প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
 
শকুনির অন্তরে গভীর ক্ষত বিরাজমান।  ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ন্যায়বিচার তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু গান্ধারীর অশ্রু বিগলিত অন্তঃস্থলের ক্ষত যেন নিত্য পথভ্রষ্ট হতে আহ্বান করে। এরই মধ্যে পাণ্ডুর মৃত্যু যেন বিনা মেঘে বাজ। শকুনি দেখলেন ধার্তরাষ্ট্রদের অত্যাচারী, দুর্মুখ ও অসৎ সকলেই দুর্যোধনের খুব প্রিয়৷ তবে শকুনির মতো মানুষের স্মৃতিতেও  ভেসে ওঠে পাণ্ডুর একান্ত সুখকর মুহুর্ত। পাণ্ডু জানিয়েছিলেন গান্ধারী রাণী হবে৷ এমনকি ধৃতরাষ্ট্রের কঠিন বচনে হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন শকুনি। সে ছিলো অনেক উন্নত।

 যুধিষ্ঠির সেদিন মাতুল বলে প্রণাম করলে, তার মধুর বচনে শকুনি আপ্লুত হয়েছেন৷ শকুনি ভীষ্মের সাথে প্রতিজ্ঞায় কুলবিনাশে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। ধার্তরাষ্ট্রদের সে কুশিক্ষায় মাতিয়েছে, কিন্তু পাণ্ডুর সন্তানেরা তা থেকে মুক্ত। শকুনি সেদিন কেঁদেছিলেন, আহা! পিতৃ-মাতৃহীন নকুল সহদেব, খাদ্যরসিক ভীম,কৃশ, অর্জুন..  হৃদয় দ্রব হয়েছে বার বার৷ মনে পড়ে ঊলূক আর বৃকের কথা। 

এবার ক্ষমতাশীল বিচার হবে অপশাসনে, নতুন কাহিনি লিখবে ভারতবর্ষ। এতোদিন দেখে শকুনি বুঝলেন, এক উপযুক্ত পথ হলো ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব।ভীষ্ম দেখবেন ধ্বংস ; আভ্যন্তরীণ সংঘাত ই তো শেষ করে মহৎ এর  সংকল্প। কীটাক্রান্ত ফল হয়ে যে সৌভ্রাত্ব, তার স্নেহপ্রাচীরে তীরবিদ্ধ হোক অদৃশ্য ভবিষ্যৎ।  
স্নেহাশিস ধন্য দূর্যোধনকে কাজে লাগাতে শকুনি এবার তৎপর। তিনি বললেন, দুর্যোধনেরই পরম আদরের ও বিশ্বাসের শকুনি কে কি দুর্যোধন পাণ্ডু হত্যার দায়ী করতে পারে! কারণ বিশ্বাসের খুঁটিতে এইভাবেই তো ভালোবাসার ভাঁড় আস্বাদ করে, উচ্ছিষ্টকে শুধরে নেওয়ার দিন, ভরসা দুর্যোধন আজ৷ খাদ্যে বিষক্রিয়া করে নিজেরই নদীবক্ষে পীড়া দেবার কাজ শকুনি ছাড়া কেই বা করতে পারে!  

শকুনি বুঝলেন অসূয়া, দ্বেষের বশবর্তী হয়ে তার কাজ দিনরাত কৌরবদের প্রশংসা করা৷ এদিকে খাদ্যে যে বিষ দেওয়া হয়েছে ভীমকে, তা বিদুর ধরে ফেললেন। শকুনি দেখলেন যে দুর্যোধনের উপর কেবল এটা একটা ভ্রাতৃদ্বন্দ্বের ছাপ কেবল নয়, সাথে করে এটা ধৃতরাষ্ট্রের কাছে সম্যক সচেতনে পুত্রস্নেহের অন্ধত্ব আরোপ,  কম কিসের?  আঘাতের হেতু যখন যবনিকা টেনে দেয়, তখন মৈত্রী শব্দটা নিষ্প্রয়োজন৷ অবাধ স্বেচ্ছাচারিতার বিরীধ হবেই ; পাপের পাত্র পূর্ণ হলে, শান্তি নির্ধারণ অমূলক। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours