রমা চক্রবর্তী, শিক্ষিকা, আবৃত্তিকার ও ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

"লকডাউন" শব্দটা আমাদের এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে অতি আশ্চর্য একটা শব্দ হয়ে উঠেছে। 
সরকারীভাবে লকডাউন মানে সমস্ত দিক থেকে জনজীবন স্তব্ধ এবং প্রত্যেকেই গৃহবন্দী|প্রতিদিন আমরা যারা কর্মসূত্রে বাড়ীর বাইরে যাই তাদের কাছে প্রথম ক'টা দিন মনে হয়েছিল যাক্ একটু Rest পাওয়া যাবে | কদিন একটু সকালবেলার হুড়োহুড়ি নেই, ধীর সুস্থির ভাবে সোফায় বসে, জানালার গ্রিলের পাশে প্রকৃতির নিষ্পাপ নির্মল মুক্ত বাতাসে বসে সকালের চা-টা খাওয়া যাবে | কিন্তু তার মধ্যেও যেন অনিশ্চয়তা, ভয় সবার মনে|
টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই আতঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে--করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে,মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে | তার সঙ্গে বিদেশের সংবাদে আশঙ্কা বেড়েই যাচ্ছে|
ভয় হচ্ছে অত উন্নত দেশগুলোর যদি এই পরিস্থিতি হয় তাহলে আমাদের ভারতবর্ষের মত Third World Country তে গরীব দেশে কি হবে? কি করব আমরা ? অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাজার বন্ধ | দিন যত যাচ্ছে লকডাউনের সময় যত বাড়ানো হচ্ছে ততই আমরা অধৈর্য হয়ে উঠছি গৃহবন্দী থাকতে থাকতে|
 কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও মায়েদের কাজের বিরাম নেই| তারা সেই ভোরবেলায় অভ্যাসগতভাবে উঠে পড়ছে| ঠাকুরের জন্য ফুল তুলছে বাগানে গিয়ে | সকলের জন্য সকালবেলার চা বানিয়ে টেবিলে ডাকছে | সবাই একসাথে বসে চা-খাওয়া,গল্পের ঝড় তোলা এগুলোর আনন্দই আলাদা | কিন্তু মায়েদের Lock down হয় না। সকলের আবদার মেটানোর জন্য মা সর্বদাই প্রস্তুত | সকালের জলখাবার থেকে রাতের খাবার সব কিছুরই যেন একটু রকমফের ঘটে গেছে| 
বাবা Retired (অবসর) করার পর থেকে বাইরে বেরোনো প্রায় বন্ধ খুব জরুরী ব্যাঙ্ক,পোস্ট-অফিসের কাজ ছাড়া | কিন্তু মায়েদের কোনো Retired হয় না|
অন্য সময় সবাই যখন বাড়ীর বাইরে যায় তাদের ঘরে ফিরে আসার অপেক্ষায় জানালার গ্রিলের পাশে আপনমনে বাইরে তাকিয়ে থাকে মা | আর এখন যখন আমরা সবাই ঘরে আছি তখন ঐ জানালার গ্রিলটা মায়ের দাঁড়ানোর অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছে | মায়েদের হাতে সময় কোথায় একলা বসে থাকবার! 
আমরা জানতেই চাই না মায়েদের ভালো লাগা-খারাপ লাগা | মায়ের প্রিয় গানটা গাইতে ইচ্ছে হয় কিনা, প্রিয় কবিতাটা আবৃত্তি করতে ইচ্ছে হয় কিনা | আমরা বুঝতেই পারি না মায়েদের কোনো Retired হয় না, কোনো Lock down হয় না|

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours