ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
মানিক পালের গুরুদেব ছিলেন মানকরের সর গ্রামের গোস্বামীরা! সেখান থেকে গুরু পরিবারকে আমন্ত্রন করে আনলেন ব্রাক্ষ্মনআড়ায়! বসতি স্হাপন করার জন্য প্রচুর ভূ- সম্পত্তি দান করলেন! পরে আগুরী আত্মীয় স্বজনদের ভূ- সম্পত্তি দিয়ে বসতি গড়ে দিলেন!
গ্রামে পাল পরিবারের কুল দেবতা ' দামোদর চন্দ্র! আবার এই পরিবারের দেবী ' মহামায়া ' শাক্ত মতে তিনি ঘটে পূজিতা হলেও অষ্টমী ও নবমীতে ছাগ বলি হয়! গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ভুবনেশ্বর শিবের সেবাইত পাল পরিবার ও তাদের দৌহিত্ররা প্রতিটি বংশের নিজস্ব পূজা আছে! যেমন ভট্টাচার্য্য বংশের বিরল সরস্বতী পূজা হয় তিনদিনের! দেবীর পাকা মন্দির আছে এবং তিন পুতুলের প্রতিমা!এঁদের কূলদেবী ' সিংহবাহিনী ' দুর্গাপুজার মতো আনন্দে মেতে ওঠে সারা গ্রাম! মুখার্জীদের তান্ত্রিক মতে নিশিভোরের কালীপুজা ! উগ্রক্ষত্রিয় রায় পরিবারের ধর্মরাজ পুজা ও গাজন!
ব্যানার্জী বাড়ীর দুর্গাপুজা! পালেদের গুরু বংশ গোস্বামীদের ' গোপীনাথ ' এর নিত্য সেবা ছাড়াও 'পঞ্চম দোল ' জন্মাষ্টমী রাধাষ্টমী উৎসব পালিত হয়! সুদৃশ্য মন্দিরে কষ্টিক পাথরের কৃষ্ন ও অষ্টধাতুর রাধা পুজিত হ'ন!
গ্রামের বাগ্দি পাড়াগুলিতে শ্রবন সংক্রান্তিতে এবং বাউরী পাড়াগুলিতে ভাদ্র সংক্রান্তিতে স্বর্পদেবী মা মনসার পুজা হয় সাড়ম্বরে!
গ্রামের শিব লিঙ্গ ও মন্দিরের আধিক্য প্রমান করে শাক্ত বা বৈষ্নব যে মতেই গ্রামের পরিবারগুলি পুজা করে থাকুক না কেন শৈব ধর্মের মতালমবনী প্রয় সকলেই!
গ্রামটি অতি প্রাচীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না! গ্রামে গোস্বামী পরিবারের দুটি বৃহৎ পুষ্করিনী আছে ' পদুমা ও ঠাকুরা ' পাড় বাঁধানো এই প্রতিমা দুটি সম্ভবতঃ অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সর্ববৃহৎ! এই পুকুর দুটিতে অনুসন্ধান করলে বহু মূল্যবান পুরাতাত্বিক নিদর্শন পাওয়া যাবে! আজ থেকে প্রায় দেড়'শ বছর আগে গ্রামের জনৈক রাম পাল, ঠাকুরা পুকুর থেকে দু'ফুট বাই দেড় ফুট আকৃতির ল্যাটেরাইট পাথরের নিত্যরত নটরাজ মূর্তি পান এবং সেই মূর্তিটি ভুবনেশ্বর ও আনন্দময়ী মন্দিরের নিকট শিবগড়ে নামে একটি পুকুর পাড়ে গাছের নীচে প্রতিষ্ঠা করেন!
পুরাতাত্বিক গবেষকদের মতে মূর্তি আনুমানিক দুই থেকে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন! নটরাজ এখানে ষন্ডের উপর নৃত্যরত ! আটটি হাত তিনটি ভাঙা, ওপরের দুটি যোগমূদ্রায় জোড় হাত করা একটি হাতে ডমরু, একটি হাতে কমন্ডলু অন্য হাতে রুদ্রাক্ষের মালা! দুই পাশে দুটি গন্ধর্বমূর্তি! নীচেও ষন্ডের মুখের সামনে একটি মূর্তি!
পাশে আরও কয়েকটি ভগ্নমূর্তি খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ নেই!
একটা সময় এই গ্রাম ছিল গ্রাম বাংলার অনান্য গ্রামের " ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়....." সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বদলাচ্ছে গ্রাামের চরিত্র! আজ আর ভাদ্রে সবুজ ধানের ক্ষেতে বাতাসের ঢেউ নেই, আশ্বিনের সংক্রান্তিতে ধান ডাকা নেই, কার্তিকে ' মুট ' আনা নেই! অগ্রাহায়নে মাঠে মাঠে সোনালি ধান নেই, নবান্ন উৎসব নেই! চাষের জমিতে গড়ে উঠেছে কারখানা আর আকাশচুম্বী বহুতল! হারিয়ে গেছে সেই চেনা গ্রামটা....আজ খুব খুব অচেনা মনে হয়। (চলবে)
মানিক পালের গুরুদেব ছিলেন মানকরের সর গ্রামের গোস্বামীরা! সেখান থেকে গুরু পরিবারকে আমন্ত্রন করে আনলেন ব্রাক্ষ্মনআড়ায়! বসতি স্হাপন করার জন্য প্রচুর ভূ- সম্পত্তি দান করলেন! পরে আগুরী আত্মীয় স্বজনদের ভূ- সম্পত্তি দিয়ে বসতি গড়ে দিলেন!
গ্রামে পাল পরিবারের কুল দেবতা ' দামোদর চন্দ্র! আবার এই পরিবারের দেবী ' মহামায়া ' শাক্ত মতে তিনি ঘটে পূজিতা হলেও অষ্টমী ও নবমীতে ছাগ বলি হয়! গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ভুবনেশ্বর শিবের সেবাইত পাল পরিবার ও তাদের দৌহিত্ররা প্রতিটি বংশের নিজস্ব পূজা আছে! যেমন ভট্টাচার্য্য বংশের বিরল সরস্বতী পূজা হয় তিনদিনের! দেবীর পাকা মন্দির আছে এবং তিন পুতুলের প্রতিমা!এঁদের কূলদেবী ' সিংহবাহিনী ' দুর্গাপুজার মতো আনন্দে মেতে ওঠে সারা গ্রাম! মুখার্জীদের তান্ত্রিক মতে নিশিভোরের কালীপুজা ! উগ্রক্ষত্রিয় রায় পরিবারের ধর্মরাজ পুজা ও গাজন!
ব্যানার্জী বাড়ীর দুর্গাপুজা! পালেদের গুরু বংশ গোস্বামীদের ' গোপীনাথ ' এর নিত্য সেবা ছাড়াও 'পঞ্চম দোল ' জন্মাষ্টমী রাধাষ্টমী উৎসব পালিত হয়! সুদৃশ্য মন্দিরে কষ্টিক পাথরের কৃষ্ন ও অষ্টধাতুর রাধা পুজিত হ'ন!
গ্রামের বাগ্দি পাড়াগুলিতে শ্রবন সংক্রান্তিতে এবং বাউরী পাড়াগুলিতে ভাদ্র সংক্রান্তিতে স্বর্পদেবী মা মনসার পুজা হয় সাড়ম্বরে!
গ্রামের শিব লিঙ্গ ও মন্দিরের আধিক্য প্রমান করে শাক্ত বা বৈষ্নব যে মতেই গ্রামের পরিবারগুলি পুজা করে থাকুক না কেন শৈব ধর্মের মতালমবনী প্রয় সকলেই!
গ্রামটি অতি প্রাচীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না! গ্রামে গোস্বামী পরিবারের দুটি বৃহৎ পুষ্করিনী আছে ' পদুমা ও ঠাকুরা ' পাড় বাঁধানো এই প্রতিমা দুটি সম্ভবতঃ অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সর্ববৃহৎ! এই পুকুর দুটিতে অনুসন্ধান করলে বহু মূল্যবান পুরাতাত্বিক নিদর্শন পাওয়া যাবে! আজ থেকে প্রায় দেড়'শ বছর আগে গ্রামের জনৈক রাম পাল, ঠাকুরা পুকুর থেকে দু'ফুট বাই দেড় ফুট আকৃতির ল্যাটেরাইট পাথরের নিত্যরত নটরাজ মূর্তি পান এবং সেই মূর্তিটি ভুবনেশ্বর ও আনন্দময়ী মন্দিরের নিকট শিবগড়ে নামে একটি পুকুর পাড়ে গাছের নীচে প্রতিষ্ঠা করেন!
পুরাতাত্বিক গবেষকদের মতে মূর্তি আনুমানিক দুই থেকে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন! নটরাজ এখানে ষন্ডের উপর নৃত্যরত ! আটটি হাত তিনটি ভাঙা, ওপরের দুটি যোগমূদ্রায় জোড় হাত করা একটি হাতে ডমরু, একটি হাতে কমন্ডলু অন্য হাতে রুদ্রাক্ষের মালা! দুই পাশে দুটি গন্ধর্বমূর্তি! নীচেও ষন্ডের মুখের সামনে একটি মূর্তি!
পাশে আরও কয়েকটি ভগ্নমূর্তি খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ নেই!
একটা সময় এই গ্রাম ছিল গ্রাম বাংলার অনান্য গ্রামের " ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়....." সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বদলাচ্ছে গ্রাামের চরিত্র! আজ আর ভাদ্রে সবুজ ধানের ক্ষেতে বাতাসের ঢেউ নেই, আশ্বিনের সংক্রান্তিতে ধান ডাকা নেই, কার্তিকে ' মুট ' আনা নেই! অগ্রাহায়নে মাঠে মাঠে সোনালি ধান নেই, নবান্ন উৎসব নেই! চাষের জমিতে গড়ে উঠেছে কারখানা আর আকাশচুম্বী বহুতল! হারিয়ে গেছে সেই চেনা গ্রামটা....আজ খুব খুব অচেনা মনে হয়। (চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours