ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

চিন্তামনি স্বামী  পরিত্যক্তা  হয়ে, পরিবার থেকে  বিচ্ছিনা হয়ে যায়। সেই  সময়   বিধবা  বা   স্বামী  পরিত্যক্তাররা সমাজে  প্রায়  ব্রাত্য হয়ে থাকতো।  চিন্তামনি তাই  গ্রামের  শেষ  প্রান্তে  অজয় নদের তীরে  একটি  মাটির বাড়ীতে  বাস করতে লাগলো ।
              জামদহ গ্রামের বিপরীতে অজয়ের উত্তর তীরে  বেলুটি গ্রামের  বিল্বমঙ্গল  চিন্তামনির প্রেমে পড়ে  যায়। 
                 প্রায় প্রতিদিনই  খরস্রোতা  অজয় নদ পেরিয়ে  প্রমিকার  সাথে দেখা করে  বিল্বমঙ্গল। 
         কিছু  দিন পরে   বিল্বমঙ্গললের  পিতৃ বিয়োগ  ঘটলে, বিল্বমঙ্গলের  পিতৃ শ্রাদ্ধ  করতে  সন্ধ্যা গড়িয়ে  যায়। আকাশ ভেঙে  বৃষ্টি  শুরু হয়। কিন্তু প্রেমিকার সাথে দেখা করার জন্য  মন ছটফট  করতে  থাকে।  এদিকে  প্রচন্ড  দুর্যোগ, ভরা  অজয়। কোন  নৌকা  নেই।  কিন্তু প্রেমের  অমোঘ টানে  ভরা  অজয়ে ঝাঁপ দেয়  বিল্বমঙ্গল। উত্তাল  নদ সাঁতারে পেরতে  গিয়ে  দেখে  একটা  গাছের গুড়ি জলে ভেসে  যাচ্ছে।  সেই  গাছের  গুড়ি  আকড়ে ধরে  নদ  পেরিয়ে   প্রমিকার বাড়ী। পৌঁছে গেল।  তখন  রাত্রি  হয়ে গেছে।  অঝোর বৃষ্টির সাথে  তীব্র বজ্রপাত ।রাস্তা ঘাট  জন মানবহীন।  হঠাৎ  তীব্র  বিদ্যুৎ  ঝলকে  বিল্বমঙ্গল  দেখে চিন্তামনির  বাড়ীর প্রাচীরে  একটা  দড়ি ঝুলছে। সেই  দড়ি দিয়ে  বাড়ীতে  প্রবেশ করে  উঠানে দাঁড়িয়ে চিন্তামনিকে  ডাকতে থাকলে  বাইরে  বেরিয়ে  এসে  চিন্তামনি  অবাক হয়ে  জিজ্ঞেস করল, " এই  দুর্যোগে  তুমি  এলে  কিভাবে? " 
      বিল্বমঙ্গল  জবাব  দেয়, " পিতৃ শ্রাদ্ধ  সেরে  একটা  গাছের গুড়ি আকড়ে ধরে নদ পেরিয়ে  এসেছি। তুমি  প্রাচীরে আমার জন্য রজ্জু  রেখে  ছিলে  সেটা  দিয়েই  ঘরে ঢুকেছি। 
          চিন্তামনি  অবাক বিস্ময়ে  জিজ্ঞেস করে, "আমি তোমার জন্য দড়ি  রেখেছিলাম? আর  তোমার  শরীরে  এতো  দুর্গন্ধ  কেন? চলো  দেখে  আসি কোন দড়ি  দিয়ে  বাড়ীতে ঢুকেছো  কি গাছের গুড়ি আকড়ে  নদ  পেরিয়েছ? "
             বাইরে বের হয়ে  চিন্তামনি অবাক  প্রাচীরে একটা  বিষধর সাপ ঝুলছে।  প্রেমে বিভোর  বিল্বমঙ্গল  সেই  বিষাক্ত। সাপকে  দড়ি  মনে  করে  সেটা  ধরেই  প্রেমিকা  চিন্তামনির বাড়ীতে প্রবেশ করে। (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours