সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

N-95 নামটা আজকাল খুব পরিচিত কারন হয়তো অনেকেই মুখ ঢেকেছেন, না না লজ্জায় নয় করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে এন নাইন্টি ফাইভ মাস্কে ঢেকে নিয়েছেন নিজের নাক-মুখ।  এই মাস্কের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, আর কেমন যেনো অপ্রতুল আকাশচুম্বী দাম হয়ে গেছে। এটি খুব ভালভাবেই মুখাবয়বের সাথে খাপ খেয়ে যায় এবং খুব কার্যকরভাবে এটি বাতাসে ভাসমান কণাকে আটকে দিয়ে অক্সিজেনকে ছাঁকতে পারে।
এবার প্রশ্ন এর বিষয়ে খোঁজ খবর করতে হবে, জানতে হবে কীভাবে এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক তৈরি হল।
মানুষ যখন মাস্ক ব্যবহার করা শুরু করেছিলো তখন বাতাসে ভাসমান ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া যে মানুষকে অসুস্থ করতে পারে এই সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। এই মতটি প্রকাশ করেন ক্রিসটোস লিনটেরিস, যিনি মেডিক্যাল মাস্কের ইতিহাস বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ।

১৭২০ সালে মারসেয়ের আঁকা চিত্র থেকে দেখা যায়, কবর খননকারী এবং অন্যান্য লোকজন যারা মরদেহ ঘাঁটাঘাঁটি করত, তারা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখত। মারসেয় তখন বিউবোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত ছিল। লিনটেরিসের মতে, লোকজন তখন ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কাপড় দিয়ে মুখ এবং নাক ঢাকত না। বরং তাদের বিশ্বাস ছিল, রোগসমূহ যেমন, প্লেগ ছিল দুর্গন্ধ যা ভূপৃষ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয়। এই কারণেই দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য তারা কাপড় দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকত।
১৯৫৮ সালে ডিজাইনার সারা লিটল টার্নবুল ‘থ্রি এম’ কোম্পানিতে একটি প্রেজেন্টেশন দেন, যাতে তিনি নন উভেন প্রোডাক্টের দিকে কোম্পানির ব্যবসা প্রসারিত করতে বলেন। তিনি একশটি পণ্যের ধারণা দেন এবং যার মধ্য থেকে তাকে মোলডেড ব্রা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে টার্নবুলকে পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের দেখাশোনা করার জন্য হাসপাতালে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। কিছুদিনের মধ্যে তিনজন কাছের মানুষকে হারান তিনি। এই দুঃখবোধ থেকে বের হয়ে ‘বাবল’ সার্জিক্যাল মাস্ক নামে নতুন একটি মাস্ক উদ্ভাবন করেন টার্নবুল, যা দেখতে ছিল ব্রা কাপের মতো।

টার্নবুল অঙ্কিত সার্জিক্যাল মাস্কের ডিজাইন,
টার্নবুল অঙ্কিত সার্জিক্যাল মাস্কের ডিজাইন
 ১৯৬১ সালে ‘বাবল’ সার্জিক্যাল মাস্কটি থ্রি এম কোম্পানি বাজারে ছাড়ে। যখন কোম্পানি বুঝতে পারল এই মাস্কটি জীবাণু প্রতিরোধ করতে পারবে না, তখন এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ডাস্ট’ মাস্ক।
১৯৭০ সালে খনি দপ্তর এবং জাতীয় পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান একবার ব্যবহার করা যায় এমন রেস্পিরেটরের মানদণ্ড তৈরি করে। সর্বপ্রথম থ্রি এম কোম্পানি এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক তৈরি করে, যা ১৯৭২ সালের ২৫ মে অনুমোদন পায়।

থ্রি এম কোম্পানির তৈরি এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক;
এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক মূলত কারখানায় ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার সাই এন নাইন্টি ফাইভ মাস্কে ভাইরাস প্রতিরোধী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন এবং ১৯৯৫ সালে এটি প্যাটেন্ট করান। এরপর থেকে এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক স্বাস্থ্যখাতে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

অধ্যাপক পিটার সাই, আধুনিক এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক আবিষ্কারক,
অধ্যাপক পিটার সাই, আধুনিক এন নাইন্টি ফাইভ মাস্কের জনক;
‘ *এন নাইন্টি ফাইভ’ নামকরণের কারণ*
এন: ‘নট রেজিস্ট্যান্ট টু অয়েল’ বোঝাতে এন অক্ষরটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এই মাস্কটি কেবল বস্তু কণা প্রতিরোধ করবে, কোনো তরল নয়।

নাইন্টি ফাইভ: এই মাস্ক বাতাসে ভাসমান ৯৫ শতাংশ কণাকে ছাঁকতে পারে বিধায় নামকরণে ‘নাইন্টি ফাইভ’ ব্যবহার করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এন নাইন্টি ফাইভ মাস্ক। এই যুদ্ধ শেষে মাস্কটির ভূমিকা ঠাই পাবে ইতিহাসের পাতায়। আর সেই ইতিহাস নিয়ে হয়তো বা কেউ কেউ লিখে ফেলবেন খসখস করে।
যাক এটাও ভালো লাগে এই সবের মাঝে আমরাও কিছু শিখছি জানতে পারছি যা ব্যবহার করছি তার ইতিবৃত্ত।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours