সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

শুনেছি আমার মত হুবহু সাতজন আছে এই ধরাধামে। যদিও এখনও চাক্ষুস করতে পারিনি, তবে সিনেমা টেলিভিশন এ দেখেছি বহুবার। আচ্ছা এটা যদি হয় মন্দ কি? যদি আমাদের পৃথিবীর মতো হুবহু আরেকটা পৃথিবীর খোঁজ পাওয়া যায়।  দু-হাজার কুড়ি যেমন পৃথিবীর জন্য বয়ে এনেছে নানা দুঃসংবাদ, তেমনই খোঁজ দিয়েছে অন্য আরেক পৃথিবীর। এ যেন ঠিক প্রতিচ্ছবি বা আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেমন ঠিক তেমন। পৃথিবীর বাইরে আর এক পৃথিবী। সেও আমাদের পৃথিবীর মতো বন বন করে ঘুরে চলেছে অন্য আরেক সূর্যের চারপাশে। এই নতুন পৃথিবীর খোঁজ পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আমরা যে একা নই সে প্রমাণ আগেও মিলেছে। তবে এ যেনো এক অন্য অনুভুতির। ভাবতেও ভালো লাগছে।

পৃথিবীর মতো দেখতে অন্য গ্রহ আছে, আর সূর্যের মতো উজ্জ্বল নক্ষত্র আছে। তবে এই গ্রহ তারা জুটি রয়েছে আরো কাছাকাছি আরো পাশাপাশি। পৃথিবী থেকে মাত্র ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।আর সেখানেই সূর্য্য এর মতো তারাটির নাম কেপলার ১৬০। তাকেই প্রদক্ষিণ করে চলেছে পৃথিবীর মধ্যে দেখতে অন্য একটি গ্রহ যার নাম কেও আই-৪৫৬.০৪।

পৃথিবীর খুব কাছাকাছি এমন আরেকটি পৃথিবীতে রয়েছে সে কথা আগেও জানিয়েছিলেন নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এর মাধ্যম দিয়ে। তবে এবার  হাতেনাতে প্রমাণ দিয়েছে গঠনের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সোলার সিস্টেম রিসার্চ। নাসা বলেছিল যে গোটা তারামন্ডলে সূর্যের মতো প্রতি পাঁচটি তারার অন্তত একটি চারপাশে ঘুরছে একটা করে পৃথিবীর মতো গ্রহ। খুব ভালো লাগছে তাই তো। আমি তো খুব বেশী উত্তেজিত ও রোমাঞ্চিত হচ্ছি। 

শুনলে অবাক হবেন এদের  আকার থেকে শুরু করে আবহাওয়া সবকিছুর সাথে মিল রয়েছে পৃথিবীর। আবার বেশকিছু গ্রহে নাকি বেশি শীত পড়ে না আবার তাপমাত্রার পারদ চড়ে না। মোটামুটি প্রা’ণ তৈরি হবার মতো পরিবেশ আছে সেই গ্রহ গুলিতে। এই পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অভিযান দীর্ঘ বছরের। খুব তাড়াতাড়ি রহস্যের কিনারা হবে। 
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের স্পেস টেলিস্কোপ দেখিয়েছে নতুন খুঁজে পাওয়াই সৌরমণ্ডলের যে সূর্য্য অর্থাৎ কেপলার ১৬০ নক্ষত্র সূর্যের মতো ইনফ্রারেড রশ্মি বিকিরণ করে ঠিকই তবে তার আগুনে অত রূপ নেই। এই তারাটির পৃষ্ঠদেশে তাপমাত্রা ৫২০০ডিগ্রী সেলসিয়াস যা সূর্যের থেকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এতে সূর্যের থেকে অনেকটাই কম। এই তারা কিছুটা নিভু নিভু আঁচের। মহাকাশ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ডাস্টার বা লাল বামন তারা।

আরও হলো যে, মহাকাশে এমন অনেক তারা আছে যেগুলি তুলনায় কম উজ্জ্বল যাদের লাল বামন বলা হয়।মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা লাল বামুনের ১৫% চারপাশে পৃথিবীর মতো গ্রহ ঘুরছে। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে ৫০% লাল বামনের পাশে রয়েছে এমন গ্রহ। উফ কি শিহরণ জাগাচ্ছে আরও আরও জানতে অসীমে হারিয়ে যেতে। 

সৌরজগতের বাইরে থাকা পৃথিবীর মত দেখতে এই গ্রহ কেপলার ১৬০ নক্ষত্রের চারপাশে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা ওই নক্ষত্র গ্রহের মাঝে দূরত্ব বেশি নয়। সূর্য থেকে বুধের দূরত্ব যতটা সম্ভবত তার থেকে কাছেই রয়েছে এই গ্রহ। লাল বামন তারার উজ্জলতা যেহেতু বেশি নয় তাই সে গ্রহে প্রা’ণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা সেই নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। নিশ্চিত বলা শক্ত। 

অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের ধারণা যে এই এক্সোপলানেট এর গঠন পৃথিবীর মতো হলেও তার ভর বা পরিবেশ নিয়ে কিছুই এখনো জানা যায়নি। এই গ্রহের প্রদেশ কেমন পৃথিবীর মতো পাথর মাটির নাকি বরফে ঢাকা তা জানাও এত সহজ কাজ নয়।সৌরজগতের বাইরে কোন গ্রহ আছে কিনা তা নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।

এ বছরেই নাসার ট্রানসিতিং এক্সোপলানেট স্যাটেলাইট ধরা পৃথিবীর জ’মজ এর নাম দেওয়া হয়েছে টিওআই ৭০০ দি। এর আগে কেপলার ৭৮ বি নামক এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যে গ্রহের ঘনত্ব পৃথিবীর মতো পৃষ্ঠদেশ পাথরে কিন্তু তাপমাত্রা এতই বেশি যে যেখানে প্রা’ণ থাকার সম্ভাবনা বেশ কম। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভিনগ্রহের হয়েছে। আমাদের সৌরমণ্ডলের প্রতিবেশী আলফা সেন্টোরি সৌরজগতে প্রক্সিমা সেন্টরি নামে একটি গ্রহের সন্ধান দিয়েছিল।  তার দূরত্ব আমাদের সৌরমন্ডল থেকে ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে। তবে সেখানেও প্রাণ আছে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে নাশা। এখনো পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি গ্রহ বামন গ্রহ উপগ্রহের সন্ধান মিলেছে যাদের সাথে পৃথিবীর নানা বিষয়ে মিল পাওয়া যায়। কিন্তু পৃথিবীর মতো সবকিছু আছে এমন গ্রহ সন্ধান করে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

যাই হোক মিল যখন আছে, হয়তো প্রাণের সঞ্চার ও আছে, হয়তো একদিন কোন গ্রহের জীব এভাবেই হয়তো দেখার চেষ্টা করছে আমাদের। হয়তো কাল্পনিক ঘটনার মতো সত্যি হবে আমাদের স্বপ্ন বা ধারণা। এর পরের উন্মোচিত দিক গুলো দেখার জন্য আমরা উদগ্রীব, তবে সেটা ঠিক করবে সময় সেদিন আমরা কজন এই পৃথিবীতে জীবিত থাকবো তা জানিনা।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours