দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

টরন্টো শহরটার সাথে আমি কলকাতার মিল খুঁজে পাই। হুগলি যদি যেমন উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বয়ে চলেছে তেমনি আমাদের লেক অন্টারিও টরোন্টোর পাশ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিয়ে মন্ট্রিয়লে গিয়ে শহরে পড়েছে।বিশাল এই লেক। কাঁচের মতো স্বচ্ছ জল। জলে কিছু ফেলা যাবে না। প্রচুর মাছ আছে। স্যামন, ট্রাউট, পার্চ, রুই, পিকারেল, আরো কত মাছ। গরমকালে অনেকেই বেরিয়ে পরে মাছ ধরতে। পরেশদা, রাম, ভাদু, আমরা সবাই মাছ ধরতে যেতাম। ছিপ ফেলে বসলেই হলো।কোনো বাধা নেই। সঙ্গে পেটি ২ বিয়ার। সেপ্টেম্বরে শিকারের সময়। এখানে জঙ্গলে ভর্তি। নানা জন্তু কানাডাতে। শহরের ভেতরে বহু জঙ্গল, পার্ক। রাত্রে বাড়ির ভেতরে চলে আসে স্কাঙ্ক, রেকুন, খরগোশ। মারা যাবে না। রাজহাঁসে ভর্তি শহর গরমকালে। কেউ ধরতে বা মারতে পারবে না। ওরা লাইন করে যখন রাস্তা পার হয় তখন আমরা গাড়ি থামিয়ে ওদের যেতে দিই। আমরা খুব জঙ্গলে কটেজে যাই। ভাল্লুক আসে। কানাডার গ্রিজলি ভাল্লুক বারো থেকে পনেরো ফুট হয় দাঁড়ালে।বেটারা লেকে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে। স্যামন ধরে আর খায়। আগে আমি শিকারে যেতাম।
শিকার করতে লাইসেন্স লাগে। $৫০ ডলার। এদেশে আপনি বন্দুক কিনতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই। তবে হ্যান্ড গান কিনতে পারা মুশকিল। কনসিল উইপন। এই স্বাধীন গনত্রান্তিক দেশের মজা তা কি জানেন? রাষ্ট্র আপনার স্বাধীনতাকে বাধা দেবে না। আইন মেনে যা খুশি করতে পারেন। বাড়িতে বসে বুলেট বানাতে পারেন তুবড়ি বানানোর মতো। বাড়িতে বানালে সস্তা পড়ে।তুবড়ির খোলের মতো পেতলের খোল কিনে এনে তার সাথে গান পাউডার ফর্মুলা অনুযায়ী ভরে ওপরে শীষের গুলিটা লাগিয়ে মেশিনে চেপে দিলেই বুলেট তৈরী। যারা খুব শিকার করে বা গান ক্লাবে যায় তারা বানায়। অবাক হবেন শুনলে যে পুলিশ সরকারের নয়। ওরা সম্পূর্ণ আলাদা সংস্থা। প্রধানমন্ত্রীরই পিতার ক্ষমতা নেই ওদের সাথে কোনো কথা বলে বা উপদেশ দিতে পারে। মিনিটের মধ্য গ্রেপ্তার হয়ে যাবে পুলিশের কাজে বাধা দিলে। একজন কনস্টেবলের সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া আছে। কোনো পুলিশ কমিশনার কথায় ও চলবে না।আমরা দারুন সন্মান করে থাকি এখানকার পুলিশদের।লক ডাউনে আমাদের এখানে সব বন্ধ শুধু বাজার খোলা। কোনো সমস্যা নেই। বাড়িতেই আছি। রোজ নতুন খাবার বানাচ্ছি। আমার রান্না করার হবি। আসুন আজ আপনাদের নানা ধরণের সুপ্ বানানো শেখাই।আপনারা সবাই পছন্দ করেন নানা সুপ্। চিকেন সুপ্ পছন্দ করেন। সুপ্ বানানোর আসল ব্যাপার হচ্ছে মুরগির সেদ্ধ জল বা স্টক। বাজার থেকে যদি সস্তায় হাড় গলা বা একটু চিকেন কিনতে পারেন তবে সেগুলোকে দু ঘন্টা ধরে একটু নুন গোল মরিচ দিয়ে ফোটাবেন। এবার ছেঁকে বোতলে রেখে দিন। এইবার পাত্রে একটু পিয়াঁজ, ভুট্টা নুন আর একটু সোয়া সস দিয়ে ভেজে মুরগির স্টকটা ঢেলে দিন। নামাবার আগে এক চামচ ময়দার জল গুলে ওপরে ছড়িয়ে দেবেন।ভুট্টার সওয়ার আর সুইট সুপ্ হয়ে গেলো। এই ভাবেই মুরগির টুকরো দিয়ে সুপ্ বানাতে পারেন। পাকা কুমড়োর সুপ্ দারুন হয় ঠিক এই ভাবে। কুমড়ো সেদ্ধ করে ব্লেন্ড করে নেবেন। চিংড়ির মাথা, খোলা অনেকক্ষন সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে মাছের টুকরো দিয়ে মুরগির স্টক দিয়ে সুপ্ বানাতে পারেন। সব কিছু একবার গোকুল খুড়োকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন বা দেখে নেবেন। গোকুল আর জুলি পিসি আমাদের জীবন অনেক সোজা করে দিয়েছে। জুলি পিসিকে চিনতে পারলেন না? জিপিএস। ভালো থাকবেন। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: