শেরী ঘোষ, ফিচার রাইটার, কোচবিহার:

(আমলকি এক ম‍্যাজিক ফ্রুট। একটি ফলেই মাত হাজার রোগ। এমন এর যাদু। বছরভর সহজলভ্য, সস্তা ফলটির গুণের কথা নিয়ে কলম ধরেছেন প্রতিবেদক) 

আমলকি। এক আশ্চর্য  ফল। সংস্কৃতে আমলকিকে বলা হয আমালিকা। বিবিধ পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ এই ফলটি ম্যাজিক ফ্রুট। ত্বক ও চুলের যত্নে বহুকাল আগে থেকেই আমলকির ব্যবহার হয়ে আসছে। হেলেন অফ ট্রয় নাকি মাথার চুল কালো করার জন্য নিযমিত আমলকি আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতেন।

আমলকি বহু গুণের আধার। আমলকির ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।
আমলকি নিয়ে গবেষণা দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।  রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কাজ করে। কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) -এর ক্ষত সারাতে আমলকি কার্যকর। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা হ্রাস করতে পারে, রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।

একাধিক পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ এই ফলটিকে ঠিক মতো কাজে লাগালে শুধুই যে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে তা নয়। মেলে একাধিক শারীরিক উপকারও। নিয়মিত একটা করে আমলকি খেলে উপকার মেলে অ্যাজমা রোগে, ওজন হ্রাসে, এছাড়া রক্ত শুদ্ধ করতে, দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, এমনকি ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতেও আমলকির ভূমিকা অতুলনীয়।

আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী। এটি দাঁত, চুল ও ত্বক ভাল রাখে। খাওয়ার রুচি বাড়ায়।  কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল, রক্তশূন্যতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। চুল ওঠা, চুলের খুসকির সমস্যা দূর করতে আমলকী বেশ উপকারী। আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। প্রতিদিন সকালে আমলকীর রস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে।
অ্যান্টিএজিং হিসেবে যেমন আমলকি কাজ করে তেমন চুলের গোড়া শক্ত, মজবুত করে চুলের প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতা আনতেও আমলকির কদর অসীম।
ঠিক মতো কাজে লাগালে যেমন শারীরিক নানা উপকার মেলে তেমন ত্বকের সৌন্দর্যও বাড়ে। আমলকি ব্যবহারে ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠে। আমলকির রস নিয়মিত খেলে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ সহজে পড়ে না।

অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের ত্বক হারাচ্ছে ঔজ্জ্বল্য, যৌবন। ত্বকে দাগ ছোপ, র‌্যাশের সমস্যায় জেরবার সবাই। সঙ্গে রোদের চড়া প্রভাবে ট্যান পড়ে ছোপ পড়ে। ত্বকে পড়তে শুরু করেছে বয়সের ছাপ? সমস্যা যদি হয় এতসব, তাহলে তার দাওযাই আমলকি। আজ থেকেই ত্বকের পরিচর্যায় আমলকিকে কাজে লাগান। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আমলকি খেলে দেহে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা শরীরের ফ্রি র‌্যাডিক্যালস কমায়। এতে ত্বকের টক্সিক উপাদান বেরিযে যেতে থাকে। যার ফলে উজ্জ্বল হয় ত্বক। আমলকির রস সরাসরি ত্বকে লাগালে ব্রণর সমস্যা কমে, অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ, ট্যানড ছোপ চলে যায়। ত্বকের দাগ দূর করতে, সজীব উজ্জ্বল ত্বক পেতে আমলকির রসের সঙ্গে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত ফেসপ্যাকে আমলকির রস মুখে লাগিযে ত্বকের পরিচর্যা করলে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে।

চুলের যত্নে আমলকি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাঁচা অবস্থায, গুঁড়ো কিংবা ফুটিযে নানান উপায়ে আমলকিকে ব্যবহার করা যায় রূপচর্চায়। আমলকি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে, চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। চুলের খুসকি দূর হয়, চুল পেকে যাওযা সমস্যার সমাধানেও আমলকি কাজ দেয়। চুলের রুক্ষতা দূর করতে এবং অকালপক্কতা রোধে আমলকি নারকেল তেলে ফুটিযে হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় রাতে ম্যাসাজ করুন। পরদিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখবেন।

শুকনো আমলকির গুঁড়ো সামান্য গরম জলে মিশিযে প্যাক বানান। প্যাকটি চুলে লাগিযে রাখুন ঘন্টাখানেক। পরে শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুল ঘন হয। এমনকী পাকা চুলে একটা কালো আভাও আসে।

শুকনো আমলকি সারারাত  ভিজিয়ে রেখে সেই জল ছেঁকে তারসঙ্গে ১ চামচ হেনা পাউডার, একটা ডিম, অল্প তেল মেশান। প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। এটা চুলের গোড়ায় পুষ্টি দেবে, খুশকি নাশ করবে,  চুল পড়া কমাবে, পাকা চুলের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
 
ত্বকে লাগানোর ফলে এর ভিটামিন সি ট্যান রিমুভ করে ফলে ত্বক উজ্জ্বল, চকচকে, টানটান হয়।
আমলকির রস, বেসন দিয়ে প্যাক বানান। ত্বকে, গলায, হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। উষ্ণ জলে ধুযে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে কমবে সান ট্যান, পিগমেন্টেশন দাগ।
আমলকি হাজার গুণের আধার। ত্বক ও চুলে লাগানোর পাশাপাশি নিয়মিত সেবনেও উপকার মিলবে চটজলদি। তাই রোজ একটা করে আমলকি খেলে ত্বকের পিগমেন্টেশনের দাগ ছোপ সব উধাও হবে, লিভার ভালো থাকবে।
আমলকির রস খুব ভাল কাজ দেয় শরীরের নানা রোগের উপশমে।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: