দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

এই কোরোনার সময় আপনাদের মত আমরাও ঘরে বন্দি। সুপার মার্কেট খোলা, কয়েকটা ফ্যাক্টরি খোলা, ওষুধের দোকান খোলা, কিন্তু ডাক্তার নেই চেম্বারে। ফোন এ ডাক্তার কথা শোনে বা হাসপাতাল। আপনাদের আগেই বলেছি যে কানাডাতে আমাদের মেডিকেল ফ্রি। সর্দ্দি হলেও ফ্রি আবার বাইপাস হলেও ফ্রি। সিনিয়র নাগরিকদের জন্য ওষুধ ২ ডলারে। তার দশ হাজার ডলার দাম  হলেও আমাদের দিতে হবে দু ডলার। আবার যদি আপনি প্রতিবন্ধী হন তবে আপনার জন্য স্পেশাল বাস আসবে আপনার বাড়িতে আপনাকে পার্টিতে বা কোথাও নিয়ে যেতে। আবার ফেরত দিয়ে যাবে দু ডলারে। আগে থেকে বুক করতে হবে। না সেই বাসে করে আপনি দোকান করতে যেতে পারবেন না। আর প্রাইভেসির কথা আপনাদের আগেই বলেছি। ছেলে মেয়েরা আঠারোর পর স্বাধীন।তারা বাড়িতেই থাকতে চায়না। ভুলে যান আপনার উপদেশ দেওয়া বা কিছু বলার। কাজ পাওয়া যায়। ডাক্তার আর উকিলেরা সব চেয়ে বেশি রোজকার করে এই দেশে। ওদের আয় বছরে $২০০,০০০ থেকে $৩০০ হাজার ডলার।  একজন ব্যাংকের কর্মচারী স্কুল পাশ মাইনে পায় $২৫০০ ডলার থেকে $৪০০০ হাজার ডলার মাসে।অভিজ্ঞতা অনুযায়ী। ব্যাংকের ম্যানেজার পায় প্রায় $৭০, ৮০ ০০০ ডলার বছরে। স্কুল এর শিক্ষক পান $৪০,০০০ হাজার থেকে $৬০,০০০ বছরে। আবার রাস্তার ময়লা তোলার কর্মচারী পায় $চল্লিশ থেকে $৫০,০০০ হাজার বছরে। একজন পুলিশ  কনস্টেবল পায় প্রায় $৭০ থেকে $১০০ ,০০০ ডলার। সপ্তাহে চল্লিশ ঘন্টা কাজ। দুদিন ছুটি। চল্লিশ ঘন্টার ওপরে হলে ডবল ডলার। এখানকার পুলিশের সব দেশের মতো অনেক্ষন কাজ করে। কিন্তু চল্লিশ ঘন্টার পর থেকে ওভার টাইম বা ছুটি পায় । নাগরিকের অধিকার নিয়ে আপনাদের কিছু কথা বলেছি। 
শুনুন এদের গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা।দেশের মতো  বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে না বিয়ে করলে নাগরিকের জেল হয় ধর্ষণের জন্য। কি হাস্যকর আইন? প্রতিশ্রুতি দিতেই পারে আবার কিছুদিন পর মতের অমিল হলে ছাড়াছাড়ি হতেই পারে। এক কাজ করা যাক সব কটা ডিভোর্স করা স্বামীকে জেলে দিলেই হয়? তারা সবাই সারা জীবন ভাত কাপড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এতো বড় ভন্ড সমাজ কোথাও পাওয়া যাবে না। একটা মজার ব্যাপার শুনুন। গঙ্গার পাড় কার ? নাগরিকের। সেই গঙ্গার পারে নাগরিকেরা গাড়ির মধ্য মিলিত হয়। সারি সারি গাড়ি লেকের পারে। পুলিশ আসে , উঁকি মেরে দেখে যে দুজনেই নগ্ন হয়ে সঙ্গমে লিপ্ত। সরি বলে পুলিশ সরে হাসে মৃদু হেসে। গাড়িটা নাগরিকের কাজেই চার দেওয়ালের মধ্য নাগরিক কি করছে তার খবরদারি করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। ভাবতে পারেন ? না জেঠ্যামশাই হয়ে আপনি আমার স্বাধীনতা রুখবেন? তবে যদি নগ্ন হয়ে গাড়ি থেকে নামেন সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন পাবলিক প্লেসে নগ্ন হবার জন্য খোলাখুলি ভাবে। ক্রেতা সুরক্ষা সাংঘাতিক ভাবে মেনে চলা হয়। যে কোনো জিনিস আপনি ফেরত দিয়ে পারবেন যদি রশিদ থাকলে আর ব্যবহার না করে থাকেন। বা খারাপ মাল হলে? কোন প্রশ্ন দোকান করে না। ভারতীয় দোকান চালায় গুজরাটি পাঞ্জাবিরা । দেশের সবচেয়ে সেরা জিনিস আমরা পেয়ে থাকি। ভেজালের কোনো গল্প নেই। একবার পাপড়ে চুল পাওয়া গিয়েছিলো ।  প্যাটেল ভাই আদালতে জানায় যে পাঁপড় ভারতে মেয়েরা বানায়, একটি দুটো চুল পড়তেই পারে। $৫০০০ ডলার ফাইন , দোকান সিল, আর জাজ সাহেব জানালেন যে চুলওয়ালা পাঁপড় তোমরাই দেশে খাও এখানে হবে না। আমার ঘটনা শুনুন। দুমাস আগে আমি প্যান্টালুন থেকে সাত হাজার টাকার কয়েকটা জামা কিনি সুতির বলে। কাউন্টারে টাকা দেওয়ার পর আমি দেখি যে ওগুলোতে পলিয়েস্টার মেশানো সুতির জামা।আমি ফেরত দিয়ে গেলে সে এক বিরাট তর্ক তোলে যে টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না ; আপনি ক্রেডিট স্লিপ নিন। বুঝে দেখুন। তবে আমার সাথে পেরে ওঠেনি। এদেশে থাকার খুব খরচ। যিনি $৩০০০ ডলার বা $২৫০০ ডলার মাইনে মাসে পান তার অবস্থা খুব একটা ভালো হয় না। বাড়ি ভাড়া চলে যায় দু কামরার ফ্ল্যাট আজকাল $১৫০০ থেকে $২০০০ ডলার, এরপর খাওয়া, গাড়ি ভাড়া, দিয়ে আর কিছু একটা থাকেনা। তবে স্ত্রী কাজ করলে একজনের টাকা পুরো জমে, বা নিজের গাড়ি হয় বা বাড়ি করা যায়। খাওয়া খরচ খুব কম। মুরগির পা $৪ ডলার কেজি, দুধ ৪ লিটার $৫ ডলার, মাখন $৬ ডলার কেজি। ডিম এক ডজন $৩ ডলার, আলু ৫ কেজি $৪ ডলার, তেল ৩ লিটার $৫ ডলার, দেশের বিরাট রুই মাছ $৫ ডলার কেজি, ৭/৮ কেজি হয়ে থাকে  আস্ত কিনতে হবে ফ্রোজেন।ইলিশ $৩০ ডলার কেজি বাংলাদেশের বা মিয়ানমারের। পাঁঠার মাংস লেগ $২৫ ডলার কেজি। পর্ক $১০ ডলার কেজি। আর সবজি সব কিছু পেয়ে থাকি। চায়না, ভারত, ক্যারাবিয়ান, মেক্সিকো, আমেরিকা থেকে আসে। খাবার স্বর্গ আমার কাছে কারণ আমি বিদেশী রান্না করি আর খাই। সর্ব্বোভুক। দেশে গেলে শুধু হিন্দু বিফ খাই না। রাস্তার গরু। এখানে গরুদের ফার্মিং করা হয় খাওয়ার জন্য। ছানা , গম সবজি খাওয়ানো হয়। চর্ব্বি যাতে খুব একটা না হয় তার জন্য নানা রকমের ডায়েট দেওয়া হয়। মিউজিক শোনানো হয় যাতে ওদের মেজাজ ভালো থাকে। আগেকার মুনি ঋষিরা খুব চালু ছিলেন। নিজেরা বিফ, পর্ক খেতেন কিন্তু কায়স্থদের খাওয়া বারণ। ভালো থাকুন এই সময়। আমাদের সবার স্ট্রোক হয়েছে। সারা বিশ্বের স্ট্রোক। জীবন পাল্টে গেছে। আজ কৃষ্ণেন্দু এসেছিলো। আমার বড় ছেলে। ঘরে ঢোকেনি। লবিতে কথা বলে ফিরে গেছে। মাকে উপহার দিলো আর আমাকে একটা ব্লেক লেবেল। ঘরে থাকুন। মুভি দেখুন, বই পড়ুন। (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যেঃ প্রতিবেদক। ছবিতে নক্ষত্র সমাবেশে একদম ডান দিকে দাঁড়িয়ে প্রতিবেদক।)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours