শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

বৃটিশভারতে ১৯০৬ সালে ৩০ ডিসেম্বরে ঢাকায় অল ইনডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এক সময় এই মুসলিম লীগের বিপরীতে আরো একটি মুসলিম লীগ গঠিত হয় বিহারে ১৯৪০ সালে।
মুহাম্মাদ জাফরুল্লা খানের লেখা ও  অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হকের উপস্থাপনায়  ১৯৪০ সালে যখন লাহোর প্রস্তাব পাশ করা হয়। তার বিপরীতে বিহারের একজন উর্দু  লেখক, কবি ও বক্তা ডক্টর মাগফুর আযাজি ও মোহাম্মদ আমির আহমেদ খানের নেতৃত্বে "অল ইনন্ডিয়া জামহুর মুসলিম লীগ গঠিত হয়। অল ইনডিয়া মুসলিম লীগ ও লাহোর প্রস্তাবের বিরোধিতার জন্যই এ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালেই।

 তবে, জিন্নাহর প্রভাব ও পারিবারিক বন্ধুত্বের কারনে। এক সময় অল ইনডিয়া জামহুর মুসলিম লীগ থেকে, মাহমুদাবাদের রাজা আহমেদ খান, দলের  সভাপতিত্ব ও সদস্য পদ থেকে অব্যহতি নেন। এবং লাহোর প্রস্তাবে সম্মতি দেন। মি খান ভারত ভাগ হওয়ার আগেই প্রথমে ইরাকে চলে যান। তার পর আবার পাকিস্তানে আসেন। আবার লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি ইসলামী কালচার সেন্টারের প্রথম পরিচালক হন। এবং লন্ডনে রিজেন্ট পার্ক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান সরকার তার নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করে। তবে তাকে সমাধিস্থ করা হয় ইরানে! তার পুত্র পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনীতিক।
ডক্টর মগফুর আহমেদ বিহারের মানুষ, তার  দাদা হাজী, বাবা মৌলভী ছিলেন। তিনি বিহারে " বাবা এ উর্দূ "  এবং ' মুহাজিদে উর্দু " বলে পরিচিত। তার ১৫ বছরের আন্দোলনে বিহারে উর্দু ভাষা বিশেষ মর্যদা লাভ করে। তিনি আমৃত্যু ভারতভাগ করে মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের সরাসরি বিরোধিতা করতেন। জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বকে ভ্রান্ত মনে করতেন।

ভারতবর্ষ ভাগাভাগির ইতিহাস পড়লে এমন অনেককে দেখি যারা,  পাকিস্তান চাননি কিন্তু তারা পাকিস্তান চলে গেছেন। আবার কেউ পাকিস্তান চাইতেন, ভারত ভাগ চাইতেন কিন্তু আবার পাকিস্তান  থেকে ভারত চলে এসেছেন। এখানে কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তির নাম উল্লেখ করছি যারা পাকিস্তান চাননি।
অল ইনডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্স, অল ইনডিয়া জামহুর মুসলিম লীগ,অল ইনডিয়া মুমিন মুসলিম লীগ, অল ইনডিয়া শীয়া পলিটিক্যাল কনফারেন্স, আনজুমান ই ওয়াতান বেলুচিস্তান, ইনডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, জামিয়াত আহল ই হাদিস, জামিয়াত উলেমা ই হিন্দ, কাখসার মুভমেন্ট,  খুদায়ি খিদমতগার,  কৃষক -প্রজা পার্টি, মজলিস ই আহরার উল ইসলাম, সিন্ধ ইউনাইটেড পার্টি, ইউনিয়নিস্ট পার্টি। উল্লেখ্য এই ইউনিয়নিস্ট পার্টি ছিলো কেবল সেকুলার পার্টি।

আর যে সকল প্রখ্যাত ব্যাক্তি ভারত ভাগের বিপক্ষে ছিলেন, তারা হলেনঃ - মওলনা আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মুতালিব মজুমদার,  আব্দুল সামসাদ খান আজাকচাই, আল্লা বক্স সমরু, ফখরুদ্দীন আলি আহমেদ, আলতাফ হুসেইন, ফজলু হোসাইন, এনায়েত উল্লা মাসরিকি, কানাইয়া লাল মানিক লাল মুন্সি, খান আব্দুল গাফফার খান, খান আবদুল জব্বার খান, খাজা আবদুল মজিদ, খাজা আতাউল্লাহ্, মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী, মালিক  খিজির হায়াত খান, মারকান্দি কাটজু, মওলানা সৈয়দ হুসেন আল মাদনী, ও তার পু্ত্র, মওলনা আবুল আলা মওদূদী ,  মুখতার আহমদ আনসারি,  রফি আহমদ কিদওয়ালি, শাখাওয়াত উল্লা খান আনসারি, শেখ আব্দুল্লাহ, শিবলি নোমান,  সিকান্দার হায়াত খান, ওবায়দুল্লাহ খান।
 মৌলনা মাজাহার আলি তো জিন্নাকে " কায়েদে আজম"  না বলে " কাফেরে আজম " (মহা কাফের) বলতেন। মওলনা মাজাহার আলির পরিবার এখন পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত রাজনিতীক।  এ ছাড়া যে ইসলামী  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  জিন্নাহ্ ও মুসলিম লীগের  দ্বিজাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান বিরোধীতা করতো, তা হলো, দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা।

আজকের ভারতে যেমন কিছু প্রিন্সলি স্টেটস্  ভারত অংশে যোগ দিতে চায়নি৷ কিন্তু সরদার বল্লভ ভাই পাটেলের দূরদর্শীতায়  এখন ভারতে সংযুক্ত হয়েছে।  তেমনি পাকিস্তানেও কিছু প্রিন্সলি স্টেটস্ পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বতন্ত্র থাকতে চেয়েছিলো।  কিন্তু জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খানের জন্য তা সম্ভব হয়নি।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: