তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:

বাড়ি বন্দি হওয়া ছাড়া নেই কোন উপায়। অন্তত এক বছর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে পরীক্ষা (Test) ও চিকিৎসা (Treat) বর্তমানে একমাত্র পন্থা। যাচাই করে আপনাকে আলাদা (Quarantine) করতেই হবে। আর নিজেই বুঝে উদ্যোগটি নিলে প্রকৃত মানব হিসেবে, আপনি নিজের কাছেই স্বীকৃত। আপনি বাহ্যিকভাবে একদম সুস্থ, কোন উপসর্গ নেই কিন্তু আপনি যে বাহক নন এটি মোটেও নিশ্চিত নয়। শরীরে সংক্রমিক উপসর্গ দেখা না দিলেও আপনি  ১-৩ জনের মাঝে ভাইরাস দিতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রোগী-৩১ যিনি একাই প্রায় ২ হাজার জনকে সংক্রমিত করেছেন। 
আগামী ২ সপ্তাহ পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। বাড়িতে নিজেকে বন্দি করাটাই আবশ্যক। স্রষ্টা, জীবন, প্রকৃতি বাধ্য করছে আপনদের মাঝে বিরাজমান থাকার। রান্না করুন, সন্তানদের সময় দিন, বাড়ির সব কাজ নিজেই করুন দেখবেন বিরক্ত হবার অবকাশটুকুও পাবেন না।
ইতালিতে ২২ ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ জন তা বেড়ে ১১ মার্চে হয় ১০ হাজার।যদি সার্স কোভ-২ (Sars CoV-2) কে এবোলা আর মার্সের সাথে তুলনা করি তাহলে মৃত্যুর হার খুব কম কিন্তু এটি সাধারণ মৌসুমি সর্দি কাশির চেয়ে ছড়ায় অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে বিশ্ব নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) ১৪০০ বছর পূর্বেই জানিয়েছেন- “যখন তুমি কোনো ভূখণ্ডে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার খবর শুনতে পাও তখন সেখানে প্রবেশ কোরো না। পক্ষান্তরে প্লেগ যদি তোমার অবস্থানস্থল পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে ঐ জায়গা ত্যাগ কোরো না”। অর্থাৎ অংক একদম পরিস্কার। সঙ্গনিরোধ একান্ত জরুরি। অতি অল্প সীমায় সীমিত করতে পারলেই দুঃসময়টি কেটে যাবে।
প্রত্যেক মহামারীর ৪টি স্তর থাকে।
১- দেশের বাহির হতে আসা।
২- স্থানীয় সংক্রমণ।
৩- সম্প্রদায় সংক্রমণ।
৪- মহামারী।
এই চতুর্থ পর্যায় অতিক্রম করে, নিয়ন্ত্রণ মন্ত্র খুব ভালভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছে চীন এখন এ অবস্থায় আছেন ইতালি  স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র।
অন্তত আগামী ১ বছর তালাবদ্ধ (Lockdown) শব্দটি অতি পরিচিত অনিবার্য হতে চলেছে। কারণ ভাইরাসটি রুপ পরিবর্তন করছে অর্থাৎ একই পর্যায়ে খুব বেশি সময় পর্যন্ত থাকছে না। এ কারণেই টীকা (Vaccine) আবিষ্কার করতে সময় লাগছে। মোটামোটি রোগ নিয়ন্ত্রণ উপযোগী প্রতিষেধক তৈরি করতে, গুনতে হবে আরো ১২-১৮ মাস। তালাবদ্ধতা অতঙ্কের কিছুই নয়। সঙ্গরোধ প্রধানত করতে হচ্ছে ৩টি কারণে
১- একত্রে বহু রোগীর আবির্ভাব রুখতে।
২- সময় নিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করতে।
৩-প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণ দ্রুতি কমাতে।
ধরুন ১টি হাসপাতালে ১০০টি রোগী চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু একত্রে রোগী এলেন ১০০০ জন। চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব? সব দেশ একটি সময় পর্যন্ত ভাইরাসটির গতি মন্ধর করতে প্রয়াস করছেন। তাই আপনার আমার অবরোধ বিরাট জরুরি। শুধু সরকারের দিকে হা করে চেয়ে থেকে সব সমাধান পেলেও এই রোগের সমাধান পাবেন না। ইউরোপের দেশগুলো রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না তাহলে আমি আর আপনি উন্নত সুচিকিৎসা পাওয়ার আশা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রত্যেকটি দেশের জন্যই অনাকাঙ্খিত একটি দুর্যোগ অপ্রস্তুত থাকাটাই স্বাভাবিক। 
অযথা এক মাসের খাদ্য মজুত একদম করবেন না। আপনি যে আগামী ১০ দিন বেঁচে থাকবেন এই নিশ্চয়তা আপনাকে কে দিয়ে গেলো? এতে বাজারে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে এবং মূল্য বৃদ্ধিরও ঝুঁকি রয়েছে যা নিম্নবিত্তদের জন্য মোটেও সুখবর নয়। চিন্তিত না হয়ে পাশের বাড়ির গরীব পরিবারটি খাবার পাচ্ছে কি না? অবসরে তাঁর ব্যাপারেও চিন্তিত হন।
বিশ্ব জুড়ে ৮ লক্ষের বেশি মানুষ না খেয়ে ঘুমোয়। তমধ্যে ৫ লক্ষেরও বেশি এশিয়াতেই। এ বাদেও ৯ লক্ষ মানুষ খাবারের অভাবেই মারা পরেন। চিন্তা করুন আপনি কতোটা সৌভাগ্যবান? সঙ্কটটি পুরো পৃথিবীর আপনার একার নয়, একটু লজ্জা তো আমাদের করাই উচিত।
আর, প্রচণ্ড রোঁদে দাড়িয়ে থাকলে করোনা বিদায় নেবে।
মদ খেলে সেরে যাবে। (বাস্তবে উল্টো বড় ক্ষতি হবে)
করোনা হলে আর বাঁচার উপায় নেই। (ইতোমধ্যেই ২ লাখেরও বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন)
এসব অহেতুক কথাবার্তা কানের টিমপানিক পর্দা হতে ১ গজ দূরে রাখুন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: