আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

মাসাই মারা স্কাই

করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি সমগ্র মানবসমাজ। এরই মাঝে মানুষকে মুক্তি দিতে ও বাড়ি বসে প্রকৃতির স্বাদ এনে দিতে পারে একমাত্র আলোকচিত্রশিল্পীরা। আর তাই দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি) কর্তৃক আয়োজিত ২০২০-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় ৭টি বিভাগে জমা পড়ে প্রায় ৫০০০ ছবি। তারই মধ্যে ল্যান্ডস্কেপস(দৃশ্যপট) বিভাগে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী ছবিটি হল জোশ ফ্র্যাগোজোর 'মাসাই মারা স্কাই'(মাসাইদের আকাশ)।

ফ্র্যাগোজোর ছবিটি আসলে পার্থিব ও অপার্থিব জগতের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। দূরের নীল আকাশ, ঘনিয়ে আসা অদ্ভুত মেঘ ও কমলা আলোর সমাহারে ছবিটি অনবদ্য হয়ে উঠেছে। সঠিক সময়ে সঠিক লেন্সের ব্যবহারে আফ্রিকার একচিলতে আকাশ প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গের একটুকরোর সামিল হয়ে উঠেছে।

'মাসাই মারা স্কাই' ছবিটির নামকরণে 'মাসাই' কথাটি আফ্রিকার এক প্রকারের যোদ্ধা জাতির নাম। মাসাই যোদ্ধারা মূলত সিংহ শিকারে পারদর্শী হয়। তবে বন্দুক বা রাইফেল না, শুধুমাত্র বল্লম দিয়ে অসীম বিক্রমের সাথে এরা এই কাজ করে। মাসাইদের মধ্যে মূলত যোদ্ধা হতে গেলে বিষ বা কোনো আলাদা অস্ত্র ছাড়া, শুধু বল্লম দিয়ে সিংহ মারতে হয়। আফ্রিকার গর্ব এই আদি অধিবাসীরা, আর তাই আফ্রিকার আকাশ বোঝাতে গেলে মাসাইদের আকাশও বলা চলে।
আফ্রিকার মাইলের পর মাইল জনহীন প্রান্তরে দেখা মেলে শ'য়ে শ'য়ে ভিন্ন ভিন্ন রকমের জীবজন্তুর। কিন্তু এই ছবিটি আফ্রিকার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুললেও ছবিতে নেই কোনো পশুর উপস্থিতি, এবং এই গুণটিই ছবিটিকে অন্যান্য আফ্রিকার ছবির থেকে আলাদা করে। মূলত আফ্রিকার ছবি মানেই যে সিংহের গর্জন বা হাতির বিশালকায় দেহ, সেই প্রথাগত ভাবনা থেকে বেরিয়ে এই ছবি তোলা হয়েছে। আফ্রিকার ধু-ধু প্রান্তর বা গহীন মেঘও যে আফ্রিকাকে চিত্রিত করতে পারে যথার্থভাবে, তা অন্তত স্পষ্ট 'মাসাই মারা স্কাই' থেকে।

জোশ ফ্র্যাগোজোর ছবিতে রঙের সমাহার ও রঙের বৈপরীত্য অতি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। গাঢ় কাল থেকে কালচে নীল মেঘ ও কমলা আলোর প্রতিফলনে ঢেকে যাওয়া রামধনু, ছবির প্রত্যেক বৈশিষ্ট্য ছবিটিকে করে তুলেছে নিখুঁত ও অন্যান্য ছবির থেকে আলাদা। সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মত রামধনুটিও যেন সবে জন্মলাভ করেছে, কিন্তু এমতাবস্থায় মেঘের আধিপত্যে রামধনুটি যেন অস্তিত্ব সংকটে।

'মাসাই মারা স্কাই' অতি নিঁখুতভাবে দেখিয়ে দেয় যে প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা ক্ষুদ্র ও অসহায়। 'রুল অফ থার্ড' মেনে ছবিটির প্রথম ভাগেই একটি অতি ক্ষুদ্র গাছ দেখা যায়, ভালো করে লক্ষ্য না করলে হয়তো দেখাও যায় না। গাছটি আসলে ছবিতে মেঘেদের বিশালত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। দিগন্তবিস্তৃত তৃণভূমি যেন চেয়ে আছে জলের আশায়। (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট।) 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours