দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

নর্থ আমেরিকার প্রধান ব্যবসা হচ্ছে গাড়ি আর বাড়ি।  গাড়ির কারখানা, আর বাড়ির তৈরির নানা কাজ। আমেরিকার বাড়িগুলো বেশির ভাগই কাঠের তৈরি। কংক্রিট বা ইটের বাড়ি খুব কম।এপার্টমেন্ট বিল্ডিং কংক্রিটের। আবার কানাডার বাড়িগুলো ইটের তৈরি। আসলে প্রচুর গাছ এদেশে। ভ্যাঙ্কুভার গাছের বা কাঠের জন্য বিখ্যাত। আমাদের শিখ ভাইয়েরা কানাডাতে এসেছিলো একশো বছরেরও আগে। আজ ওরা বেশিরভাগ এই কাঠের ব্যবসা নিয়ে নিয়েছে। দেখা যায় এইসব শিখেরা পাঁচ প্রজন্ম ধরে এদেশে। সাদা শিখ। মাথায় পাগড়ি, গুরুদুয়ারাতে যায়, নিজেদের ভাষা ভোলেনি।খাবার ভোলেনি। সারা কানাডা আমেরিকাতে পাঞ্জাবি রেস্তোরাতে ভর্তি। ট্যাক্সির ব্যবসা ওদের হাতে। ঠান্ডার দেশ বলে সারা বাড়িটাকে তুলোর মতো ইন্সুলিন দিয়ে ঘেরা হয় দেওয়াল গুলো যাতে ঠান্ডা বাতাস না ঢুকতে পারে। তারপর থাকে প্রতিটি বাড়িতে একটা করে গ্যাস ফার্নেস। সেই ফার্নেস সারা বাড়িটিকে গরম করে রাখে শীতকালে। কাঠের ফ্রেম হওয়ার পর একটা করে ইটের গাঁথনি করা হয়। বাইরে। আবার কেউ করেনা। আর গাড়ি ছাড়া এদেশ অচল।অফিস  বাজার ঘাট সব গাড়িতে। সরকারি বাস আছে, ট্রেন আছে।মান্থলি টিকিট কেনা যায়। আবার একই টিকিটে আপনি বাস আর ট্রেনে করে একদিকে বহুদূর যেতে পারেন। মনে করুন রানাঘাট থেকে যাদবপুর আসবেন? রানাঘাট থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ, সেখান থেকে বাস বা ট্রাম নিয়ে যাদবপুরে। সেই একই টিকিটে। ফেরার সময় নতুন  টিকিট। সারা দেশে মাকড়সার জালের মতো হাইওয়ে করা আছে। আমরা সব সময় গাড়ি নিয়ে পাঁচশো / হাজার মাইল যাই। অনেক সস্তা পড়ে।
টরোন্টো থেকে নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটন বা বোস্টন পাঁচশো মাইলের মধ্য। সকালে বেড়িয়ে পড়ি। একশো দশ কুড়িতে গাড়ি চলে। মাঝখানে ম্যাডোনাল্ড বা কোথাও থেকে চা কফি খেয়ে আবার চলা। তার জন্য আপনাকে রাস্তার বাইরে বেরুতে হবে না। ঠিক যেন শাতিনিকেতন যাবার পথে দুপাশে ল্যাংচার দোকান। তবে মূর্খ সরকার এতো সুন্দর রাস্তার বানিয়েছে বটে কিন্তু বরাহরা কোনো পরিকল্পনা করে রাস্তা বানায়নি। দেখবেন গরু ছাগল রাস্তায় চড়ে বেড়াচ্ছে, বা অন্যদিকে থেকে ট্রাক আসছে মুখোমুখি। কেন? না গ্যাসের দোকান এপারে। তলা দিয়ে আসার জায়গা রাখেনি তাই পেট্রল পাম্পে যেতে গেলে মুখোমুখি আসতে হবে। আমরা ভাবতে পারিনা। এই পাঁচশো মাইল রাস্তা একটানে চলে যাওয়া যায়। টরন্টো থেকে আমেরিকাতে কোনো শহরে যেতে গেলে আমাদের তিনটে সীমানা আছে। আমরা সাধারণত নায়েগ্রা ফলস দিয়ে ঢুকি। সীমানায় ছটা সাতটা গুমটি। জানালা দিয়ে পাসপোর্ট দেখাতে হয়। কয়েকটা প্রশ্ন ব্যাস ঢুকে যাও। শুধু কানাডিয়ানদের জন্য। আপনি ভারতীয় পাসপোর্টএ যদি ঢুকতে চান তবে আপনাকে দেশ থেকে আমেরিকার ভিসা আনতে হবে। মুশকিল হচ্ছে আমাদের মুসলিম ভাইদের জন্য। মুসলমান নাম হলেই বহু ঝামেলা আমেরিকাতে ঢোকার। আর কানাডিয়ানদের দেখে আমেরিকানরা কাঁদে। আমাদের সব চিকিৎসা বিনা পয়সায়। সর্দ্দি হলেও ফ্রি, ক্যান্সার হলেও ফ্রি। শয়তান আমেরিকা যুদ্ধ করবে কিন্তু নাগরিকদের চিকিৎসা করবে না বিনা টাকায়। যাদের ইনসুয়ারেন্স আছে বা কোম্পানি বীমা দেয় তাদের কথা অন্য। এখন লক ডাউন; সব সীমানা বন্ধ। একটা কথা বলি। আপনারা এখন যুদ্ধ সীমান্তে আছেন। যে কোনো সময়ে গুলি লাগবে। কাজেই যতটা পারেন ভিড় থেকে দূরে থাকুন আর মাস্ক পড়ুন। বাস ট্রেনে উঠলেই প্রচন্ড সংক্রামণের সম্ভবনা। কি আর করবেন? কাজে তো যেতেই হবে? (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যেঃ প্রতিবেদক। ছবিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাহিত্যকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রতিবেদক)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours