রমা চক্রবর্তী, শিক্ষিকা, আবৃত্তিকার ও ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
     
              ভারতবর্ষ নয় নয় করে ৭০ বছর স্বাধীনতা তো কবেই পেয়েছে তা বোধ হয় আমরা ভুলতে বসেছি| তার আগে ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের পদানত ছিলাম| কত তরতাজা প্রাণ বুক পেতে দিয়েছে বুলেটের সামনে| শত শত যুবক প্রাণ দিয়েছে দেশের জন্য| শত শত মায়ের বুক খালি হয়েছে দেশের জন্য| তবু তারা হেরে যায়নি,স্বাধীন দেশ গড়বে বলে, স্বাধীন দেশ দেখবে বলে সমাজ-সংসার তুচ্ছ করে জীবন বাজি রেখেছিল|
                কিন্তু আমরা এ কোন্ স্বাধীন ভারতবর্ষ দেখছি! যেখানে এখনও অনেক অসহায় মানুষ দু-বেলা দু-মুঠো ভাত পায় না| হয়তো একবেলা আধপেটা খেয়ে জীবন কাটায়| সরকারী সাহায্য হয়তো কখনও কখনও গিয়ে পৌঁছয় আবার কখনও তাও যায় না|
               প্রতিনিয়ত মানুষ সংগ্রাম করেই চলেছে| কোথাও রাজনৈতিক রঙের সংঘর্ষ,কখনও খাবারের জন্য সংগ্রাম(জীবন যুদ্ধ),কখনও রোগের সাথে সংগ্রাম। কথায় বলে ন্যূনতম খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষার প্রয়োজন | কিন্তু যে মানুষগুলো খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও  দু-বেলা দু-মুঠো অন্ন জোগাড় করতে পারে না তাদের কাছে শিক্ষাটা একটা বাহুল্যতা|
                যে ভারতবর্ষের যুব সমাজ একদিন হাতে বন্দুক তুলেছিল,হাতিয়ার তুলেছিল দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য,দেশমাতার শৃঙ্খলমুক্ত করার জন্য আজ সেই দেশেরই যুব সমাজ হাতে হাতিয়ার তুলেছে অসামাজিক কাজের জন্য,তারা বিভিন্ন নেশায় ডুবে যাচ্ছে | যে কোনো মূহুর্তে ৫-১০ জন যুবক একত্রিত হয়ে ছুরি,বন্দুক,চাকু নিয়ে অসামাজিক কাজ (চুরি, খুন,ডাকাতি,ধর্ষণ) করতে উদ্যত হয়ে উঠছে | খুব কম সংখ্যক যুবক আছে যারা শুধু নিজের Carrier নিয়ে ব্যস্ত | প্রতি আধঘন্টায় আমাদের দেশে কোথাও না কোথাও ধর্ষণ ঘটছে|
            কেন এমনটা হচ্ছে বন্ধু ? এমনটা তো চাননি নেতাজী সুভাষ,মাস্টারদা,বিনয়-বাদল-দিনেশ,ক্ষুদিরাম,ভগৎ সিং প্রমুখ|
           স্বাধীন ভারতবর্ষের কিছু মানুষ অতন্দ্র প্রহরায় সারাদিনরাত পাহারা দিচ্ছেন আমাদের ভালোর জন্য,আমাদের সুরক্ষার জন্য অথচ প্রতিদিন তাদের মধ্যে কেউ না কেউ শহীদ হচ্ছেন,মায়ের বুক খালি করে চলে যাচ্ছেন তাদের খবর কজনই বা রাখে ভারতবর্ষের মানুষ|
       কত মানুষ আস্তাকুঁড়ের খাবার তুলে খাচ্ছে| এখনও আমাদের দেখতে হয় সাদা থান পরা দাদু-দিদিমারা রাস্তায় বসে অ্যালুমিনিয়ামের থালা-বাটি হাতে ভিক্ষে করছে| শিশু শ্রম চলছে আমাদের সম্মুখে-আড়ালে| শিশুরা পথে পথে ভিক্ষা করছে|
        বন্ধু তাদের দিকে একটু দেখুন | আমার-আপনার আশে পাশে কত প্রতিবেশী বয়স্ক মানুষ খেতে পেল কিনা,ওষুধ জোগাড় করতে পারল কিনা একটু এগিয়ে দেখুন না,বন্ধু|
        বন্ধু! ভালোবাসতে শিখুন,যুদ্ধ দিয় সব কিছু হয় না,হিংসা দিয়ে প্রতিবাদ করা যায় না|
        ভালোবাসুন, নিজের- পাশের সবাইকে ভালোবাসুন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours