সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
স্বঅভিভাবক , রোজগেরে , নাস্তিক পাত্রের পাত্রী চাই।
বিজ্ঞাপনটা দেখে রোহিনীর বেশ মজা লেগেছিল । মা মেয়ের সংসারে বিয়ে নিয়ে বিশেষ মাথা না ঘামালেও মায়ের মেলে ধরা রবিবারের পাতার টান উপেক্ষা করা যায়নি।
মায়ের কথায় আহারে , অনাথ ছেলে বোধহয় , আমি ছেলে পাবো সে মা পাবে জাতীয় কথাবার্তার মধ্যেই বিয়েটা হয়ে গেল।
আপাত ভালো ভদ্রলোক , একদম ন্যাকা টাইপ নন , আবেগ নেই ? রোহিনী মাস খানেকের দাম্পত্য জীবনে তা মধ্যে বুঝতে পারেনি।
তবে , মাকে ঐ মিসেস মুখার্জি বলাটা বড্ড কানে লাগে। মায়ের ছেলে পাওয়ার স্বপ্নের গুড়ে বালি বেশ বোঝা যায়।
এরমধ্যেই একদিন রোহিনীর ঋতু কালীন যন্ত্রণায় ভয় পাওয়া মানুষটাকে সে নতুন করে পেল ।
ফোনে শুনতে পেলো , মিসেস মুখার্জি একবার আসবেন , রোহিনীর খুব কষ্ট।
ঐ কষ্টের মধ্যে এক আনন্দ ছিল।
মিসেস মুখার্জি একদিন মা ডাকের আবদার করে বসলেন।
উত্তর খুব কাটাকাটা।
আমার কাছে ঐ ডাকে কোন শ্রদ্ধা নেই । ছোটবেলায় মা মানেই বাবার সাথে ঝামেলা করা একটা অস্পষ্ট মুখ। চলে যাবার আগে বলেছিল , তোর বাবা আমাকে তোর কাছে থাকতে দিলোনা । পরবর্তীতে বাবা সবটুকু উজাড় করে দিলেও ঐ কথাটাই তাড়া করে বেড়াতো তাকে । বাবার যখন চলে যান তখন সে কলেজে । এত কষ্টের মধ্যেও মনে হয়েছিল মা আর তার মাঝের পর্দা বুঝি সরে গেছে।
মা বলে গিয়ে যে দরজায় দাঁড়িয়েছিল , সেখানে মায়ের সাজানো সংসারে । যেখানে সে এক অতীতের খাতা বন্ধ হারিয়ে যাওয়া চ্যাপটার।
বাবার সাথে সকালে একচোট হয়েছে বিন্নির । বাবা তুমি কেন বোঝোনা মায়ের সাথে মেয়ের রিলেশনটা ফর্মাল নয় ? হোয়াই সুড আই কল হার ? বুল সিট বাবা । আই হেট দ্যাট ন্যাকামি । মাদার্স ডে । বিড়বিড় করে কটা কথা বলতেই , বাবা চায়ের কাপটা নামিয়ে চলে গেল । কান মাথা চেপে ধরে বসে পরলো বিন্নি । দ্যাট টাইম আই ওয়াজ ওনলি টেন বাবা । তুমি আমার সব , সব।
ফোনটা বেজে উঠতেই মিঠি দেখলো বাবুর ফোন।
হ্যাঁ রে , আজ কি ডে রে?
কেন , কেন আমাকে উইস করবে ? আজ মাদার্স ডে।
করতেই পারি । তুই ভালো মা । তোর মত যদি মা পেতাম।
থাক ,থাক । এরপরেই বলবে খাইয়ে খাইয়ে হাতি করে দিতিস।
কেন , হলোটা কি বলবে?
আমার দুই মায়ের অভিযোগ আমি তাদের উইস করিনি।
ওহ , এই ব্যাপার।
ফোনটা কেটে গেলে হঠাৎ ই বাবুর ছোটবেলাটা চিন্তা করে মিঠির এত রাগ হতে লাগলো।
জন্মের পর নিঃসন্তান পিসির কাছে বাবুকে ওর জন্মদায়িনী দিয়ে দিয়েছিল । বাবু যখন ক্লাস থ্রি পিসির মাতৃত্বের খবর আসে তখন তাকে বলা হয় , মামী ওর আসল মা । আসল মা পিসি।
এইটুকু শিশুর মনের ওপর দিয়ে কি ঝড় ওঠেছিল। জানতে চেয়েছিল তারা ? বাবু বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল উখরা। রাত হতে ক্লান্ত বাবু ঘুমিয়ে পরেছিল কয়লার গাদায় । পরের দিন সেখান থেকে তাকে ঘরে দিয়ে যায় পুলিশ।
পিসো নামক বাবা চোরের মার মেরেছিল তাকে।
সেই দুই মা এখনো , পঞ্চাশ বছর পর , সমানে কে বেশী মা , তার দাবীতে লড়ছে।
নাড়ী কাটা ধন । ফেসবুককে মাকে জড়িয়ে ধরা ছবির মধ্যেই এই মানুষদের ও আমরা গন মাদার্স ডে উইস পাঠাই । তারাও বাধ্য হয়ে সেম টু ইউ লেখে।
রক্ত নাকি কথা বলে?
কতটা ধ্রুবক ? এক্স ওয়াইয়ের মত কনস্টান্ট?
সকালে উঠে রোহিনী সামনে ফ্লাটের পুচাকে গুডমর্নিং বলে । সোনা বাবা ব্রাসু করো । দুধের খালি গ্লাস নিয়ে সে ডাকে পিপি ফিনিস । গুড বলো । সেও না দেখে চিৎকার করে গুড গুড।
কয়েকমাস আগে ওর মা পথ দুর্ঘটনায় চলে গেছে। রবিবার গুলো পিপির সাথেই পুচা থাকে । ঐ কঠিন লোকটা রোহিনীর মাকে এর মাঝে ,একদিন মা বলেছে।
বিন্নি বাবাকে সরি বলেছে । আজ সেই রান্না করে বাবাকে খাওয়াবে । টুক করে মাদার্স ডের একটা ভিডিও বানিয়েছে ওর আর বাবার ছবি দিয়ে।
মিঠি রোজ বনগাঁ লোকালে যাতায়াত করে । এখন লকডাউনের জন্যে ওয়ার্ক ফ্রম হোম । কেমন আছে সেই গোসাইদা রাধাদি?
গোসাইদা হলেন মিউজিক্যাল চা ওয়ালা । রাধাদির দোকান ক্যানটনমেন্ট স্টেশনে । বিস্কুট , লজেন্স ,পান, সিগারেট।
রাত আটটার লোকালে মিঠির সঙ্গে গোসাইদা ও নামেন। তারপর রাধাদির সাথে ঘন্টা খানেক আলাপচারিতা। অন্য ডেলি পাশন্ডের মত আদিরসাত্মক কথা মিঠি বলেনা বলেই এই জুটির কাছে সে মিঠিদিদি। গোসাইদার গানের আসরে সেও থাকে কখনো কখনো। তখন রাধাদি চা করে।
মিঠি উঠে আসার পরও ওরা গল্প করেন , নটার লোকাল ধরেন গোসাইদা।
হ্যাঁ গো , কটা চাঁদ বিস্কুট রেখেছি , ছেলেটা দুটো জন্যে। নিয়ে যেও।
হ্যাঁ রে , রাধু কি বলবো তাদের?
ফিক করে হেসে রাধু বলে , বলো ছোটমা দিয়েছে।
ধুর পাগলী , মা তো মাই হয় ,তার ছোট আর বড়।
দুরে বড় লাইট ফেলে নটার লোকাল আসছে।
সেই আলোতে রাধা মার মুখটা খুব উজ্জ্বল দেখায়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours