মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:

সাজতে কে না ভালোবাসে। যে যেমনটি পারুক।
ক্লিওপেট্রা নাকি দুধে ভেজানো আগের রাতের তুলে আনা টাটকা মুক্তো খেতেন রূপচর্চার জন্য। কালো হয়েও আলো করতেন চারদিক।  স্নান করতেন দুধে। নারী মানেই থাকে রূপচর্চার কিছু পর্ব। তল
মেয়ে হয়েছি আর সাজব না? তা কি হয়? লকডাউনের বাজারে পুরোনো স্মৃতিকে মারি টান ছবি আসছে কত সেই টানে।
"লালঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না চাই তার লালফিতে চিরুনী আর আয়না।"
কাকাতুয়াও তো দেখি কম যায় না। তাহলে আমি বাদ থাকি কেন।
ঠাকুমার বাড়িতে ছিল বিরাট কাঠের আয়না। সে আয়না ছিল ঝুলন্ত তাকে  এদিক ওদিক করা যেত।কালো কাঠের ড্রয়ার দুপাশে তার সোনালী হাতল।ড্রয়ারে রাখা খোঁপার কাঁটা সিঁদুর কৌটো আরো কত কি।  সামনে এক বড় ড্রয়ার। টেবিলে থাকত কুরুশের কাজের টেবিলক্লথ।চারপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ড্রেসিং টেবিলের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল খুব। একেঁবেঁকে নিজেকে দেখতাম।কুরুশের কাজের ঝালর দিয়ে ঢাকা থাকত সে আয়না।রাতে আয়নাতে মুখ দেখতে নেই কলঙ্ক হয়। ঠাকুমার মানা ছিল।  এখন তো সবার আর আমারও ব্যাগেই আয়না ঘুরছে। দিনে রাতে মুখ যখন খুশী মুখ  দেখছি। নিয়মের জাল কেটেছি কিন্তু কোথাও যেন মনে রয়ে গেছে সেই নিষেধাজ্ঞা যা মনে পড়ে ঠিক।
ঠাকুমা দিদার সময় নাকি আফগান স্নো ছিল। আমি দেখেছি ছোটবেলায় ইমামী না হিমানী শ্নো সাদা রঙের কৌটোতে।  মুখে লাগিয়ে মুখ সাদা করে ফেলতাম।আর  বকা খেতাম। বাচ্চারা নাকি ওসব মুখে লাগায় না। পেসাদী পিসি বাটনা বাটতে আসত ঠাকুমার বাড়ি। মজা করে বলত সোনো পাউডার মেখে হেমুমালিনী হবে মেয়ে।  কিউটি পাউডার কিউটি সেন্ট। ভেলভেটের নরম বাক্সতে শোয়ানো থাকত আদরে সে সেন্টের শিশি। বারবার খুলে দেখতাম।কি ভালো লাগত।বডি স্প্রের হুজ্জুতি ছিল না। আমার ছিল কুমকুম টিপ। শৃংগারের কুমকুম। লাল মেরুন। তাতে কাঠি থাকত।মা টিপ পরিয়ে দিত। কি সুন্দর গন্ধ ছিল ঐ কুমকুমের। আবার একটা কৌটো ছিল লাল নীল সবুজ হলুদ কত রঙের গোলা  টিপ। কাঠি দিয়ে পরতাম।
চার্মিস ক্রিম আর নিভিয়া আর তুহিনা ছিল শীতকালে।
বসন্তমালতীর হালকা সুবাস ভরে রাখত সারাদিন।
এখন ডে ক্রিম নাইট ক্রিম  অ্যান্টিএজিং ক্রিম আরো কত ক্রিম বাজার দাপাচ্ছে। আমিও এদের জালে ধরা পড়েছি। ক্লিনজিং টোনিং ময়েশ্চারাইজিং সানস্ক্রিনের চক্রব্যূহতে ঘুরছি সুন্দর থাকার অদম্য প্রচেষ্টাতে। আর
চোখে ভাসছে দিদা ধবধবে ফরসা রং আঁচলে বাঁধা চাবির গোছা পানে লাল দুটো ঠোঁট। কাঁচাপাকা খোলাচুল একপিঠ। হাতে রুদ্রাক্ষমালা নিয়ে জপ করছে। তাঁর  মুখের জ্যোতিতে হার মানছে আমার ড্রেসিংটেবিল ভরা ক্রিমের কৌটোর দাপট।
আমি সীমানাতে দাঁড়িয়ে তালমেলাতে চাইছি হচ্ছে না কিছুতেই না। কিছুতেই না।
একাল সেকালের মাঝে আমি দাঁড়িয়ে  একাল বলছে সাজনা হ্যায় মুঝে সজনা কে লিয়ে সেকাল বলছে "সই ভালো করে বিনোদবেণী বাঁধিয়া দে"।মাঝখানে আমি নিরুত্তর মনে চলছে। মেলবন্ধনের খেলা।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours