সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

বিশ্বাস থাক বা না থাক, ধার্মিক ভিত্তি মজবুত হোক না হোক কিন্তু অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক ভাবে কোথাও যেন একটা কিন্তু থেকেই যায়, আজ আধ্যাত্মিকতার সাথে বিজ্ঞান বা জ্যোতির্বিজ্ঞান অদ্ভূত এক মেল বন্ধন তুলে ধরতে চাই। 

আসুন দেখি সেই বিস্ময়কর বলে মনে হলেও বিজ্ঞানসম্মত কিছু তথ্য, যেখানে ধর্ম আর বিজ্ঞান পরস্পরের মেলবন্ধনে একত্রে  মিলেমিশে সব একাকার হয়ে গেছে । কয়েক হাজার  বছরপূর্বে  ঋষিযুগীয় সংস্কৃতি ও সৃষ্টি তা সে সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত, রসায়ন ও চিকিৎসা যাই হোক না কেন, সমস্ত কিছুরই চরম বিকাশ ঘটেছিল যা আজ সারা বিশ্বের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এবার নিচের মন্দিরগুলির নাম খেয়াল করুন-
 
▪️রামেশ্বরম।
▪️চিদাম্বরম নটরাজ।
▪️একাম্বরনাথ, কাঞ্চি।
▪️কালেশ্বরম, তেলেঙ্গানা।
▪️থিরুবনইকবাল।
▪️কালহস্তী, অন্ধ্রপ্রদেশ।
▪️কেদারনাথ, উত্তরাখন্ড।
▪️থিরুবনমালী। 

এই মন্দির গুলো মধ্যে কোন সূত্র বা মিল খুঁজে পেলেন কি ? কোন সদৃশ্য এদের মধ্যে আদৌ আছে কিনা, এমন ধারনা আপনার আছে? বলবেন সব কটিই হল ভারতের শিব মন্দির এবং কয়েক হাজার বছর পুরাতন। আর কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে নেই ?

তাহলে চলুন দেখা যাক এসব মন্দিরের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক আছে কিনা ! আশ্চর্যজনক ভাবে সত্যি যে, এই মন্দিরগুলি সবই একই ৭৯° দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত। বিস্ময়কর হল, কোন প্রকার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, জিপিএস বা অনুরূপ কৌশল ছাড়াই তখনকার স্থপতিরা শত শত কিলোমিটার দূরবর্তী এতগুলো মন্দিরকে একই দ্রাঘিমারেখায় কিভাবে স্থাপন করেছিলেন ! অথবা কে বা কেন স্থাপন করতে বললেন? প্রত্যেকটি মন্দিরের পৃথক দ্রাঘিমাংশের তথ্য পরিবেশন নিন্মে দেওয়া হলো -

🔹তিরুবনমালী: ৭৯.০৭৪৭°
🔹রামেশ্বরম: ৭৯.৩১২৯°
🔹একাম্বরনাথ: ৭৯.৭০৩৬°
🔹কলহস্তী: ৭৯.৭০৩৭°
🔹কালেশ্বরম: ৭৯.৯০৬৭° 
🔹চিদাম্বরম নটরাজ: ৭৯.৬৯৫৪°
🔹কেদারনাথ: ৭৯.০৬৬৯° 
🔹থিরুবনইকবাল: ৭৮.৭১০৮°

কি অবাক লাগছে? নিজেই আপনার মুঠো ফোন নিয়ে সার্চ করে নিন। সবগুলো মন্দিরই একটি সরলরেখায় অবস্থিত। আশ্চর্যজনক হল, তখনকার স্থপতিরা কত উন্নত মানের প্রযুক্তির অনুশীলন করতেন, তা ধারণা করতে পারেন?  যা এই যুগেও আমাদের কাছে সহজবোধ্য নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে আমরা বিজ্ঞান চেতনায় কতটা প্রজুক্তি নির্ভর হয়েছি তাহলে মেধা উৎকর্ষতা কি আমাদের কমেছে? বিতর্ক হতে পারে কিন্তু আজকের আটো ক্যাড ধারীদের স্বপ্নের অতীত। 

এবার আরো আশ্চর্যজনক হল, এই সবগুলো মন্দিরই প্রকৃতির ৫টি চিরন্তনী বিষয়কে উপস্থাপন করে, যাদের একত্রে আধ্যাত্মিক ভাবে " পঞ্চতত্ব" বা "পঞ্চভূত" বলা হয়। এগুলো হল ভূ বা পৃথিবী, বারি বা জল, পাবক বা আগুন, পবন বা বায়ূ এবং ভূত বা স্থান বা মহাশূন্য। এই পাঁচটি বিষয় দ্বারা উপরের আটটির মধ্যে পাঁচটি শিব মন্দিরকে এইভাবে  উপস্থাপন করা হয়েছে যে -
🔅একাম্বরনাথ মন্দিরকে পৃথিবী দ্বারা,  
🔅 চিদাম্বরম মন্দিরকে মহাশূন্য দ্বারা,
🔅কলহস্তী মন্দিরকে বায়ূ দ্বারা, 
🔅তিরুবনমালী মন্দিরকে জল দ্বারা এবং
🔅থিরুবনইকবাল মন্দিরকে অগ্নি দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই পাঁচটি মন্দির একত্রে বাস্তু, বিজ্ঞান এবং বেদ এর মহামিলনকে উপস্থাপন করে। যারা এই নিয়ে গবেষণা করছেন তারা বিষয়টির গভীরতার প্রতি অনেক নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন। 

তাঁদের মতে এই মন্দিরগুলোর মধ্যে আরো কিছু ভূতাত্ত্বিক বিশেষত্ব আছে। এই পাঁচটি মন্দির আসলে যোগ বিজ্ঞানের সাহায্যে পরস্পরের প্রতি এক বিশেষ ভৌগলিক অবস্থানে নির্মিত, যার সাথে বিজ্ঞান এবং মানবশরীরবৃত্তীয় বিষয়াদির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এই মন্দিরগুলো আজ থেকে অন্তত চার হাজার বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময় এসব স্থানের অক্ষাংশ বা দ্রাঘিমাংশ মাপার মত কোন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বা জিপিএস ছিলনা। সেই সময়ে এতগুলি মন্দির এত নির্ভুলভাবে একটি সরলরেখায় কিভাবে স্থাপন করা হয়েছিল তা ঈশ্বরই জানেন। এই সরলরেখাটিকে বলা হয় "শিবশক্তি অক্ষ রেখা"। এই রেখাটির ৮১.৩১১৯° পূর্ব অক্ষাংশে রেখে কৈলাশের সবগুলো শিব মন্দির নির্মিত হয়েছে। কেন তা ঈশ্বর জানেন।
ধার্মিক ভাবে দেখা গেলে মহাকালের সাথে শিবজ্যোতির্লিঙ্গম এর আরো বিশেষ কিছু সম্পর্ক রয়েছে ! সনাতন ধর্মে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য উজ্জয়ীনি ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই উজ্জয়ীনি থেকে বিভিন্ন জ্যোতির্লিঙ্গম সমূহের মধ্যবর্তী দূরত্বওগুলি দেখুন কতটা চমকপ্রদ অদ্ভুদ সংখ্যার সাদৃশ্য-

পরিমাপ গুলো দেখুন 
উজ্জয়ীনি থেকে রামেশ্বরম ১৯৯৯ কিলোমিটার। 
উজ্জয়ীনি থেকে ভীমাশঙ্কর ৬৬৬ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে কাশী বিশ্বনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।উজ্জয়ীনি থেকে সোমনাথ ৭৭৭ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি  থেকে মল্লিকার্জুন ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে কেদারনাথ ৮৮৮ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি  থেকে ওঙ্কারেশ্বর  ১১১কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি  থেকে ত্র্যম্বকেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে বৈজুনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে নৌশেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।

সনাতন ধর্মতত্বে কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় ছিল না এবং কোন কারন ছাড়া কোন কিছুই করা হয়নি। অতীতে সনাতন ধর্মে উজ্জয়ীনিকে বিবেচনা করা হত বিশ্বের (ভূ-গোলকের) কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। সেই হিসেবে এখানে প্রায় ২০৫০ বছর পূর্বে ভূ-তত্ব, সূর্য এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পরিমাপের জন্য হস্তচালিত কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, আনুমানিক ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা যখন ভূ-গোলকের মাঝামাঝি একটি কাল্পনিক রেখা টানেন, তখনও এর কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল ঐ উজ্জয়ীনিই। 

সুখবর এটাই যে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ জ্যোতির্বিদ ও বিজ্ঞানী সূর্য বা  মহাকাশ গবেষণার কাজ করতে উজ্জয়ীনিতেই  আসেন। 

পরিশেষে আবারও বলি পুরাতন স্থাপতি যা আজ আমরা দেখি তা আমাদের অবাক করে। হয়তো আশ্চর্য্য হই সবের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা খুঁজি তার পরও সেই একটা কিন্তু যেন অদৃশ্যমান শক্তিকে সামনে তুলে ধরে, সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয় এর একজন ভূগোলবিদ অধ্যাপক  বিশ্ব চরাচর কোন এক অদৃশ্য শক্তির টানে একদিকেই ফুলে উঠছে তার রহস্য খুঁজছেন। জানিনা কি সেই অদৃশ্য শক্তি যা অসীম শূন্যে লুকিয়ে আছে? হয়তো কোন একদিন উন্মোচিত হবে সেই বিষ্ময় হয়তো তাকেই ঈশ্বর বা পরমেশ্বর ভেবেছি।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours