আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:
দ্য হোয়াইট কোস্টলাইন
করোনা আক্রমণে নাজেহাল মানবসভ্যতা। বিশ্বশুদ্ধ মানুষ গৃহবন্দি। ফলে যেন হাঁফ ছেড়েছে প্রকৃতি, কমেছে দূষণ মাত্রা। যদিও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য খুবই দুরূহ এই সময়। সেই কারণেই দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি(জিডিটি) আয়োজন করেছিল একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। প্রায় ৭টি বিভাগে বিশ্বের নানা প্রান্তের আলোকচিত্রশিল্পীরা প্রায় ৫০০০ ছবি জমা করেন, তার মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয় ৭০ টি ছবি। 'নেচার'স স্টুডিও' বা 'প্রকৃতির রাজ্য' বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে স্টিফেন ফার্নরোরের 'দ্য হোয়াইট কোস্টলাইন'।
আলোকচিত্রটি আসলে গ্রিনল্যান্ডের 'মেল্টওয়াটার লেক'-এর। ফার্নরোরের 'ফটোগ্রাফিক সেন্স' ও ক্যামেরার দক্ষতার জেরে প্রকৃতিপ্রেমীরা উপহার পেয়েছেন একটি বিস্ময় ছবির। চিত্রে রঙের অদ্ভুত তারতম্য দর্শককে প্রভাবিত করে। হ্রদের ঘন নীল জল ও ধূসর স্থলভাগের মধ্যে যে বৈষম্য তা ছবিতে ফুটে উঠেছে খুবই সুন্দরভাবে। ছবিটি একপলক দেখলে দৃষ্টিবিভ্রম হওয়া স্বাভাবিক। একবার দেখলে অন্তত এটা বোঝা শক্ত যে এটি কোনো লেকের ছবি।
আলোকচিত্রে ভূমির ফাটল স্থলভাগ ও জলভাগ, দুই জায়গাতেই বিদ্যমান। এই ফাটলই ছবির দুই অংশকে মিলিয়ে দিয়েছে। ছবিটিকে একটু তেরচাভাবে উল্লম্ব দিক বরাবর সমান দু'ভাগে ভাগ করা সম্ভব। লেকের কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ জলের মধ্যে যেভাবে ভূমির ফাটল দেখা যায়, তাতে অন্তত এটা পরিষ্কার যে গ্রিনল্যান্ড এখনও অবধি পরিবেশ দূষণের আওতা থেকে শতহস্ত দূরে। যদিও সম্প্রতি বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষদৃষ্টিতে গ্রিনল্যান্ডের বাস্তুতন্ত্রও টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে!
'দ্য কোয়াইট কোস্টলাইন' নামটির সার্থকতা লুকিয়ে রয়েছে দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলে সাদা-নীল রঙের যুগলবন্দি যেকোন প্রকৃতিপ্রেমীকে আকর্ষণ করতে বাধ্য। ছবির শান্ত রূপ দর্শককে মুগ্ধ করে বলেই তীর সংলগ্ন এলাকার এই ছবির নাম 'দ্য কোয়াইট কোস্টলাইন'। বিশ্বব্যাপী দূষণের ক্রমবর্ধমান মাত্রার জেরে যেখানে এমন দৃশ্য ক্রমশ দুষ্কর হয়ে পড়ছে, সেখানে এমন ছবির দেখা মেলাতে অনেকেই এই ছবিকে 'ভিনগ্রহী' আখ্যা দিয়েছেন!
স্টিফেন ফার্নরোরের 'দ্য কোয়াইট কোস্টলাইন'-কে অনেকেই 'অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট'-এর তকমা দিয়েছেন। ছবিটি নিমেষে দর্শককে অন্য জগতে ঘুরিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে, যা নিঃসন্দেহে আলোকচিত্রশিল্পীর ক্ষমতাকে প্রশংসার দাবিদার করে তোলে। উত্তরমেরু সংলগ্ন গ্রিনল্যান্ডে অত্যধিক শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষের যাওয়া প্রায় সম্ভব নয়, সেখানকার এমনতর ছবি দেখে স্বভাবতই খুশি ছবিপ্রেমীরা। জলভাগ ও স্থলভাগের মাঝের সাদা দাগটি দেখে চকে টানা দাগ বলে ভ্রম হয়, যদিও অনেকেই এই দাগের কারণ হিসেবে হ্রদের জলের লবণকে দায়ী করেছেন। (ক্রমশঃ)
(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours