ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

অতীতের  রাঢ়াপুরী আজকের  আড়রা  আজও  বহু  প্রত্নতাত্বিক  নিদর্শন সহ  অতীত  ঐতিহ্যের  অন্যতম  পুরাকীর্তি ' রাঢ়েশ্বর. শিবলিঙ্গ  ও মন্দির  জীবন্ত ইতিহাস  হয়ে  রাঢ় বঙ্গের  গৌরবজ্বল  অতীতের  সাক্ষ্য  বহন  করছে! মন্দিরটি  ওড়িশী  স্হাপত্যের  রেখ দেউল রীতিতে  নির্মিত  এক  অনুপম  স্হাপত্য! মন্দিরটি  পাল  রাজত্ব্যের  মধ্যবর্তী  সময়ে  নবম - দশম  শতকে  নির্মিত! সম্পুর্ন  স্হানীয়  উপাদাদে  বেলে  ও মাকড়া  পাথরে ত্রিস্তরীয়  রথাকৃতি সুউচ্চ  মন্দির! মন্দিরের  গর্ভগৃহে  একটি  কুয়ার ( কূপ) উপর  বৃহদাকার  শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠিত! এই শিবলিঙ্গই  তৎকালীন  রাঢ়ের  রাজধানীর  দেবতা  ছিলেন! অর্থাৎ  সেই  সময়ের  রাঢ়ের  নৃপতি  সহ  প্রজারা  ছিলেন  শৈব! রাঢ়েশ্বর  শিবলিঙ্গের  নাভি মূলে  একটি  বহুমুল্যবান  ' স্বর্প-মনি ' ছিল! বহুপূর্বে  সেটি  চুরি  হয়ে  যায়!
             রাঢ়েশ্বর  শিবলিঙ্গ  প্রতিষ্ঠাকে  কেন্দ্র  করে  একটি  কিংবদন্তী আছে! শোনা যায়,  অজয়ের  উত্তরে  জয়দেব -কেঁদুলীতে  একজন  মহা  সাধক  ছিলেন, বীরূপাক্ষ  গোস্বামী  তিনি  মাতৃসাধক  ছিলেন! তাঁর  সমসাময়িক  আর  একজন  সাধক  ছিলেন  আড়রার  নিকটবর্তী  ব্রাক্ষ্মন আড়া ( বর্তমান  বামুনাড়া) গ্রামের  ভুবনেশ্বর  রায়! ভুবনেশ্বর  রায়  সাধনায়  সিদ্ধিলাভ  করে  সাহাজাদ  রায়  নাম  পরিগ্রহ  করেন! তখন  বীরূপাক্ষ  গোস্বামী  সাহাজাদকে  বলেন, তিনি  ধ্যানযোগে  তাঁর  আরাধ্যা  মা  মহামায়ার  কাছে  জেনে  নেন, তিনি  কেন  সিদ্ধিলাভ  করতে  পারছেন  না! দৈববানী  হয়, ' বীরূপাক্ষের গুরু - মন্ত্রে  ভুল  আছে! কিন্তু  গুরদেবের  সন্মান  রক্ষার্থে  বীরূপাক্ষ  বলেন, তিন  সাধনায়  সিদ্ধিলাভ  না  করলেও  ভূল  গুরু-মন্ত্রকেই  সত্য  মেনে  নিয়ে  জপ  করবেন! গুরুর  প্রতি  অবিচল  আস্থায়  সন্তুষ্ট  হয়ে  দেবী  মহামায়া  তাঁকে  একটি  বৃহৎ  শিলাসন  দান  করেন! সেই  শিলার  উপর  বসেই  তিনি  জপতপ  করতেন! কথিত  আছে  অলৌকিকভাবে   বীরূপাক্ষ  যেখানে  যেতেন  শিলাখন্ডও  সেখানে  তাঁর  সাথেই  যেতেন!
            সাহাজাদ রায়ের  আশঙ্কা  হয়, খুব  তাড়াতাড়ি  বীরূপাক্ষ  সাধানায়  সিদ্ধিলাভ  করে  তাঁর  থেকেও  বড়  সাধক  হয়ে  উঠবেন! তাই  একরাতে  অনেক  শিল্পী  নিয়ে  শিলাসনটিকে  শিবলিঙ্গে  পরিনত  করেন! সেই  শিবলিঙ্গই ' রাঢ়েশ্বর  শিব '! (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours