সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

মানব সভ্যতার চরম বা অনিবার্য উন্নতি সেটা কালের নিয়মেই হতে থাকবে, নতুন নতুন ইনভেনশন হতেই থাকবে, কিন্তু কত সময়? কত দ্রুত? তা বিজ্ঞান চেতনার পরিধি ও মেধা শক্তির ও উপাদানের সংমিশ্রণ এর উপর নির্ভর করে। আমরা বোধহয় ইনোভেশন করছি কেবল নিজেদের অর্থাৎ মানুষ কিভাবে মানুষ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করবে? তাই আধুনিক অস্ত্র-হাতিয়ার গোলাগুলি, বোম বারুদ মিসাইল, যুদ্ধ বিমান, পরমাণু অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি আধুনিক ভাবে তৈরী করতে করছি আশেপাশের দেশ গুলির সাথে পাল্লা দিয়ে, তাদের থেকে সুরক্ষিত থাকতে। আর সমস্ত মেধা আর লগ্নি সেদিকেই। হয়তো ভুলেই গেছি প্রকৃতি যে আমাদের থেকে বড় শক্তি তার মাঝেই ললিত পালিত হয় অনেক শত্রু যারা মানুষকেই নিশানা করে তার অবলুপ্তির জন্য, সেদিকে হয়তো আমাদের নজর খুব কম, সেই শত্রু দেশ, জাতি, ধর্ম, গরীব, ধনী কিছুই বোঝে না।
কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস তারই শিক্ষা দিলো, টা বলে কি এর আগে এমন অদৃশ্যমান শত্রুর আক্রমণ কি হয়নি?  বহুবার এই আক্রমণ হয়েছে, আর তার থেকে বাঁচতে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের সফলতা কোন স্তরে? সম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যুগ যুগ ধরে যা বিকাশ হয়েছে তা পিছন দিকে বা ইতিহাসের পাতা দেখলেই বোঝা যায়। 
কিন্তু একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে কতো সময়ের প্রয়োজন আসুন দেখে নিই বিগত ৫০ বছরের পরিসংখ্যান:-

▪️ *মার্স ভাইরাস* 
প্রথম সনাক্ত হয় ২০১২ সালে 
ভ্যাকসিন আবিষ্কার এখনো হয় নি। গবেষণা চলছে
৮ বছরের বেশী সময়কাল ধরে। এই শত্রুকে প্রতিহত করতে আমরা সফল হয়নি।

▪️ *সার্স ভাইরাস* 
প্রথম সনাক্ত হয় ২০০৩ সালে। ১৭ বছর ধরে গবেষণায় এখনো সফল্য অধরা। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের  গবেষণা ক্যানসেলড করা হয়েছে।

▪️ *এইডস* এইচআইভি 
প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৮১ সালে। গত ৩৯ বছর ধরে সফলতা আসেনি। ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার জন্য গবেষণা আজও চলছে। সেই শূন্যতেই দাঁড়িয়ে। 

▪️ *ইবোলা ভাইরাস* 
প্রথম শনাক্ত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। 
ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে ২০১৯ সালে, শনাক্তের প্রায় ৪৩ বছর পর। 

▪️ *হেপাটাইটিস বি ভাইরাস* 
প্রথম শনাক্ত হয়েছিলো ১৯৬৫ সালে। তার ভ্যাকসিন আবিষ্কার ১৯৮১ সালে ।
১৬ বছর পর। 

▪️ *চিকেনপক্স* 
প্রথম ইনফেকশন ১৯৫৩ সালে, কিন্তু ৪২ বছর পর ১৯৯৫ ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলো।  

▪️ *জিকা ভাইরাস* 
প্রথম ঘটনা সামনে আসে  ১৯৪৭ সালে, ভারতের স্বাধীনতার সময়কালে আজ 
৭৩ বছর গড়িয়ে গেছে, ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি। 

▪️ *কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস)* 
প্রথম ২০১৯ (ডিসেম্বর) মাসে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয়। প্রায় পাঁচ মাস মৃত্যু মিছিল অব্যহত পারমাণবিক, রাসায়নিক, অর্থনৈতিক  শক্তিধর দেশ গুলি আজ নতজানু, এই শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে একটু আশার আলো এখনো পাইনি, পারেনি পরমাণু বোম দিয়ে ধ্বংস করতে। এখনও সেই বিজয় উল্লাস করতে পারিনি। কতদিনে হবে তাও জানিনা।  আজ সীমান্তের নেই একে-৪৭, আকাশে মিগ ফাইটার নেই, নেই বোফোর্স কামান বা অগ্নী, বায়ু, তেজস্ব এর মত মিসাইল। সবাই যেন এর থেকে বাঁচতে চাইছে, মানবতা বাঁচতে চাইছে। 
গবেষকদের মতে পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আজ অবধি যতো ভাইরাস আক্রমন করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ভাইরাস এই (Covid 19) বা করোনা ভাইরাস। যা পরিসংখ্যান তাতে একটি ভ্যাকসিন তৈরী করতে সচরাচর ৮ থেকে ২০ বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু আর সেখানে কিছু সোস্যাল মিডিয়া বিজ্ঞানীরা কয়েক ঘন্টা পরপর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে বলে নিউজফিড করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেই চলেছেন। এই বিভ্রান্তির ফলে হতে পারে বড় বিপদ। ভারতবর্ষ এখন ৩য় স্টেজ এ অবস্থান করছে।অতএব কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে।এখনই যদি সতর্কিতভাবে  সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা না হয়,সতর্কীকরণ বিষয়গুলি যদি না পালন করতে পারি তাহলে ৪র্থ স্টেজে পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না। তখন চারিদিকে থাকবে শুধু হাহাকার, লাশ নিয়ে যাওয়ার কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসুন সচেতন হই সকলকে সচেতন করতে করার বাড়তি উদ্যোগ গ্রহন করুন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখি,পরিবার ও দেশকে বাঁচাই।
সব যুদ্ধই বিজয় চাই
                বিজয় গাঁথার গান,
মানুষ  মানুষ শত্রু যখন
                গরল করছি পান।
প্রকৃতি আজ প্রলয় রূপে
                ফিরুক সবার হুঁশ, 
বাঁচিয়ে রাখি বিশ্ব মাঝে
                প্রকৃতি আর মানুষ। 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours