শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

ব্লাউজ ও পেটিকোট যেন বাঙালিয়ানার একচেটিয়া ব্র্যান্ড। বিশ্ব জুড়ে। অথচ শুনতে অবাক লাগলেও এই দুটোর ঘরানা কিন্তু হাইজ্যাক হয়েছে পাশ্চাত্যের পোষাকি বাহার থেকে।

আমার ছোট বেলায় বড় জ্যাঠিকে  ব্লাউজ পরতে দেখিনি। বড় হয়ে দেখেছি তিনি ব্লাউজ পরতেন। বড় জ্যাঠির ব্লাউজ ছিলো তিনি তা পরতে চাইতেন না। আসলে আগের দিনের নারীরা ব্লাউজ পরতে অনীহা প্রকাশ করতেন।  তবে ছোট জ্যাঠিকে পরতে দেখেছি। ব্লাউজ থাকতেও আমার দুই মামিকে সাধারণত ব্লাউজ পরতে দেখিনি। তবে কোথাও গেলে তারা ব্লাউজ পরতেন। বড় মামি আমার দুধ মা ছিলেন। মা ব্লাউজ পরতেন। আমার মা বয়সে মামীদের ছোট ছিলেন৷ আমি আমার ছোট বেলায় অনেক মহিলাকে বাচ্চাদের দুধ  খাওয়াতে দেখেছি। যাদের বুকে ব্লাউজ ছিলো না। এখনো কিছু কিছু মহিলাদেরকে ব্লাউজ ব্যাবহার করতে দেখা যায় না।
কিশোর বেলায় যাত্রাপালা দেখতাম। তখন দেখেছি, যাত্রার অভিনয় করা নারীরা শুরুতেই পেটিকোট ও ব্লাউজ পরে সারিবদ্ধ হয়ে গান গাইতো। আজো মনে আছে তাদের মুখে শোনা, " এই পদ্মা, এই মেঘনা এই যমুনা....।"
 আমি তুরস্কের এম্বাসীতে প্রথম কোন বিদেশী মহিলার শরীরে পেটিকোট ও ব্লাউজ দেখে চমকে উঠি। কেন না তার শরীরে পেটিকোট ও ব্লাউজ ছাড়া কিছুই ছিলো না৷ তার পায়ে ছিলো, হাইহিল৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম দুটি কারনে।  এক তিনি বাঙালির পেটিকোট ও ব্লাউজ পরেছেন। ২য়ত তিনি খুব সুন্দরী। তার শরীর ও পোশাকের রংঙের বর্নণা দিতে পারছি না। কারন আমি বর্নান্ধ। রং বুঝি না, রংঙের  নামও  মনে রাখতে পারি না। সম্ভবত তিনি ছিলেন  তুর্কি নারী।  আমি আরো একবার এক তরুনীকে পেটিকোট ও ব্লাউজ পরা দেখে চমকে উঠেছিলাম। সম্ভবত ৯০ সাল।  কলেজে পড়ুয়া  এক ছাত্রীকে দেখি বিকেলে রেল লাইন ধরে হাটছে। আমাদের বাড়ীর সামনে লোকোসেডের রেলপথ দিয়ে।   তিনি বয়সে বড় হলেও, আমার ক্লাসমেট ছিলেন। অসম্ভব রকমের  সুন্দরী ছিলেন তিনি ৷  তাকে দেখা আর প্রতিমা দেখা সমান ছিলো। তার প্রেমে তো একজন, মরতে মরতে বেঁচে গেছে। তিনি নিজেও জানতেন না, কতজন যে তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে।  তা অন্যদিন বলবো। তিনি সবুজ রংঙের পেটিকোট ও ব্লাউজ পরা ছিলেন। তার সেই  সাদা ধবধবে শরীর ও মায়াবী মুখ আমার আজো মনে পরে।  আমি তার কথা, আমার মাকে বলেছিলাম৷ মা, বলেছিলেন। ওরা, সবাই সুন্দরী!

ইতিহাস আমার খুব পছন্দের বিষয়। তাই আমি সব বিষয়কেই ইতিহাসে খুঁজে ফিরি। তেমনি এক সময় পেটিকোট ও ব্লাউজের উৎপত্তির ইতিহাস জানার চেষ্টা করেছি অনেকবার। খুজে পাইনি। একবার  দু,তিনটি বইয়ে দৃষ্টিগোচর আসে। অন্য বিষয়ে জানতে গিয়ে হঠাৎ, ব্লাউজ ও পেটিকোটের উৎপত্তি খু্ঁজে পাই! যা আমি আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে জানতে চেয়েছিলাম। তার অবসান ঘটে এক সময়।

১৮৬৪ খৃস্টাব্দে জ্ঞানদানন্দিনী দেবী কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হন৷ কেন না, স্বামীর সাথে, স্বামীর কর্মস্থল বোম্বে যেতে হবে। কিন্তু, কোন পোশাকে যাবেন? কেবল শাড়ী পরেই তো যাওয়া যাবে না! তখন বাঙালি নারীরা শাড়ী ছাড়া শাড়ীর ভেতরে আর কিছু পরতেন না। অবশেষে তিনি ও তার স্বামী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন  ফরাসি দর্জির শরনাপন্ন হন। সেই দর্জিকে ফরমায়েশ দিয়ে এক ধরনের পোশাক তৈরী করান। যা ক্রমান্বয়ে  আজকের ব্লাউজ ও পেটিকোট! স্বর্ন কুমারী দেবীর মতে, এই পোশাকগুলো ছিলো, বিলাতি, পার্শি ও বাঙালি স্টাইলের সমম্বয়। প্রথম যে পোশাক তৈরী করান, তা আজকের পেটিকোট ও ব্লাউজের মত ছিলো না। অনেক পরিবর্তন ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে আজকের (বর্তমান) রুপে এনেছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী  কেবল আজকের পেটিকোট ও ব্লাউজের প্রবর্তক নন, আজকের যে শাড়ী পরার ভঙ্গি তাও তিনি প্রবর্তন করেন।
ভ্যাগিস জ্ঞানদায়িনী দেবী সেদিন বোম্বে যাওয়া মনস্থ করেছিলেন। তাই তো আজ বাঙালি ললনার ঝিনুকের একচেটিয়া মুক্ত হয়ে উঠেছে ব্লাউজ ও পেটিকোট।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours