তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:
                              
দুর্যোগের অন্ত নেই, ভাইরাস, বাড়িবন্দি, ঘূর্ণিঝড়, পঙ্গপাল। যেন আকাশটাই ভেঙ্গে পরা বাকি। 
চলছে সামাজিক কলহ, সন্দেহ, বিবাদ, মস্তিস্কে পাথর সমান চাপ। সহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করা যাচ্ছে না আর। যুক্তরাষ্ট্রের “অ্যামেরিকান ইন্সটিটিউট অফ স্ট্রেস” জরীপ মতে প্রতি বছর ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ শুধুমাত্র মানসিক চাপে জর্জরিত হয়ে মারা যান। স্রষ্টার উপর বিশ্বাস ও নিজের ওপর ভরসার অর্থই হলো  সহনশীলতা। কিন্তু ক’জন-ই বা এমনটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। পৃথিবীর একঘেয়ে দৌড়ে এতো আধ্যাত্মিক মনস্থিরতার সময় কোথায়? 
অনুমান ও কুধারণা করা থেকে বিরত থেকো, কেননা অনুমান হলো বড় মিথ্যা কথা।– বিশ্ব নবী করীম (সাঃ)
কারণ কুমন্ত্রণা হতেই আসে দুশ্চিন্তা, দুশ্চিন্তার চরম মাত্রায় পৌছলে হারাতে আরম্ভ হয় নির্ভরতা, লড়ে ওঠার শক্তি যা আমন্ত্রণ দেয় অমানুষিক চাপের।  
ধৈর্যের সীমা কি তাহলে শেষ হয়ে গেছে?
মোটেও না। একটু মনোযোগ দিন, পুরো বিশ্ব একটি চক্র মেনে চলে, তাঁর প্রতিনিয়ত চক্রে রয়েছে নিয়মানুবর্তিতা। এই নিয়মের বেতাল হলে নিমিষেই শেষ হতে পারে পৃথিবী।
ঠিক এই চক্র গোল গোল গুঁড়তে গুঁড়তে বিশ্ব শাসিত। ঘূর্ণর এই প্রক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও রয়েছে। আজ এই এই কাজগুলো শেষ করতে হবে, কাল ওটা করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজগুলো কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রনেই থাকে। কারণ “দেহ” নামক এই জীবন্ত যন্ত্র আমাদের উপহারস্বরূপ প্রদান করে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে অতিরিক্তভাবে দেয়া আছে “মস্তিস্ক” নামের আরো একটি অদ্বিতীয় যন্ত্র। যেখানে ভালো মন্দ, বুঝ, বিচার, আবেগ, বিবেকের ক্রিয়া চলে। 
ঠিক বিপরীতে চলছে আরো একটি মহাবিশ্ব যন্ত্র যেথায় মহাকর্ষ, পাহাড় পর্বত, সমুদ্রের স্রোত, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র। এরা একটি নিয়মেই ৬শত কোটি বছর কাঁটাতে চলেছে। কোন অভিযোগ ছাড়াই। কীভাবে? উত্তর খুব সহজ তারা স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণাধীন। স্রষ্টা তো আমাদেরও নিয়ন্ত্রণ করছে, আমাদের বর্তমান এই করুণ অবস্থা কেন তবে? উত্তর এখনো সহজ, তাদের মাঝে নিজের বলতে কোন শক্তি নেই। কিন্তু আমরা নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করতে পারি। আমরা, 
“মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব” আমাদের কিন্তু এভাবে স্থির করে রাখা হয়নি। আমাদের হৃদয় ও মস্তিস্কের পাশাপাশি সুসংঘটিত গঠনও প্রদান করা আছে। ভালো মন্দ উপলব্ধির ক্ষমতা দিয়ে দেয়া আছে। সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র এতো মনোরম অপূর্ব সৃষ্টির কোটি বছরের স্থিরতা দেখে কি? একফোঁটা পরিমাণও  মনে হয় না, আমরা মানুষ হয়ে কতোটা সৌভাগ্যবান? 
দুনিয়াতে এমনভাবে জীবনযাপন করো যেন তুমি একজন গরীব কিংবা পথিক- বিশ্ব নবী করীম (সাঃ)
উক্তিটির প্রতিফলন যদি বাস্তবে চার ভাগের এক ভাগও ঘটানো যেতো। তাহলে দুশ্চিন্তার কোন ঘর-ই তৈরি হতো না।  
অল্প একটুখানি হটাৎ কোন বিপদ এসে পরলে কতো উদ্বিগ্ন হয়ে পরি। কি হলো? কি হবে ভাবতে ভাবতে বেলা পুরিয়ে রাত শেষ। 
ধৈর্য হলো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। মনে রাখবে, একটা কলসি বিন্দু বিন্দু জলের দ্বারাই ভর্তি হয়- গৌতম বুদ্ধ 
আসলেই তো ধৈর্য হারা জীবন বড় অমঙ্গলকর। এই দু’অক্ষরের জীবনী শক্তি হারালে, আর কিছুই ফিরে পাওয়ার নয়। এই শক্তি আসে আধ্যাত্মিক শক্তি হতে, আর এই আধ্যাত্মিকতা আসে স্রষ্টার সন্নিকট হতে। 
প্রত্যেক মানুষ, তার স্বাস্থ্যের কিংবা রোগের সৃষ্টিকর্তা হয়ে থাকে- গৌতম বুদ্ধ।    
ব্যস্তব জীবনকালে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত কথাগুলো খুব সেকেলে আদিম যুগের মনে হলেও। বেঠিক তো নয়। আপনি অস্বীকার করতে পারেন কিন্তু কথাগুলো ভুল তো নয়। তাই এমনটি বলা একদমই ভুল হবে যে বর্তমান বিরাজমান রোগটি আমাদের-ই হাতের অর্জন। 
তো করণীয় কি? 
-অবশ্যই বেশি বেশি প্রার্থনা,
-ধর্ম নিয়ে গবেষণা করে সুন্দর সময় পাড়,
-পাকস্থলীকে একদম হাসি খুশি রাখা। মানে তৈলাক্ত খাবার একদম কম, নেশাজাত দ্রব একদম নয়। কারণ পেট সুস্থ মানে আগাগোড়া স্বাস্থ্য ভালো। আর উত্তম স্বাস্থ্য দেয় মানুষিক সুস্থতা।
-প্রতিদিন ১৫-৩০ হাঁটুন। অনেকেই আশপাশে বলতে পারে- অল্প একটুতে কি হবে? এসবে একদম কান দেবেন না। কম হলেও নিয়মিত আর তাতেই যথেষ্ট। ঘামে বিরক্ত লাগলে স্নান করার আগ মুহূর্তে হাঁটা সেরে নিতে পারেন।
-এক বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ টানা চিন্তা করবেন না। ভাবনা আসলেও বলবেন- না আমি এই নিয়ে আর ভাববো না আজ। বেঁচে থাকলে যা হবে তা কাল দেখা যাবে। 
-বুদ্ধি খাটিয়ে সাহস করে লিখতে বসবেন যে- আপনার সাথে সামনে কি কি খারাপ হতে পারে। এতে হবে কি আগেভাগে খারাপটা চিন্তা করে রাখলে বর্তমান দুশ্চিন্তা কমে আসবে।     
সুতরাং পৃথিবী এক পরীক্ষালয় মাত্র। স্রষ্টার বার্তা বাহকদের দুঃখ-কষ্টে বিজড়িত জীবনকাল পাতা উল্টে পড়লে মনে হবে, এতো কিছু পেয়েও আমরা এখনো কতোটা অকৃতজ্ঞ।
তাই দুশ্চিন্তা আর নয়, 
দেখা যাক কাল কি হয়। 
মৃত্যুকে করবো না ভয়,
মানব জীবন মানেই অভয়।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours