রমা চক্রবর্তী, শিক্ষিকা, আবৃত্তিকার ও ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

চারিদিকে এখন নেপোটিজম (Nepotism) নিয়ে খুব হৈচৈ চলছে| এই নেপোটিজমের বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় স্বজন-পোষণ|
এই স্বজন-পোষণের চাপে পরে সুশান্ত সিংহ রাজপুত বিভিন্ন রকম মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেন|
এই নেপোটিজম শুধু Bollywood বা Tollywood এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়| এ তো সব ক্ষেত্রেই রয়েছে| কেউ প্রকাশ করেন কেউ করেন না|
যে কোনো Proffession এর ক্ষেত্রেই স্বজন-পোষণের প্রভাব ঘটে| তা সে Corporate জগতে চাকরি হোক বা সাংস্কৃতিক জগৎই হোক না কেন|
খুব ছোটো উদাহরন থেকেই শুরু করি, সবাই বলে School এ Service পাওয়া নাকি খুব ভাগ্যের ব্যাপার| এই Service টা Nobel Service প্রত্যেকের  কাছে| কিন্তু এই Service করতে গেলে কেউ যদি নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন সেখানে Head Of The Institution বা Head Teacher এর স্বজন-পোষণের ব্যাপার চলে আসে| ধরুন School এ কোনো একটা অনুষ্ঠান হবে, সেই অনুষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব এমন একটা মানুষ (Teacher) কে দেওয়া হল যিনি এই যোগ্যতা Deserve করেন না অথচ যার এই দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা আছে তাকে দেওয়া হল না| এটা কি Head Teacher এর স্বজন-পোষণ নয়? শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নয় School এ Class Distributin এর ক্ষেত্রেও Head Teacher এর স্বজন-পোষণের ব্যাপার থাকে|
এ তো গেল School এর ক্ষেত্রে| এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও এই স্বজন-পোষণের মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে| এরপর আসি Corporate জগতের কথায়| যারা এইসব Corporate দুনিয়ায় কাজ করেন তারা জানেন প্রত্যেকটি Sector এ এই স্বজন-পোষণের কতটা প্রভাব থাকে। ফলে অনেকেই Depression থাকেন এই কারণে| তবু তাঁদের কিছু করার থাকে না বলে দাঁতে দাঁত চিপে Service টা বাঁচিয়ে রাখতে হয় কারন প্রত্যেকটি Sector এ একই দৃশ্য |
এরপর আসি সাংস্কৃতিক জগতের কথায়| এখানে জগৎটা শুরু হয় আমার আপনার বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ থেকে| পাড়ায় কোনো অনুষ্ঠান হলে মুখ দেখে Chance দেওয়ার ব্যাপার থাকে| অঞ্চল ভিত্তিক অনেক অনুষ্ঠানেই যোগ্য ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্রাত্য হয়ে যায় কিন্তু অনেকেই অনেক কিছু না জেনেই সবার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে-- এগুলোকে কি স্বজন-পোষণ বলবেন না আপনারা?
আর রাজনীতির কথা তো ছেড়েই দিলাম| এক্ষেত্রে তো স্বজন-পোষণের হিসেব করা বলাই বাহুল্য| এই জগতে দাদা, বাবা, কাকা, জ্যাঠা কেউ যদি কোনোরকমে একটা গদি পেয়ে যায় তাহলে তো আর কিছু বলার অবকাশ থাকেই না, স্বজন-পোষণের প্রভাবে মোটামুটি ৭ পুরুষ বসে খেতে পারবে এই রকম উদাহরণ আমাদের আশেপাশে বহু দেখা যায়|
এছাড়া স্বজন-পোষণের প্রভাবে সুযোগ পাওয়ার সুবিধার কথা তো আমাদের Society তে প্রচুর আছে| উকিলের ছেলে উকিল, ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হলে তাদের ক্ষেত্রে বাবার পরিচিতির একটা বিরাট ভূমিকা আছে| শিল্পীর ছেলেকে শিল্পী হতে গেলে খুব বেশী পরিশ্রম করতে হয় না পরিচিতি পাওয়ার জন্য| কিন্তু এগুলো যখন আমার আপনার জীবনে ঘটবে তখন কঠোর পরিশ্রম করতে হয় সারাজীবন ধরে| এগুলোকে কি স্বজন-পোষণ বলা হবে না? নাকি এগুলোর জন্য কেউ মানসিক চাপে থাকেন না বা নিজেকে শেষ করে দেন - কোনটা? কিন্তু কয়জনের খবর আমরা রাখি বলুন তো!
এই নেপোটিজম শুধুমাত্র বর্তমানেই নয় এই System সেই পৌরাণিক কাল থেকেই চলে আসছে| আমাদের রামায়ন, মহাভারতেও স্বজন-পোষণের স্পষ্ট চিত্র পাই|
রামায়নে বালীকে হত্যার ঘটনা হোক বা ইন্দ্রজিৎকে নিরস্ত্র অবস্থায় লক্ষণ হত্যা করেছিলেন সব ক্ষেত্রেই যুগাবতার রাম পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন| দেখবেন আবার রাম নেটিজেনরা রে রে করে উঠবেন না। নিজ গুনে এই অধমকে ক্ষমা করে দেবেন। 
আবার মহাভারতেও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবদের পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন কারন সেখানে ধর্ম ও অধর্মের লড়াই হয়েছিল| কিন্তু ধর্ম এবং অধর্মের লড়াই এর মধ্যেও শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে  Convince করেছিলেন নিরস্ত্র অবস্থায় কর্ণকে হত্যা করার জন্য| আমার এই কথায় আমি কিন্তু তাই বলে কারও ভাবাবেগকে আঘাত করতে চাই না। আমি আমার বিশ্বাসটুকু ব্যক্ত করলাম মাত্র। 
 সে যাই হোক, প্রশ্ন হলো এগুলোকে কি স্বজন-পোষণ বলা হবে না? পুরান কাল থেকে বর্তমান যুগ। বারে বারে অবতার হয়ে অবতীর্ণ হও হে নেপোটিজম মহিমা! 
অর্থাৎ আমাদের System-এ এই স্বজন-পোষণ রক্তে ঢুকে গেছে| শিরায় শিরায় পৌঁছে গেছে স্বজন-পোষণের প্রভাব| মনুষ্য বিশ্বাস ও যুগজয়ী সভ্যতার রন্ধে রন্ধে অনুপ্রবেশ করেছে একটি অবাধ শব্দ-নেপোটিজম।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours