মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী, নৃত্যশিল্পী ও ফিচার রাইটার, কলকাতা:
নিবেদিতা বলেছিলেন, "দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার স্পৃহা ছিল মায়ের সহজাত"৷ বেশিরভাগ মানুষই শ্রী মাকে চেনেন রামকৃষ্ণ দেবের সহধর্মীনি, সরল, মাতৃভাবাপন্ন, আদ্যাশক্তি রূপে৷উনিশ শতকে ঘোমটার আড়ালে থাকা মায়ের দেশপ্রেম , বৈপ্লবিক ভাবাদর্শ সত্যি অবাক করে৷
১৯১৪সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশব্যাপী খাদ্যাভাব, বস্ত্রাভাব ঐমন পর্যায় পৌছেছিল যে মেয়েরা বস্ত্রের অভাবে কারোর সামনে বেড়োতে পারতো না৷মা এতোটাই সচেতন ছিলেন যে খেতে কাপাস চাষ করতে ও সুতো কেটে কাপড় তৈরীতে উৎসাহিত করতেন...বলা যায় সেই সময় গান্ধিজীর চরখা অন্দোলন শুরু হয়নি৷
স্বদেশী আন্দোলনের সময় জয়রামবাটির কাছেই কোয়ালপাড়ায় কিছু ছাত্র দেশসেবার কাজে নিযুক্ত ছিল৷ মা তাদের চরখা কাটা, তাঁতবোনা তে উৎসাহ দিতেন, এমনকি নিজেও তাদের সাথে চরখা কাটাতে হাত লাগাতেন৷
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সময় সারাদেশব্যাপী বিদেশী পন্য বয়কট ও অগ্নিসংযোগ করা হত...কোয়ালপাড়ার ছাত্ররাও সেই অন্দোলনে যোগ দিয়েছিল ৷মা তাদের দেকে বলেন" দেখ, তোমরা বন্দেমাতরম হুজুক বাদ দিয়ে চরখা কাটো তাঁতবোনো কপড় তৈরী কর ...কাজের কাজ কর"৷ আসলে মা তাদের গঠনমূলক কাজে যোগ দিতে বলতেন৷
সেই সময় দেশের গুপ্ত সমিতি গুলিতে রামকৃষ্ণও বিবেকানন্দের ছবি পূজো করতো৷নিবেদিতার মতে ,"১৯০৯সালে অলিপুর বোমার মামলা বায় বেড়ালে দলে দলে মা এর কাছে প্রনাম করে যাচ্ছে,সবাই যেন স্বামীজীর অবর্তমানে মার কাছে আলো নিতে ছুটে আসছে"৷
১৯০৮শালে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ ও তার সহযোগীকে রাষ্টবিরোধী কাজের অপরাধে গ্রেফতার করা হলে তার পত্নী মৃণালিনী দেবী বাগবাজারে মা এর কাছে এসে মানসিক অবসাদ দূর করতেন৷কারামুক্ত হলে অরবিন্দ ও রামচন্দ মজুমদারকে নিয়ে মা কে দর্শন করতে এসেছিলেন...মা অরবিন্দকে আশির্বাদ করে বলেন"আমার বীর ছেলে, এই টুকু মানুষ একে সরকারের এতো ভয়?"
স্বদেশী আন্দোলনের সময় বহুবিপ্লবী বেলুরমঠে যেতেন ..তাদের প্রত্যেকেই মা এর মন্ত্রশিষ্য...অনেকে মঠে যোগদান করেন৷
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মায়ের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন--স্বাধীনতাসংগ্রামী বিভূতিভূষণ ঘোষ, বিজয়কৃষ্ণ বসু, আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক ও স্বাধীনতাসংগ্রামী সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, তমলুকের গান্ধীবাদী নেতা রজনীকান্ত প্রামানিক, অনুশীলন সমিতির ঈশ্বর মহারাজ ,শ্রীহট্টের বিপ্লবী যতীন্দ্র দত্ত, বরিশালের বিপ্লবীনায়ক মাখনলাল সেন এবং আরও অনেকে।
বরিশালের বিখ্যাত স্বাধীনতাসংগ্রামী যোগেন্দ্রনাথ গুহঠাকুরতার মেয়ে প্রফুল্লময়ী ১৩ বছর বয়সে বিয়ের ২৮ দিনের মাথায় বিধবা হন। ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে ছুটে যান সারদামায়ের কাছে। মা তাঁকে দেখেই বলে ওঠেন—‘এত নিরাশ কেন মা? তুমি তো তুচ্ছ নও ঠাকুর তোমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেবেন’।
মায়ের ভবিষ্যতবাণী সার্থক হয়েছিল। অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বহুবছর কারাদণ্ড ভোগ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারীসমাজের প্রগতির লক্ষ্যে কুমিল্লায় ‘সারদাদেবী মহিলা সমিতি’ স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন এই সমিতির প্রাণকেন্দ্র।
বিখ্যাত বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) মায়ের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করতেন, মায়ের স্নেহধন্য ছিলেন৷
স্বদেশী আন্দোলনের যুগে জয়রামবাটীতে মায়ের কাছে আসাযাওয়া মানুষের উপর পুলিশ তীক্ষ্ণ নজর রাখতো। এমন কি মায়ের বাড়িতে এসে আগন্তুকদের নামধাম লিখে নিয়ে যেত৷
স্বদেশী আন্দোলনের সময় নিবেদিতার সক্রিয় যোগদানের ফলে তাকে মঠ থেকে বিতারিত করা হয়৷ কিন্তু মা এর সাথে তার যোগাযোগ ছিল নিয়মিত৷মা তাকে আদর করে খুকী বলে ডাকতেন৷
জীবদ্দশায় শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘে মা ছিলেন সব। তাঁর ইচ্ছাকে আদেশ বলে গন্য করা হোত।
নিবেদিতার বলেন,তাঁর সম্বন্ধে সন্ন্যাসীদের বীরোচিত সম্ভ্রম দেখার মত’। মায়ের প্রতি নিবেদিতার যে পরিমান ভক্তিশ্রদ্ধা ছিল তাতে মা যদি নিষেধ করতেন, তা হলে নিবেদিতার পক্ষে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত থাকা সম্ভব ছিল না।
নারী শিক্ষা সমাজ সংষ্কারে মা ছিলেন অসামান্যা৷ মা এর কথায় নারী শিক্ষার জন্য ১৮৯৮সালে বাগরাজারে প্রতিষ্ঠিত নয় বাংলার প্রথম মেয়ে দের বিদ্যালয় যা আজ নিবেদিতা স্কুল নামে ক্ষ্যাত৷বিদ্যালয়ের দার উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং শ্রীমা৷
ঠাকুরের নির্দেশে সেই সময় অশুচির সময়ও নিয়মিত ঠাকুর সেবা করতেন৷ মা বলতেন "মনেই শুচী মনেই অশুচী".....ঠাকুরের জন্য যদি তোমার মন ব্যাকুল হয় তবে অশুচীর সময়ও ঠাকুরপূজো করা যায়৷
জাত পাত ভুলে মা সবাইকে কাছে টেনে নিতেন....জয়রামবাটীতে মুসলিম ধর্মের মানুষদেরও যত্ন করে খাওয়াতেন...তিনি বলতেন"আমার শরৎ যেমন ছেলে রহিমও তেমন, সবই আমার".............
স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন "ঠাকুর যায়ে যাক আগে মা"...তিনি বিশ্বাস করতেন শক্তিবিনা জগৎ উদ্ধার হবেনা,"মা ই ভারতের সেই শক্তি জাগাতে এসেছেন....মাকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী,মৈত্রেয়ী, জগৎ এ জন্মাবে৷
নিবেদিতা বলেছিলেন, "দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার স্পৃহা ছিল মায়ের সহজাত"৷ বেশিরভাগ মানুষই শ্রী মাকে চেনেন রামকৃষ্ণ দেবের সহধর্মীনি, সরল, মাতৃভাবাপন্ন, আদ্যাশক্তি রূপে৷উনিশ শতকে ঘোমটার আড়ালে থাকা মায়ের দেশপ্রেম , বৈপ্লবিক ভাবাদর্শ সত্যি অবাক করে৷
১৯১৪সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশব্যাপী খাদ্যাভাব, বস্ত্রাভাব ঐমন পর্যায় পৌছেছিল যে মেয়েরা বস্ত্রের অভাবে কারোর সামনে বেড়োতে পারতো না৷মা এতোটাই সচেতন ছিলেন যে খেতে কাপাস চাষ করতে ও সুতো কেটে কাপড় তৈরীতে উৎসাহিত করতেন...বলা যায় সেই সময় গান্ধিজীর চরখা অন্দোলন শুরু হয়নি৷
স্বদেশী আন্দোলনের সময় জয়রামবাটির কাছেই কোয়ালপাড়ায় কিছু ছাত্র দেশসেবার কাজে নিযুক্ত ছিল৷ মা তাদের চরখা কাটা, তাঁতবোনা তে উৎসাহ দিতেন, এমনকি নিজেও তাদের সাথে চরখা কাটাতে হাত লাগাতেন৷
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সময় সারাদেশব্যাপী বিদেশী পন্য বয়কট ও অগ্নিসংযোগ করা হত...কোয়ালপাড়ার ছাত্ররাও সেই অন্দোলনে যোগ দিয়েছিল ৷মা তাদের দেকে বলেন" দেখ, তোমরা বন্দেমাতরম হুজুক বাদ দিয়ে চরখা কাটো তাঁতবোনো কপড় তৈরী কর ...কাজের কাজ কর"৷ আসলে মা তাদের গঠনমূলক কাজে যোগ দিতে বলতেন৷
সেই সময় দেশের গুপ্ত সমিতি গুলিতে রামকৃষ্ণও বিবেকানন্দের ছবি পূজো করতো৷নিবেদিতার মতে ,"১৯০৯সালে অলিপুর বোমার মামলা বায় বেড়ালে দলে দলে মা এর কাছে প্রনাম করে যাচ্ছে,সবাই যেন স্বামীজীর অবর্তমানে মার কাছে আলো নিতে ছুটে আসছে"৷
১৯০৮শালে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ ও তার সহযোগীকে রাষ্টবিরোধী কাজের অপরাধে গ্রেফতার করা হলে তার পত্নী মৃণালিনী দেবী বাগবাজারে মা এর কাছে এসে মানসিক অবসাদ দূর করতেন৷কারামুক্ত হলে অরবিন্দ ও রামচন্দ মজুমদারকে নিয়ে মা কে দর্শন করতে এসেছিলেন...মা অরবিন্দকে আশির্বাদ করে বলেন"আমার বীর ছেলে, এই টুকু মানুষ একে সরকারের এতো ভয়?"
স্বদেশী আন্দোলনের সময় বহুবিপ্লবী বেলুরমঠে যেতেন ..তাদের প্রত্যেকেই মা এর মন্ত্রশিষ্য...অনেকে মঠে যোগদান করেন৷
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মায়ের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন--স্বাধীনতাসংগ্রামী বিভূতিভূষণ ঘোষ, বিজয়কৃষ্ণ বসু, আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক ও স্বাধীনতাসংগ্রামী সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, তমলুকের গান্ধীবাদী নেতা রজনীকান্ত প্রামানিক, অনুশীলন সমিতির ঈশ্বর মহারাজ ,শ্রীহট্টের বিপ্লবী যতীন্দ্র দত্ত, বরিশালের বিপ্লবীনায়ক মাখনলাল সেন এবং আরও অনেকে।
বরিশালের বিখ্যাত স্বাধীনতাসংগ্রামী যোগেন্দ্রনাথ গুহঠাকুরতার মেয়ে প্রফুল্লময়ী ১৩ বছর বয়সে বিয়ের ২৮ দিনের মাথায় বিধবা হন। ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে ছুটে যান সারদামায়ের কাছে। মা তাঁকে দেখেই বলে ওঠেন—‘এত নিরাশ কেন মা? তুমি তো তুচ্ছ নও ঠাকুর তোমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেবেন’।
মায়ের ভবিষ্যতবাণী সার্থক হয়েছিল। অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বহুবছর কারাদণ্ড ভোগ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারীসমাজের প্রগতির লক্ষ্যে কুমিল্লায় ‘সারদাদেবী মহিলা সমিতি’ স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন এই সমিতির প্রাণকেন্দ্র।
বিখ্যাত বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) মায়ের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করতেন, মায়ের স্নেহধন্য ছিলেন৷
স্বদেশী আন্দোলনের যুগে জয়রামবাটীতে মায়ের কাছে আসাযাওয়া মানুষের উপর পুলিশ তীক্ষ্ণ নজর রাখতো। এমন কি মায়ের বাড়িতে এসে আগন্তুকদের নামধাম লিখে নিয়ে যেত৷
স্বদেশী আন্দোলনের সময় নিবেদিতার সক্রিয় যোগদানের ফলে তাকে মঠ থেকে বিতারিত করা হয়৷ কিন্তু মা এর সাথে তার যোগাযোগ ছিল নিয়মিত৷মা তাকে আদর করে খুকী বলে ডাকতেন৷
জীবদ্দশায় শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘে মা ছিলেন সব। তাঁর ইচ্ছাকে আদেশ বলে গন্য করা হোত।
নিবেদিতার বলেন,তাঁর সম্বন্ধে সন্ন্যাসীদের বীরোচিত সম্ভ্রম দেখার মত’। মায়ের প্রতি নিবেদিতার যে পরিমান ভক্তিশ্রদ্ধা ছিল তাতে মা যদি নিষেধ করতেন, তা হলে নিবেদিতার পক্ষে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত থাকা সম্ভব ছিল না।
নারী শিক্ষা সমাজ সংষ্কারে মা ছিলেন অসামান্যা৷ মা এর কথায় নারী শিক্ষার জন্য ১৮৯৮সালে বাগরাজারে প্রতিষ্ঠিত নয় বাংলার প্রথম মেয়ে দের বিদ্যালয় যা আজ নিবেদিতা স্কুল নামে ক্ষ্যাত৷বিদ্যালয়ের দার উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং শ্রীমা৷
ঠাকুরের নির্দেশে সেই সময় অশুচির সময়ও নিয়মিত ঠাকুর সেবা করতেন৷ মা বলতেন "মনেই শুচী মনেই অশুচী".....ঠাকুরের জন্য যদি তোমার মন ব্যাকুল হয় তবে অশুচীর সময়ও ঠাকুরপূজো করা যায়৷
জাত পাত ভুলে মা সবাইকে কাছে টেনে নিতেন....জয়রামবাটীতে মুসলিম ধর্মের মানুষদেরও যত্ন করে খাওয়াতেন...তিনি বলতেন"আমার শরৎ যেমন ছেলে রহিমও তেমন, সবই আমার".............
স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন "ঠাকুর যায়ে যাক আগে মা"...তিনি বিশ্বাস করতেন শক্তিবিনা জগৎ উদ্ধার হবেনা,"মা ই ভারতের সেই শক্তি জাগাতে এসেছেন....মাকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী,মৈত্রেয়ী, জগৎ এ জন্মাবে৷
Post A Comment:
0 comments so far,add yours