ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

নলিন  বিহারীর  সহপাঠীরাও  কৃতি ছাত্র  ছিলেন। ক্ষেত্রনাথ  ঘোষ ম্যাট্রিক  পরীক্ষায়  তৃতীয়  স্থান  অধিকার  করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি  ইংরেজ  আমলে  রেঙ্গুনের  ডেপুটি  মেয়র হয়েছিলেন। আর  এক  সহপাঠী  প্রখ্যাত  কবি, সাহিত্যিক চিকিৎসক। ডাঃ  কালীকিংকর সেনগুপ্ত।তিনি  সুকিয়া স্ট্রিটে  নলিন বিহারীর সাথেই  থাকতেন। উখরার  তৎকালের  প্রখ্যাত  আইনজীবী অ্যাডভোকেট   তারাশঙ্কর  ঘটক' ও তাঁর  সহপাঠী। নলিন বিহারীর  প্রানের   বন্ধু  ক্যাপ্টেন  ডাঃ বিরিঞ্চি  বিলাস  রায়, যিনি  দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন  কায়রো  ও ইউরোপের  বিভিন্ন  স্থানে  আহত  অসুস্থ  সৈনিক  ও সাধারন মানুষের।   চিকিৎসা করে  প্রভূত  সুনাম  অর্জন  করেন।  ডাক্তার  রায়  সারা জীবন  নলিন বিহারীর  সঙ্গী  ছিলেন।             নলিন বিহারীর  ভাইয়ের  সহপাঠী  ভারতীয়  জনসঙ্ঘের  প্রতিষ্ঠাতা  ও বাংলার বাঘ স্যার  আশুতোষ  মুখোপাধ্যায়  এর পুত্র  ডঃ  শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়  এর  সাথে  সখ্যতা  ছিল। 
             ইতিমধ্যে নলিন বিহারীর  পিতার  মৃত্যুর  সুযোগ  নিয়ে  উখরা এস্টেটের  ম্যানেজার।     মৃত্যুঞ্জয়  চট্টোপাধ্যায় ( ইনি  প্রখ্যাত  সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় এর মামা)জমিদারী  এস্টেটের  সর্বনাশ  করে টাকা পয়সা  আত্মসাৎ  করতে  থাকেন। মৃত্যুঞ্জয় এর ভাই  এর  মাধ্যমে নলিন বিহারীর  মা  গঙ্গাদেবী  সব কিছু  জানতে  পারলে  বড়  ছেলে  শৈলবিহারীকে  জানালে  তিনি  দুই ভাই  পুলিন বিহারী ও  বিমান বিহারীকে  উচ্চ  শিক্ষার জন্য লন্ডন  পাঠান  জোর  করেই। 
                 অত্যন্ত  মেধাবী  ছাত্র  হওয়া সত্ত্বে সাংসারিক ঝামেলা  ও জমিদারী  সংক্রান্ত  মামলা  মকদ্দমা  এবং  শারিরীক অসুস্থতার   কারণে নলিনীককে। দেশে  ফিরতে  হয়  পড়াশোনা  অসমাপ্ত  রেখেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও  মায়ের আদেশে  বিবাহে  সন্মত হ'ন। ভবানী পুরের  প্রখ্যাত  জমিদার  বরদা প্রসাদ  রায়  চৌধুরীর কনিষ্ঠা  কন্যা  সর্বগুনসম্পন্না,  রূপে  লক্ষী  গুনে  সরস্বতী প্রতিভা দেবীর  সাথে  তাঁর  বিবাহ  হয়।  প্রতিভা দেবী শুধু  ইংরাজী  শিক্ষায়  শিক্ষিতা  ছিলেন  না,  অসাধারণ  সেতার বাদিকা ও সুকন্ঠি  গায়িকা  ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  স্বয়ং  তার  সেতার  বাজানো  শুনে  মুগ্ধ হয়ে  নিজ  হাতে  তাকে  মেডেল  পরিয়ে  দেন। মহত্মা  গান্ধী, মতিলাল  নেহেরু,  মহিশূরের  রাজা  তার  সেতার  বাদন  শুনে  তারিফ  করেন।     প্রতিদেবীকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস  ও তাঁর   স্ত্রী     বাসন্তী দেবী  খুব  স্নেহ  করতেন। 
            বিয়ের  কয়েক মাস পর  স্ত্রী সহ  ইংলন্ড যাবার প্রস্তুতি  করার  সময়  জানতে  পারেন  স্ত্রী  সন্তান  সম্ভবা। অগত্যা  একাই  যান। কিন্তু  বিধিবাম  বিলিয়ার্ড  খেলতে গিয়ে  গুরুতর জখম  হন। তাই  বাধ্য হয়ে    বিজ্ঞানী হওয়ার  অধরা  রেখেই  পুনরায়  দেশে  ফিরতে  হয়।  এক  সম্ভাবনাময়  প্রতিভার  অপমৃত্যু  ঘটল। 
           দেশে  ফিরে  হতাশ  হয়ে পড়েন  নি।  তিনি  বহু  গুরুত্ব পূর্ন  দ্বায়িত্ব  পালন  করেন।  উল্লেখ যোগ্য হ'ল:-    ইন্ডিয়ান মাইনিং ফেডারেশন এর    রানিগঞ্জ  শাখার  স্থায়ী  চেয়ারম্যান। মাইনস  বোর্ড  অফ  হেলথের  ভাইস চেয়ারম্যান। বার্নপুর স্টীল প্লান্টের  ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর চেষ্টায়  ডাঃ জি, সি, সেন ও ললিত মোহন  সেনের সহযঝগীতায় বার্নপুর এ  কাল্লা  হাসপাতালটি  গড়ে  ওঠে।  কাল্লাতে  একটি  লেপ্রসি  হাসপাতাল ও বৃহৎ কুষ্ঠাশ্রম    গড়ে তোলেন। ডাঃ ললিত সেনের সহযোগীতায় উখরা এস্টেটের  আর্থিক সহযোগিতায় দাতব্য  কুষ্ঠ  হাসপাতাল  প্রতিষ্ঠা  করেন।  ছোড়াতে  দাতব্য হাসপাতালটি   তাঁরই অবদান।  গরীব দুঃখী মানুষের জন্য  তিনি  আজীবন  কাজ  করেছেন। দেশের  প্রতি  বিশেষ  করে  কোলিয়ারী  এলাকার  প্রতিটি  ধুলিকনার  প্রতিও  তাঁর  অপরিসীম ভালবাসা ছিল।  তিনি  বলতেন, " এই, মাটি  ,মানুষ আর  মাতৃভুমির  কাছে  ঋণ ছিল আমার ..."তাই  নিজের  উজ্জ্বল  ভবিষ্যত  নষ্ট করে  বৈজ্ঞানিক  হওয়ার    স্বপ্ন ভেঙে  চুরমার করেও নিঃশব্দে  মানুষের জন্য  কাজ  করে  গেছেন ছিল  না  কোন  অনুতাপ  বা  অভিমান। (চলবে )

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours