প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

আধুনিক সমাজ, মানেই উঠে আসে বিজ্ঞান আর বিবর্তনের ইতিহাস৷ ক্রমান্বয়ে জীবনের গতিতে মানুষ ছুঁয়েছে ললাট পেরিয়ে প্রযুক্তির ভাঁজ। কিন্তু কোথাও কি নগ্ন থেকেছে প্রকৃতির মানুষ। আজও!  এখনও!  শৈশবে শুনেছি যেদিন থেকে লজ্জা, সংগোপনের ভাব আসে সেদিন থেকে নাকি ভিতরে ভিতরে পাপ বোধ আসে। মানুষ তখন চিন্তা করে এই কাজ করবো তো?  এমা!  এটা দেখলে লোকে কি বলবে?  তাই বলে যে মানুষ সকলেই আধুনিককে আঁচলে বেঁধেছে, তা কিন্তু নয়। আজও অনেক নগ্ন জাতি আছেন, তাঁদের বিজ্ঞান, বিবর্তন কোনোটাই স্পর্শ করে নি। তারা জানে না আধুনিকের জীবনযাত্রা কেমন?  সেন্টিনেলিস, এরাই একমাত্র জনগোষ্ঠী যারা নিজেদের কি বলে ডাকেন আমাদের জানা নেই। ভারতের আন্দামান দ্বীপুঞ্জে প্রায় ৬০ হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে।

 আঁকিবুঁকি কাটা অদ্ভুত মুখ নিয়ে এরা সবসময় আদিবাসী ছাড়া সাধারণীকে ভয় দেখায়৷ এরা বুঝিয়ে দেয়, না এই দ্বীপে সাধারণের স্বাগতম করা যাবে না। রাগী, তীর ধনুক ধারী সেন্টিনেলরা ভূমি রক্ষার জন্য সবসময় প্রস্তুত৷ নারকেল, জীবন্ত শুকর দিলে এরা তৎক্ষনাৎ তা মাটিতে পুঁতে ফেলে৷ অনেকেই বলেন এরা নাকি পাঠান দণ্ডপ্রাপ্ত জাতি। এরা ব্রিটিশ কারাগার থেকে লুকিয়ে এখানে এসে আস্তানা নিয়েছে৷ এরা নিজেদের দ্বীপে কাউকে জায়গা দেয় না, কেবলমাত্র জলে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ করার অধিকার সকলের৷ বুনো শুকর, বুনোর ফল, মধু এদের খাদ্য।এরা নগ্ন এবং কঠোর রক্ষণশীল। এদের ভূমি আকাশ থেকেও জরিপ করতে দিতে এরা চায় না। খুব বলতে ইচ্ছা করছে " বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো, একচিলতে মেদিনী "।  ইতিহাস বলে, ১৮৫৭ সালে এই দ্বীপে কারা কলোনি গড়ে ওঠে এবং বন্দী আবাসস্থলে পরিণত হয়। ৫৯, সালে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়, কিন্তু এই খণ্ড যুদ্ধে সামনে আসে গ্রেটার আন্দামালিজ বাহিনী। এখানে সেন্টিনেলিজরা নিরাপদ দূরত্বে  বজায়  রাখে। 

সুরমা" জাতি প্রাচীন এক জনগোষ্ঠী। এই জাতি ইথিওপিয়াতে দেখা যায়। এরা পশুপালন করতে অভ্যস্থ।  সাদা চামড়ার মানুষ দেখলে এরা মৃত ভেবে ভয় পায়। এই জনগোষ্ঠীর পুরুষেরা লাঠি খেলে এবং মেয়েরা বিবাহ যোগ্য হয়ে উঠলে মেয়েদের নীচের ঠোঁটে মাটির থালা লাগিয়ে রাখার জন্য পরিচিত৷ কোথাও নিষ্ঠুর মনে হলেও, এদের সমাজে এটা স্বীকৃত। তবে অদ্ভুত বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু জন্মগত নয়, বরং কৃত্রিমতার জন্য এদের অভ্যাসই দায়ী। এদের কাছে  দূর্গম পাহাড় এদের পছন্দ। এরা কফি চাষ করে৷ এরা আমহারা আর সানহারাদের কাছ থেকে পশুদের লেজ, দাঁড়, চামড়ার বদলে আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে৷ তাদের সংস্কৃতিতে যার ঠোঁটের প্লেট যতো বড়ো সে ততো সুন্দর। তবে এমন শরীরের বিকৃত ভাঁজ কিন্তু আজ আর তেমন দেখা যায় না। 

ম্যাস্কো পিরো উপজাতি হলো আমাজানের উলঙ্গ জনগোষ্ঠী। খাবারের জন্য গ্রাম আক্রমণ,সাধারণের হত্যা সব অভিযোগই এদের জন্য বিদ্যমান। আধুনিকের সংস্পর্শে এরা আছেই, তবু তীর ধনুক, বর্শা এদের প্রধান অস্ত্র। কিন্তু কেন এরা ম্যাস্কো পিরো!  ১৮৯৪ সালে এরা কমান্ডার কার্লোস মাস্কো পিরোদের বিশাল একটি অংশকে  হত্যা করে। আসলে এদের কাছে ভূমি রক্ষা একটা বড়ো ব্যাপার। অনাধিকার প্রবেশ এরা মানতেই পারে না৷ এদের অদ্ভুত ভাষা এদেরকে আধুনিকের সাথে সহমত হতে বাধা  দিয়েছে। ব্রাজিল ও পেরু অনেক কষ্ট করেও এই ভাষার কারণেই এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারে নি৷ 

ইন্দোনেশিয়ার কারোওয়াই , হলো উপদ্বীপে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী।  গাছের উপর ঘর বানিয়ে এরা বসবাস করতে অভ্যস্ত। কারণ উপর থেকে শত্রুপক্ষ কে খুব সহজেই দেখা যায়৷ ১৯০০ সালে খ্রিস্টান মিশনারীরা এদেরকে আধুনিকের পরিচিতি দিতে চাইলে এরা বেঁকে বসে। আসলে আদিম তীর, ধনুক, বর্শা এদের উপকরণ৷ পোশাক নেই বলাটাই শ্রেয়৷ এরা গোত্র যুদ্ধ পছন্দ করে। উপরে ঘর হলে আগুন থেকে এরা নিরাপদ।  আর অনুকূল আত্মরক্ষার জীবন বাছে বলেই, এদের আলো বাতাসের সমস্যা হয় না৷ ১৯৭৪ সালের আগে এরা কূপমণ্ডূক ছিলো। এরা মনে করতো, যে, এলাকা ছাড়লেই  বুঝি মরে যাবে৷ আর ধর্মীয় বিধানে এরা মানুষ খেকো হয়ে ওঠে। পরে পরিবর্তন হলেও আজও স্বভাবের কোনো পরিবর্তন হয় নি। এরা লার্ভা, শূকর, কীটের ডিম  খেয়ে থাকে। 

জারোয়া " আন্দামানের আরেক উপজাতি। এরা হলো "প্রতিকূলের মানুষ "। এদের সমাজ, সংস্কৃতি বোধ দূর্বল। তথ্য বলছে, জিরকটাঙ্গ থেকে বারাটাক পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তার মাঝখানে জারোয়াদের দেখা মেলে। এরা শান্ত, ভদ্র, আন্তরিক, নম্র এবং হিংসাত্মক নয়। এরা বর্তমানে নিম্নাংশে পোশাক পরিধান করলেও, উপরের অংশে এরা তেমন কিছু পরিধান করে না। জোন ভিত্তিক করে দেখলে পথে  প্রায় ৬০ টি  করে জারোয়া দেখা যায়৷ মানুষ এদের অবমূল্যায়ণ করায় সরকার সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এদের ভাষা জারোয়া। এদের খাদ্য সাগরের মাছ, মধু, শূকর৷ এরা আফ্রিকারজাতির অন্তর্গত৷। এরা একধরনের যাযাবর জাতি। এরা পূর্বে বিষ দেওয়া তীর দিয়ে মানুষকে হত্যা করতো। কিন্তু সরকার যখন এদের জনজাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে, তখন সাধারণের থেকে এদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে যায়। 
সামা বাজাও, এদের দেখতে পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ও ফিলিপাইন দেশে। এরা সামুদ্রিক জলেই অভিযোজিত।  এরা মাছ ধরাকেই পেশা হিসাবে বহন করে।  এদের কাছে দিন, সময় জানার কোনো উপাদান নেই। জীবনের সবটুকু আনন্দ, বেদনা জুড়ে আছে সমুদ্র৷ এরা যূথবদ্ধ। এরা আধুনিক নয়। কিছু সময়ে এরা সমুদ্রের বাইরে আসে। তবে ব্যবসা বলতে এরা সমুদ্রের জিনিস বিক্রি করে। এরা ৫ মিনিটেরও বেশী সময় ধরে জলের নীচে থাকতে পারে। সাধারণীরা এইগুলি পারেন না৷ বিজ্ঞানীরা বলেন যে এদের শরীরে প্রসারিত স্লিং রয়েছে। তাদের শরীরে হার্ট ও মস্তিস্কে রক্ত  বিভাজিত হয় বিশেষ অঙ্গ গুলিতে। অভ্যাসে এরা সাধারণের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ গঠনপ্রকৃতি ও রক্ত তঞ্চনের দিক থেকে এদের শরীরের ইন্টারর্নাল ক্রিয়া  স্বাভাবিকের থেকে একটু আলাদা৷ 

অ্যাসারো ট্রাইন, এরা পাপুয়া নিউগিরিতে বসবাস করে। এরা মাটির মানুষ। এরা গায়ের মধ্যে মাটি মেখে থাকে৷ এরা শত্রু থেকে রক্ষা পেতে মাটির মুখোশ পরিধান করে। এরা মনে করে, এইরূপ মাটির মুখোশের মধ্যে কোনোরকম বিষ রয়েছে, যা এদেরকে ভূত প্রেত, জন্তু জানোয়ার থেকে রক্ষা করবে৷ এদের সনাক্তকরণ করা খুব মুশকিল। এদের একটি উৎসব হয় ইস্টান আইল্যাণ্ডের দিকে৷ যেখানে এরা মুখোশ ধারণ করে৷ এই মুখোশ নিজেরাই তৈরি করে৷ 

এবার আসি ন্যানেটস পিপলদের কথায়৷ এরা শীতল বায়ুপ্রবাহবিশেষ বরফাবৃত স্থানে থাকে৷ এরা গরম কালে মশার মধ্যে কঠোর জীবনযাপন করে৷ এদের ঘরগুলি হয় লাঠি দিয়ে তৈরি। ঘরগুলিকে দেখতে অনেকটা বেসক্যাম্পের মতো। এরা এই ঘর তৈরি করতে ৩০ মিনিটে সময় ব্যয় করে। এগুলি হলো তাদের কাছে নিখুঁত বিকল্প৷ এরা এক জায়গায় দুই থেকে তিনদিনের বেশী থাকে না৷ কেবলমাত্র পশুদের খাদ্য যোগান দিতে এরা বাসস্থান পরিবর্তন করে৷ এরা পরিবারের প্রত্যেককে খুব সম্মান করে৷ দূর্গম পাহাড়, পর্বত, প্রকৃতি সম্পর্কে এরা খুব ওয়াকিবহাল ।  তাই এরা দলচ্যুত হয় না। এদের জীবনযাপন সত্যিই আমাদের ভাবিয়ে তোলে।

দ্য ডগন হলো আরো এক উপজাতি।  থাইল্যান্ডস অফ ব্যান্ডি আগারা এদের বাসস্থান ; এরা প্রায় সংখ্যায় ৩০০০। এরা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে  যুক্ত৷ এরা কঠিনতম স্থানে বসবাস করে৷ গ্রামগুলি প্রাচীন ঐতিহ্যসম্বলিত বিষয়কে মূলক করেই গড়ে উঠেছে।এরা নিষাধ নদীর উপত্যকায় বসবাস করে৷ বিজ্ঞানীদের মতে৷ মিশরের বহু সময় ধরে এরা রয়েছে। এরা বহুদিন ধরে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে। এদের সম্পর্কে বহু পৌরাণিক বিষয় আছে। এদের দেবতার নাম আমির। এদের ইতিহাস বলে যে এরা বিভিন্ন বীজ চাষ করতো। এরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে, কিন্তু তার প্রমাণ নেই। পৌরাণিক ভিত্তিকে এরা যে লুক্কায়িত, তা কিন্তু কেবলমাত্র আনুমানিক ; প্রমান্য দলিলের অভাবে এদের তথ্য  আজও অধরাতেই বিদ্যমান। 

এবার আসি হামার ইথিওপিয়া নিয়ে। এরা আফ্রিকার গভীর  জঙ্গলে অনান্য উপজাতি থেকে বেশী পরিমাণে  বসবাস করে৷ তাদের মোট জনসংখ্যা ৪৫০০০ এর কাছাকাছি। ইথিওপিয়ার কেনিয়া বর্ডারের কাছাকাছি এদের প্রধান বসতি। এই জাতির রীতি রেওয়াজ অন্যরকম। এদের ছেলেরা যদি প্রথা মেনে ষাঁড়ের উপর দিয়ে যেতে পারতো তবে এরা জীবন সঙ্গিনী খোঁজার উপযুক্ত ধরা হয়। একইরকম ভাবে বাছাই করা নারীরা ধরে ধরে নিজেদের উপর চাবুক মারা করায়। এইখানে প্রথা হলো কেউ আঘাত খেয়ে মুখের আওয়াজ করতে পারবে না৷। এইভাবে আগামী প্রজন্ম নিজেদের  জীবনসঙ্গিনী বাছাই করে৷ 

জিরাওয়াস বা জারাওয়াস, এরা আন্দামানের বসবাসকারী চার উপজাতির মধ্যে একটি। এদের প্রধান কাজ হলো খাদ্য জোগাড় করা ও শিকার করা। তাদের জনসংখ্যা প্রায় ৪০০ কাছাকাছি। তারা তীর ও কামানের সহযোগিতা কাঁকড়া, শূকর, বন্য প্রাণীর শিকার করতে পটু৷ এরা গান বাজনা পছন্দ করে। এরা শহর অঞ্চল থেকে একটু দূরে থাকতে পছন্দ করে। এদের এই সুখের নীড়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে গ্রান্ট রোড। এদের সহজ জীবনে শহুরে মানুষেরা একটু বেশী দখল দিতে শুরু করেছে। এর  শহর অঞ্চলের মানুষেরা এখানে ঘুরতে এসে এদের সাথে পশুর মতো আচার আচরণ করে। আর শহুরে বাবুরা এদের মেয়েদের উপর অন্যায় আচরণ করে থাকে৷ আর এই কারণে এই উপজাতিদের মধ্যে অনেক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সরকার তাই এদের সহজ জীবনের দখল দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। 

আরোরিয়স হলো সাউথ আফ্রিকার এক দল উপজাতি। ভূমিরক্ষণের অভাবে এই উপজাতির ভূমি প্রায় হারিয়ে যাবার জোগাড়৷ এই জাতির এক বহুল প্রচলিত রীতি আছে। এদের নিজের মানুষ কেউ মাটিতে মারা গেলে এরা অশুভ মনে করে৷ তাই মৃত্যুর আগে এরা জ্যান্ত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে দেয়। 
এটি ভয়াবহ হলেও এটাই এদের রীতি ও সংস্কার৷ 

চেনচুস , অন্ধপ্রদেশের নাল্লামালাই জঙ্গলে বসবাস করে এই উপজাতি৷ এই উপজাতির মানুষের শহরাঞ্চল, পয়সা, বাজার সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখে না।  এরা একটা ছোট্ট জায়গায় কিছু শাক সবজি আর শিকারী নিয়েই,  অরন্য নির্ভর হয়ে বেঁচে থাকে।  প্রথমদিকে তারা বড়ো বড়ো প্রাণী শিকারের জন্য বেছে নিতো, কিন্তু বর্তমানে তারা ছোটো ছোটো প্রাণী হত্যা করার পথ বেছে নিয়েছে৷ তারা বর্তমানে যে স্থানটিতে বসবাস করছেন, কিছুদিন আগে সরকার সে স্থানটিকে "Tiger Reserve Forest " হিসাবে চিহ্নিত করেছে৷ কিন্তু বর্তমানে এরা বলেন যে, তাদের কোনো অর্থ সাহায্য চাই না, বরং তারা যেমন আছে,তেমন ভাবেই বাঁচতে চায়। 

"দ্য গ্রেট আন্দাম্যানিস " উপজাতি আগে ১০,০০০ মতো ছিলো, কিন্তু বর্তমানে ৬০ এ গিয়ে ঠেকেছে৷ ভারত যখন ইংরেজদের অধীনে ছিলো, তখন এরা অনেকবার ভয় দেখিয়ে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা করে৷ ব্রিটিশদের আমলে জেলে যদি  কোনো কয়েদিদের কালাপানি শাস্তি দেওয়া হতো, তারা পালানোর সুযোগ পেলেই সোজা এই আন্দাম্যানিসদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিতো৷ ব্রিটিশ দের সাথে যুদ্ধে এরা বেশ কিছু মারা গেলে, বর্তমানে এরা নিজেদের মধ্য ছেড়ে শহর অঞ্চলের মানুষদের সরাসরি গ্রহণ করে নিয়েছে৷ এমনকি এরা শহর অঞ্চলের মানুষদের সাথেও বর্তমানে বিবাহ করছে৷ 

ফিলিসিয়ারস,এই উপজাতির মানুষেরা   আলাদা মানুষ, বিলুপ্তপ্রায় মানুষ আর অ্যারো মানুষ হিসাবে চিহ্নিত৷ এর তীর চালনা ও আক্রমণের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে৷ ব্রাজিলে একবার তাদের ছবি তোলা হয়৷ এরা সঙ্গে সঙ্গে হেলকপ্টার দেখে তীর ছুঁড়তে আরম্ভ করে৷ এরা নিজেদের স্থানে কাউকে আসতে দেয় না। এখানে সরকার মনে করে যে, অপরাধপ্রবণ মানুষগুলো যেন কোনো ভাবেই এদের সাথে হাতে হাত না মিলিয়ে অঘটন ঘটিয়ে ফেলে, তবে সেটা হবে অর্বাচীন কাজ৷ 

এবার আসি রুক পিপলদের কথায়। ভিয়েতনামের এই আদিবাসী মানুষগুলো থাকার জন্য গুহা ব্যবহার করে থাকে৷ গুহাকে ভিয়েতনামে রুক বলা হয়ে থাকে, আর এই গুহায় থাকে বলে তারা রুক পিপল নামে পরিচিত৷ ভিয়েতনামের জঙ্গলে এদের বসবাসের স্থল৷ ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় সেনারা এদের প্রথম দেখতে পায়।  তাদের সমাজ অনেকটাই বড়ো৷ এদের প্রথা অনুযায়ী যাদের বাঘ,সিংহ, সাপ আক্রমণ করে তারা তাদের সমাজে থাকার উপযুক্ত নয়৷ তাই তাদের নিজের সমাজ ছাড়িয়ে বহুদূর গভীর অরণ্যে থাকতে হতো। এইসময় তারা তাদের কোনো আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারবে না৷ এই রীতি তাদের পূর্বপুরুষদের এবং তারা এটাই মেনে চলতো। এরা দেবতার উপর বিশ্বাসী। জঙ্গলই তাদের কাছে শ্রেয়৷ 

আফ্রিকার কালহারীর বুশম্যান উপজাতিদের বিস্ময়কর জীবন যাপন অতুলনীয়। এরা দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, সোয়াজিল্যাণ্ড, বতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং অ্যাঙ্গোলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এরা বসবাস করে৷ তাই খই খই জাতির সাথে সম্পৃক্ত। এরা অতি অল্প সময়ে আসা জল কে সংগ্রহ করে সারাবছর ধরে ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলে৷ এরা খরার মাসে বালির নীচের গর্ত করে  জল সংগ্রহ করে উট পাখির  খালি ডিমে তা সঞ্চয় করে রাখে৷ এরপর ব্যবহারের পর আবার তা শুষ্ক বালুর নিচে রেখে যায়৷ এদের নিজেদের জীবনরক্ষাকারী জ্ঞান শিশুদের মধ্যে গান, নাচ, গল্পের মাধ্যমে দিয়ে যায়৷ শিশুরা ছোটো বেলা থেকে মারাত্মক প্রাণী থেকে বাঁচার উপায় বড়োদের কাছে শেখে৷ এদের শিশুরা উদ্দম নৃত্য, খেলা ও প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে৷ এই সমাজের মহিলারা উচ্চ সম্মান পায়। তারাই গৃহকর্তী হিসাবে মর্যাদা পায়৷ তারা জল সংগ্রহ, খাদ্য সংগ্রহ, এমনকি শিকারেও অংশগ্রহণ করে৷ প্রকৃতির সাথে লড়াই, লাঠি ছোঁড়া এইগুলি শেখানো হয়৷ শিকারের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে গোপন আস্তানায় বসবাস করতে হয়৷ টিয়াম ফিডিয়া গোত্রের গোবরে পোকা থেকে তৈরি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিষ, তীরের অগ্রভাগে লাগিয়ে তারা শিকারকে আঘাত করে। তারপর সেই শিকারকে নিজেদের কব্জাগ্রস্থ করতে প্রায় একদিন সময় লাগে৷ তবে শিকারীর মৃত্যু অবশম্ভাবী। ভোঁদর  ইন্টিলো,  বাঁদর, এদের প্রিয় খাদ্যতালিকা। 

উপজাতি এখনও বাকি রয়ে গেলো। খাতায় পাতায় র‍য়ে গেলো বহু কিছুই। তবু ইতিহাস ছুঁয়ে যাওয়া শব্দকরণ। নতুন কিছুর আশায় আবারো অন্য একদিন। 
(তথ্যসূত্র - ইন্টারনেট, 
উপজাতি বিষয়ক গবেষক বই সমূহ।) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours