প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

অবচেতনের গভীরে কুন্তী বললেন, তিনি ঠকে শিখেছিলেন। এমনটাতো জীবন দেয় আমাদের, কতোবার, শতেক টানাপোড়েনের নির্বাসন হয়। জীবনের নানা রঙের দিনগুলি কেবল আগামী প্রজন্মের সঙ্গে বিনয়ী নিবেদন। নিজেকে উজাড় করে লুকানো প্রচেষ্টা আঁকতেই তো কালান্তরের প্রেক্ষাপট।

যৌবন তো জীবনকে বোঝার মাধ্যম।  নিজেকে দেখা, চেনার এক লাজুক সুখ, তখন অসুখ করেছে রূপের পাহাড়ে। আগুনের ফুলকির মতো উত্থলে উঠছে অধরের হাসি নির্ঝর। নিজেকে মনে হয়েছে পল্লবিত যৌবনের গর্ব। দেহবল্লবীর সুধাগন্ধে প্রাণমন আকুল হয় বৈকি৷ এমন যৌবনে আভরণ, অলংকার আনন্দে মাখামাখি হয় যায় দেহে। বিধৌত পল্লীর শোভায় বুক ফুলে ওঠে৷ দুর্বাসা কুন্তীর সংসর্গ পছন্দ করতেন৷ অন্য কেউ এলে তিনি অসহিষ্ণু হতেন নিত্য। মায়া মোহের বন্ধন ছিন্ন করে এমন আদুরে পাগলামি হয়তো আশ্রয় নিতো শিশুর কোলে, সে যে নারীর সংসর্গে।
 কোনোদিন কুন্তীর মনে হয়েছে আহা!  প্রেমই যে ঋষিকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে। মানুষ কেবল ক্রোধ দেখে, কেউ দেখে না ঈর্ষার ক্রোধ, ঘৃণার কারণ তো জানতে চায় না। দুর্বাসা বললেন - "কুন্তী!  আমার বুকে এতো জ্বালা কেন গো!  কি পেয়েছি আমি ব্রহ্মচারী হয়ে!  কতো কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে আমি অভিসম্পাত করেছি, কিন্তু আমি তো শেষে কষ্টই পেয়েছি। আমার মধ্যে আজ যে পরিবর্তন তা কেবল তোমার জন্য। আমার মধ্যে তুমি যে ছড়িয়ে আছো প্রিয়! " কুন্তী দেখলেন, এ চোখ যে ডুবুরীর মতো গভীর, স্থির। কাঙাল তিনি,  পরিচর্যার দাসে বুক ভাঙা অবয়বের সাথী।

এমন আবেশে পুরুষ মনের উষ্ণতা পেতেই তো নারী মনের উদ্বেলতা  আসে। ঘুম থেকে জেগে ওঠা এক চিরন্তনের নারী৷ বুকের ভিতরে তৃষ্ণা তৈরি হয়। তবে কি এটা জীবনের ধর্ম! কিশোরী মনে জাগে নারীত্ব৷ মনের আয়নার আছে সৌন্দর্যের প্রকাশ৷ মানবিক মাধুরী জুড়ে আছে মূল্যবানের সাজ৷ কুন্তীর প্রতি আছে ক্ষমতার জোর,  প্রেমিক পুরুষটির উপর আছে শর্তহীন প্রভুত্ব৷ জেতাতেও যেমন সুখ আছে তেমন দখলেও আনন্দ, নারী চায় তো উভয়ই। কুন্তী আজ অনুরাগের বর্ণচ্ছটা মিশিয়ে নম্র লজ্জায় ঋষির চরণে ঠাঁই নেয়৷ দুর্বাসা বললেন, "জানো কুন্তী!  মাঝে মাঝে আমার তোমাকে দেখতে সাধ হয়। তোমার চোখে চোখ রাখতে আকুলি বিকুলি করে উঠি। আমি কেন ভিতরে স্থির হতে পারি না। তবে কি এ আমার দোষ কুন্তি। " আজ যেন আমি দুর্গেশনন্দিনী পড়ছি মনে হলো।
 " আশা ত্যাগ করাই অধিক ক্লেশ ; একবার মনোমধ্যে নৈরাশ্য স্থিরতর হইলে আর তত ক্লেশকর হয় না। অস্ত্রাঘাতই সমধির ক্লেশকর ;  তাহার পর যে ক্ষত হয়,  তাহার যন্ত্রণা স্থায়ী বটে, কিন্তু তত উৎকট নহে।! "

কোথাও মনে পড়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় patriotism একটা ঘোরতর পাপ। ধর্ম্মতত্ত্ব বলে,  "স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধি করিবে, কিন্তু মান্য  সমস্ত জাতির সর্ব্বনাশ করিয়া তাহা করিতে হইবে। এই দুরন্ত প্রভাবে আমেরিকার আদিম জাতিসকল পৃথিবী হইতে বিলুপ্ত হইল। জগদীশ্বর ভারতবর্ষে যেন ভারতবর্ষীয়ের কপালে এরূপ দেশ বাৎসল্য ধর্ম্ম না লিখেন৷ "  এ যেন সেই পুনরাবৃত্তির মূলে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি।  তবু গেরুয়া সংযমে চিত্তার্পণপূর্ব্বক নিষ্কাম কর্ম্মের অনুষ্ঠান, তবেই যথার্থতা।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: