আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

নিউ লাইফ ইন আ ডেড ফরেস্ট

করোনা ভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা মানবজাতি। আর এই গৃহবন্দি প্রাণীদের দৌলতে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রকৃতি, অভূতপূর্বভাবে কমেছে দূষণ মাত্রা। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই সময় খুবই কঠিন। আর এই কারণেই দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি(জিডিটি) আয়োজন করে একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। প্রায় ৭টি বিভাগে আলোকচিত্রশিল্পীরা প্রায় ৫০০০ ছবি জমা করেন, যার মধ্যে ৭০ টি ছবি নির্বাচিত হয়। 'প্ল্যান্টস অ্যান্ড ফাঙ্গি' বা 'উদ্ভিদ ও ছত্রাক' বিভাগে প্রথম স্থানের অধিকারী হয় রাডোমির জাকোবুয়োস্কির 'নিউ লাইফ ইন আ ডেড ফরেস্ট'।

আলোকচিত্রটি মূলত একটি বনভূমির গল্প ব্যক্ত করে। নেটিজেনদের মতে, গাছগুলিতে পাতা গজানোর দৃশ্য এটা বুঝিতে দেয় যে মানবজাতি যেভাবে বনভূমি নষ্ট করছে, তা বেড়ে উঠতে সময় লাগবে অনেক। মানুষকে বনভূমির প্রয়োজন সম্বন্ধে জানাতে এই ছবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মত পরিবেশপ্রেমীদের।

ছবিটিকে একঝলক দেখলে মনে হয় শীতকালে পাতা ঝরে যাওয়া মৃতপ্রায় বনভূমির 'ওয়াইড অ্যাঙ্গেল শট' এটি। কিন্ত লক্ষ্য করলে পাতায় মোড়া একটি মাত্র গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ফলে এটি অন্তত বোঝা যায় যে, প্রাণের সঞ্চার এভাবেই হয়, বারে বারে। প্রকৃতি নিজের মত বেড়ে চলে, শত বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও!

প্রকৃতির মাঝে একলা গাছটি যেন চূড়ান্ত আত্মসম্মানের সাথে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ কুয়াশার মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি মৃতপ্রায় গাছকে স্পষ্ট দেখা যায়, যা শিহরণ এনে দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে। জাকোবুয়োস্কির আলোকচিত্রে যেভাবে রঙের একঘেঁয়েমি দেখা যায়, তা ব্যক্ত করে ছবির বিষণ্ণ প্রকৃতিকে।
সমালোচকদের মতে, 'নিউ লাইফ ইন আ ডেড ফরেস্ট' যেভাবে দর্শকদের মনে বনভূমি সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তোলে তা সত্যিই অভূতপূর্ব। অনেকের মতে বনভূমির পাতা ঝরে যাওয়ার পিছনে রয়েছে 'বার্ক বিটল' নামক পোকা যা 'বার্ক' অর্থাৎ গাছের ছালে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে পাইন, ফার, দেবদারু, রডোডেনড্রোনের মত উচ্চ উচ্চতাসম্পন্ন গাছগুলিতে এই বিটলের উৎপাত চোখে পড়ে।

আলোকচিত্রের নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ছবিটির 'উদ্ভিদ ও ছত্রাক' বিভাগে প্রথম হওয়ার রহস্য। করোনা আক্রান্ত সমাজে মানবমনকে নতুন দিশা দেখায় এই একটিমাত্র গাছ। মৃতের ভিড়ে উঁকি দেওয়া ওই একটিমাত্র গাছ জানান দিয়ে যায় যে আশা বাঁচিয়ে রাখবে আমাদের প্রত্যেককে। শুধু দরকার নিজের প্রতি ভালবাসা ও নিজের প্রতি যত্ন।

একটানা নীলাভ কুয়াশার মধ্যে যেভাবে সারি সারি বাদামি গাছগুলির বিন্যাস চোখে পড়ে, তা ছবিটিকে অদ্ভূত সুন্দর করে তোলে। ছবিটিকে উল্লম্বভাবে সমান তিনভাগে ভাগ করে তিনটে গ্রিড ধরে, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ছবির প্রায় মধ্য গ্রিডে অবস্থান করে জীবিত গাছটি। ছবির বিষয়বস্তুকে যেভাবে কেন্দ্রে এনেছে রাডোমির জাকোবুয়োস্কির ক্যামেরা, তা এককথায় অনবদ্য।

আলোকচিত্রটি গৃহীত হয়েছে জার্মানির দক্ষিণ-পূর্বের বায়ার্ন রাজ্যে। বায়ার্নের রাজধানী মিউনিখ। পাহাড় ও জলভাগের মেলবন্ধনে এই বায়ার্ন পর্যটকদের বিখ্যাত। বায়ার্নের পার্বত্য অঞ্চলে নীলচে কুয়াশায় তোলা 'নিউ লাইফ ইন আ ডেড ফরেস্ট' তাই সত্যিই চমকপ্রদ। মানুষকে প্রকৃতির দিকে আকর্ষণের পাশাপাশি মানুষকে প্রকৃতি সম্বন্ধে সচেতন করতেও এই ছবি সমানভাবে সফল। (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours