আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

স্টার গেজার

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্বশুদ্ধ মানুষ গৃহবন্দি। আর তারই জেরে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রকৃতি, কমেছে দূষণ মাত্রা। যদিও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই সময় আরও দুরূহ হয়ে উঠছে। সেই জন্যেই দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি(জিডিটি) আয়োজন করেছিল একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। প্রায় ৭টি বিভাগে বিশ্বের নানা প্রান্তের আলোকচিত্রশিল্পীরা প্রায় ৫০০০ ছবি জমা করেন, তার মধ্যে থেকে ৭০ টি ছবি নির্বাচিত হয়। 'নেচার'স স্টুডিও' বা 'প্রকৃতির রাজ্য' বিভাগে চতুর্থ স্থান অর্জন করে ক্রিশ্চিয়ান ওয়াপলের 'স্টার গেজার'।

ক্রিশ্চিয়ান ওয়াপলের আলোকচিত্রটি এককথায় অপূর্ব। ছবিতে একটি কাঁকড়া বিছেকে সামনের অতিকায় মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। নীলরঙা কাঁকড়া বিছেটি প্রকৃতির এক অবিস্বাস্য সৃষ্টি। অতি উন্নতমানের ক্যামেরায় তোলা ছবিটি যেরকম স্পষ্টভাবে দূরের লক্ষ লক্ষ তারাকে ছবিবন্দি করেছে, তেমনই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে বিছেটির উন্নত দুই দাঁড়া। এই প্রাণীটি যেমন চরম বিষাক্ত, তেমনই মরুভূমি অঞ্চলের প্রাণীটি সুন্দরও বটে।

আলোকচিত্রটিতে দূরের বিশালকায় পর্বতমালাকে দেখা যায়, যা সহজেই ব্যক্ত করে যে এই কাঁকড়া বিছে কতটা ক্ষুদ্র। মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দর্শককে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন ক্রিশ্চিয়ান ওয়াপল। 'স্টার গেজার' কথার অর্থ যে তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখানে কাঁকড়া বিছেটি তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও দর্শকের চোখও মহাশূন্যের দিকে চলে যায় এবং এখানেই ছবিটির সাফল্য। আলোকচিত্রটি দেখতে দেখতে বিছেটির মত দর্শকও হয়ে ওঠে 'স্টার গেজার'।
উক্ত আলোকচিত্রটির বাস্তবতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক মাধ্যম ও আন্তর্জালে। অনেকের মতে, এইভাবে গভীর অন্ধকারে কাঁকড়া বিছেটিকে পরিষ্কার দেখার জন্য দরকার অতিবেগুনি রশ্মি, ফলত অনেকেই মনে করছেন ছবিটি ফটোশপ সফটওয়্যারে তৈরি করা। যদিও জিডিটির গাইডলাইন অনুযায়ী, এটা অন্তত স্পষ্ট যে এই প্রখ্যাত প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়ার পূর্বে প্রত্যেক ছবির বাস্তবতাই কঠিন পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। আর তাই অধিকাংশের মতে, নেটিজেনদের এই সমালোচনা অন্তত 'স্টার গেজার'-এর ক্ষেত্রে খাটছে না।

আলোকচিত্রটির প্রধান আকর্ষণ নীলাভ কাঁকড়াবিছে ও নক্ষত্রপুঞ্জের সমাহার। অন্ধকারে ডুবে থাকা বিছে ও নক্ষত্রপুঞ্জকে একই ছবিতে ধরার জন্যে যে কারিগরি দক্ষতা দরকার, তা যে ক্রিশ্চিয়ান ওয়াপলের মধ্যে উপস্থিত তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বিছের বীভৎসতা ও আকাশগঙ্গার সৌন্দর্য একই ছবিতে যেভাবে ফুটে উঠেছে, তা অপূর্ব। পরিবেশে বাঁচতে গেলে যে নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য উপযুক্ত করতে হয় তা বুঝিয়ে দেয় এই বিছে। যদিও ছবিটি দেখে যেন মনে হয়, সারাদিনের জীবন যুদ্ধের পর আকাশের বিশালতার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে এই প্রাণীটি।

প্রকৃতিবিদদের মতে, পাথরের উপর বসে থাকা এমন কাঁকড়াবিছে সত্যিই বিপদের সামনে। দূষণ ও মানুষের আধিক্যের জেরে ইতিমধ্যেই বিলুপ্তির পথে পাড়ি দিয়েছে হাজার হাজার প্রজাতি। ফলে এই ছবি যে এই কাঁকড়া বিছের স্মৃতি নেটিজেনদের কাছে গচ্ছিত রাখল, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। মহাকাশ তথা বিশালকায় জগতের সাথে এই অতি ক্ষুদ্র বিছেটি হোক বা আমাদের মত দর্শক, প্রত্যেকেরই যে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে, তা অতি সহজেই ফুটিয়ে তোলে ক্রিশ্চিয়ান ওয়াপলের 'স্টার গেজার'।

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours