শেখর রায়, সিনিয়র জার্নালিষ্ট, কলকাতা:

কারবালা হয়ে যায় সমস্ত বাংলাদেশ, হায়
কারবালা হয়ে যায় – হুমায়ুন কবির

কবির এই কবিতা আজো প্রাসঙ্গিক যখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় শুধু বিধর্মী হবার কারনে অনবরত নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন যে বাঙালি জাতির নবোদয় ঘটিয়েছিল, যে জাতি আজ নিছক এক মুসলিম বাংলাদেশী বলে অধুনা বিশ্বে পরিচিত। কারন সে দেশটি আজ এক সাংবিধানিক ইসলামী রাষ্ট্র। অমুসলিম সম্প্রদায় অনুগ্রহের পাত্র। কিন্তু ১৯৭১এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারতীয় উপমহাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। এবং যার অপমৃত্যু হয়েছিলো ঢাকাতে ১৯৭৫এ বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ গণহত্যার মধ্য দিয়ে।  

একদা বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ২৯% ছিল। ১৯৪৬ থেকে এপর্যন্ত ৪ কোটি হিন্দু বাংলাদেশ থেকে ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে আশ্রিত। কারন নির্মম সাম্প্রদায়িক নির্যাতন। একাত্তরের গণহত্যার ইতিহাস ছিল ভয়াবহ। প্রায় ২৩ লক্ষ হিন্দু গণহত্যা ও ধর্ষণের মহোৎসব হয়েছিলো তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে। আজো সে দেশে ১৬ কোটি জনসংখ্যার ৮% হিন্দু জনজাতি জীবিত আছে, তবে রোজ সংবাদ আসে হিন্দু নির্যাতনের। আর কত কাল এই যৎসামান্য সংখ্যালঘু সে দেশে টিকে থাকতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ধর্মীয় কারনে ভারত বিভাজনের সবচেয়ে মুল্য দিতে হয়েছে হিন্দু বাঙ্গালিকে যা ইতিহাস সত্য। পরিসংখ্যান বলছে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত পাঞ্জাবি শিখ ও হিন্দুরা ভারত সরকারের কাছ থেকে যেটুকু সাহায্য সহায়তা পেয়েছে তার কানাকড়িও বাংলার উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙ্গালিরা পায়নি। আজো তাদের জীবন ও জীবিকা সমস্যাসঙ্কুল। বহু লক্ষ ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকেও আজো বঞ্চিত। একমাত্র নরেন্দ্র মোদীর সরকার বহু বাঁধা বিপত্তির মধ্যেও তাদের জন্য নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে সম্প্রতি তাদের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির অধিকারের পথ প্রশস্ত করেছে মাত্র।  তার বেশী কিছু নয়। বাংলাদেশে জেলাগুলিতে বসবাসকারী হিন্দুরা আজো সুখে নেই।  টার্গেট করে হিন্দুদের ভুসম্পত্তি দখল, হিন্দু নারী ধর্ষণ, ধর্ম্যান্তকরন, দেবালয় ভাঙচুর করা ও পুরহিত হত্যা এক নিত্য ব্যাপার। 
শেখ হাসিনা সরকার কোনভাবে সাম্প্রদায়িকতার নীতিতে বিশ্বাস করে না একথাটি আর জোর দিয়ে এখন বলা যাচ্ছে না। যদিও তাদের প্রতি আজো সংখ্যালঘু হিন্দুরা অনেক আশা ভরসা রাখে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাদেরকেও ঐ উগ্র ইসলামী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মেপে চলতে হয়। আজো সর্বত্র কট্টর ইসলামী পাকিস্তানের সমর্থক বিরাজমান যারা আজো মেনে নিতে পারেনি ভারতের হাতে হানাদার পাকিস্তানী শক্তির পরাজয়। যারা হাসিনা সরকার ও ভারতের প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ত্ব ও সহাবস্থানের সম্পূর্ণ বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি আজো মোট মুসলিম জনসংখ্যার এক ক্ষুদ্র অংশ, তথাপি ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থনে ও সহযোগিতায় হাসিনা সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তবু তাদের সাম্প্রতিক চিনপ্রীতি ভাবার বিষয় হয়েছে। এতাবস্থার মধ্যেও অনেকে মনে করেন যে হাসিনা সরকার আছে তাই এখন ভারতে উদবাস্তুর ঢল আসছে না। তাদের অস্তিত্ত্ব বিপন্ন হলে, বিপন্ন হবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর ভবিষ্যৎ।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours