। হাতে মোটা বালা। চওড়া পাড়ের ক্রিম রঙের শাড়ি পরে পানের বাটা নিয়ে বসেছেন। সীমার উপস্থিতি টের পেয়ে পা সরিয়ে বসতে বললেন। পায়ের কাছে মাথা নীচু করে বসল সীমা। পানের খিলি মুখে পুুরে আঙুলের চুন দাঁতে কাটতে কাটতে সীমার মুখে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করে, 
- মেঝবউ বলছিল, তুমি নাকি কি সব আঁকাঝোকা করো?
- মা আপনি তো জানেন, আমি আর্ট কলেজে পড়ালেখা করেছি..
সীমার কথাটা শেষ না করতে দিয়েই শাশুড়ি বাঁধা দিয়ে বললেন,
- বিয়ের আগে মেয়েদের অনেক শখই থাকে। তাই বলে বিয়ের পরেও কি তা বহাল রাখতে হবে!
- মা, ওটা আমার শখ নয়। আমি ওই বিষয়ে পড়ালেখা করেছি।
- থাক বাছা। তোমাকে এত ব্যাখ্যা দিতে হবে না। আমাদের বাড়িতে ওসব চলবে না। অবসর সময়ে টিভি দেখবে। না হলে কোরান শরীফ পড়বে, নামাজ কালাম করবে।
সীমার দুচোখ বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় জল গড়িয়ে পড়েছিল। তার শাশুড়ি সেটা দেখেছিল কিনা সীমা তা বুঝতে পারেনি। এই আর্ট দেখে সীমার শ্বশুর একদিন তাকে গর্ব করে ছেলের বউ করে ঘরে তুলেছিলেন। আজ সেই আর্ট নিয়ে তাকে গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে। 
রাতে কিছুতেই ঘুম আসছে না সীমার। পাশে অসাড়ের মতো ঘুমে পড়ে আছে পলাশ। কোথায় বউয়ের কান্না দেখে চোখের জল মুছিয়ে দেবে। একটু আহ্লাদের কথা বলবে, আদর করবে। তা না, একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলো না, কেন কাঁদছে। না ঘুমিয়ে রাত শেষ হলো সীমার। সকালে উঠে নিত্য রুটিনানুযায়ী অফিসে চলে গেলো পলাশ। খাবার টেবিলে সীমাকে না দেখে আবার ডাক পড়েছে শাশুড়ির ঘরে। 
অনেক জবাবদিহির মুখোমুখি হয়ে শেষ সিদ্ধান্তে পৌছালো বিকালে মাজারে যাবে তাকে নিয়ে। সীমা বুঝতে পারলোু কোন অযুহাতে কাজ হবে না। এবার সত্যি সত্যি তাকে যেতে হবে। লক্ষী বউয়ের মতো ভাজ ভাঙা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে শাশুড়ির সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। 
মাজারের কথা বলে এ কোথায় নিয়ে এসছে তাকে? কিছুক্ষনের মধ্যে বুঝতে বাকি রইলো না এটা তার খালা শ্বাশুড়ির বাড়ি। চট্টগ্রামের বনেদি পরিবার। সকলে বেশ পর্দানশীল। এক বাড়ি মানুষের মাঝে শ্বাশুড়ি বেশ টিপ্পনি দিয়ে সীমার বর্ননা করছে। সীমা নিজেকে সামলাতে পারলো না। এ কেমন অপমান। যে গুনের জন্য তাকে জোর করে মা-বাবার কাছ থেকে চেয়ে নিলেন। সেই গুনের জন্য আজ তাকে এক বাড়ি মানুষের সামনে অপমান করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয় । সকলের সামনে তাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, জীবনে আর কোন দিন হাতে রং তুলি নেবে না। 
বাবা অফিস থেকে ফিরে ড্রইং রুমে টিভি দেখছে। মা রান্না ঘরে রাতের খাবার রেডি করছে। দরজায় কলিং বেলের শব্দ শুনে বিরক্ত মুখে বাবা কাজের মেয়ে পুটিকে ডেকে দরজা খুলতে বললেন। পুটি এক রকম চিৎকার দিয়ে উঠল,
- মামা দেখেন কে এসেছে ?
সীমার বাবা টিভি স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে যা দেখলো তাতে চোখ চড়কগাছ। এক কাপড়ে চোখে মুখে আতঙ্ক, চোখ দুটো ছলছল করছে। বাবার চোখে একবার চোখ রেখে দৌড়ে গেল নিজের রুমে। বাবা মহিউদ্দিন সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না। মেয়ে একা এভাবে রাত ১০টার সময় ঢাকা চলে এসেছে। ব্যাপারটা নিয়ে এক মিনিটের মধ্যে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এরই মধ্যে মায়ের কানে পৌছালো সীমার বাড়ি আসার কথা। মা হাতের কাজ রেখে দ্রুত পায়ে হেটে গেলেন সীমার রুমের দিকে। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে। মায়ের বুকের ভেতর কেঁপে উঠছে। মেয়েকে সে এভাবে এর আগে কখনো দেখেনি। 
ছোটবেলা থেকে সীমা ছিল ডানপিটে। মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে মা-বাবা কখনো তাকে বুঝতে দেয়নি। সীমা নিজেকে মানুষ হিসাবে জেনেছে। শ্বশুর বাড়িতে নিজেকে গিনিপিগ ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল। নিজের অস্তিত্ব বিকিয়ে দিয়ে তাদের পছন্দমতো জীবন গড়তে পারেনি বলে মোরগডাকা ভোরে কাউকে না বলে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিল। সেই আসাই তার শেষ আসা হয়েছিল।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours