প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
সন্দেহের গভীরে পোকাটা যেন ঝাঁঝরা করছে কুন্তীর মন। শিকড় চড়িয়ে দেয় নিঃশব্দের শাখামূলে। মনের অভ্যন্তরে অমোঘ নিয়মে সময়ের চাকা ঘুরছে। পয়োধর কাঁচুলির বাঁধন ছিঁড়ে যে বেরিয়ে আসতে চাইছে , এ যে শরীরের ভাবনা। কিই বা করার! শরীরের ধর্মই যে এমন রাগ জুড়ে অনুভূতির আক্ষেপটাই বড়ো। মনটা উদার হয়ে যায়। মনটাই যে সব। ঋষি সংযমে ঝড় উথলেই যে দরিয়াতে সংঘাত লাগে, এ তো আর কুন্তীর অজানা নয় ; কোথাও তো ভয় হয় ঋষির। গৌরবের সৌদ্ধ ভেঙে যেতে থাকে, অত্যন্ত স্বার্থপরতা যেন বাইরের ঐশ্বর্যকে বিপন্ন করে। মনের দারিদ্রতা দেখতে পেলে সম্ভ্রম সম্মান ক্রিয়া করে না৷ তবে কি এটাও ঋষিকৌশল! তৎকালীন সমাজের বুকে ভিতরের অন্ধকার যেন উদ্ভাসিত, প্রকট হচ্ছে সময়ের গতিতে, এটাই তো পাওয়া।
সুদর্শনার মুখের কথাগুলো যেন বন্ধ দরজার তালাটা খুলে দেয়। হৃৎপিণ্ডের ওঠা পড়া কেবলই শব্দ শোনায় ; একলা ঘরে কেবলই জানাজানি হওয়ার ভয়। পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে যে প্রতিমূহূর্তে অভিমান মানায় না। নির্বোধের মতো আত্মঘাতী হওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরী নেই। কখনও মনে হয়েছে গর্ভের রক্তপিণ্ডের দলাটা বোঝার মতো ঘেন্নার আর নেই। আহা!ও তো রাগ! যদি ভীরু ভয় মনের লাগাম ছিনিয়ে খায়, তবে প্রাণপণে নিঃশেষে শুষে নিতে হয় নিজেরই বুকে, একথা তো কুন্তী জানেন৷ আজ তো উত্তেজনার ঘৃণা, তবে দেবতার কৃপালাভ যেন সৌভাগ্যের ঈর্ষা জ্ঞাপন।
চিত্রলেখা, ভোজরাজের মহিষী ; অন্যায় নিবেদন তাঁর মধ্যে আগ্নেয়গিরির গর্ভদেশে আগুন নিঃশেষ করেছে৷ কুন্তীর উপর ভর্ৎসনা মানামানি যেন কাজ করছে না। উন্মাদের মতো না হলেও উচিত অনুচিতের পর্যালোচনা যেন নিজেকেই করতে হয়। সিংহাসনের রাজ্য ঐশ্বর্য ছেড়ে বানপ্রস্থ যাবেন বলেই কি তিনি প্রদীপ জ্বেলেছিলেন কুন্তীর পালিত পিতা হয়ে! নাকি কেবলই অপরাধ৷ মাথা হেঁট করলেই অপরাধ লঘু হয় না, এখানেও জবাব চাই বইকি। চিত্রলেখা তো পালিতা মা! অনভিজ্ঞ কিশোরীকে একান্ত অনুগত চিত্তজয়ের খেলায় মাতালেন কেন! আসলে চিত্রলেখা নিজের তো সন্তান নেই ;
তাই কি মেয়েলী চিহ্নগুলোর পরিবর্তন জেনেও চিত্রলেখা চুপ করলেন। কুন্তী এবার মুক্ত। আসলে ভিতরের কথাগুলি এভাবে বলতে পারলে মুক্তি লাগে। এটাও প্রতিরোধহীন এক যুদ্ধ। মিথ্যা দোষের ফণা তুলে বিষধর যন্ত্রণা উগরে জমানো ক্ষোভ যে কান্নার৷ ভোজরাজ এবার মাথা হেঁট করে রইলেন।
চিত্রলেখা পুড়ে যাচ্ছেন আজ। স্বামীর অপমানের আগুন তাকে মাথাত উপর ছাদ ভেঙে দিচ্ছে৷ এ যে বেদনার ছাই, নিরুপায় অস্থিরতার অভিযোগ কিন্তু সত্যিই তাঁর৷ মিথ্যা বোঝার দায়িত্ব যে পরোক্ষে তাঁরই ; সময় এলো প্রসবের যন্ত্রনার। অস্তিত্বের সঙ্গে অদৃশ্যপটে অসহায় লড়াই। অসহায় বিপন্নের অজ্ঞাতবাসের রহস্য। সবটুকু অশান্তি আজ "কে "- তেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই নবজাতকের কি অপরাধ! ভাবলে স্নেহ, মমতা যেন দরদের পুকুরে শুকিয়ে যায়৷ তবু তো বিদ্রোহ টা জুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী খেলা।
বিদ্বেষ, উপেক্ষা, হাহাকার বিরুপতা৷ তবে যে এক প্রাণ থেকে আরো এক প্রাণে প্রদীপ জ্বলে ওঠাই বংশগতি।উল্টোস্রোতে চলা যায়, কিন্তু নিয়ম তো উল্টোস্রোতে চলে না৷ বিরুপতাকে জয় করার চেষ্টা বৃথা৷ নির্বিকারত্ব তো সুদর্শনাও আর ভালো লাগছে না। স্বর্গের কবচ কুন্ডল নিয়ে জন্মে যে ছেলে, তাকে ভরসা তো আজ নেই। তবু রাগ অভিমান মুহুর্তের প্রতিক্রিয়া আজ শুধুই যন্ত্রণার৷ কষ্টরুদ্ধ যন্ত্রণার বোধ যে প্রত্যাশাকে ছিন্ন করেছে, তাই আর দেরী নয়। জানাজানি হওয়ার আগেই মঞ্জুষস করে অশ্বা নদীতে ভাসিয়ে দিতে হবে। এক অদ্ভুত চক্রের অর্থহীন অধ্যায় শেষ হলো। ঠোঁট বজ্রের মতো এঁটে গেলো, আর্তির শব্দ প্রাণপণে আটকে গেলো। বাইরে থেকে কান্না কেউ শুনতে পেলো না৷ (ক্রমশঃ)
সন্দেহের গভীরে পোকাটা যেন ঝাঁঝরা করছে কুন্তীর মন। শিকড় চড়িয়ে দেয় নিঃশব্দের শাখামূলে। মনের অভ্যন্তরে অমোঘ নিয়মে সময়ের চাকা ঘুরছে। পয়োধর কাঁচুলির বাঁধন ছিঁড়ে যে বেরিয়ে আসতে চাইছে , এ যে শরীরের ভাবনা। কিই বা করার! শরীরের ধর্মই যে এমন রাগ জুড়ে অনুভূতির আক্ষেপটাই বড়ো। মনটা উদার হয়ে যায়। মনটাই যে সব। ঋষি সংযমে ঝড় উথলেই যে দরিয়াতে সংঘাত লাগে, এ তো আর কুন্তীর অজানা নয় ; কোথাও তো ভয় হয় ঋষির। গৌরবের সৌদ্ধ ভেঙে যেতে থাকে, অত্যন্ত স্বার্থপরতা যেন বাইরের ঐশ্বর্যকে বিপন্ন করে। মনের দারিদ্রতা দেখতে পেলে সম্ভ্রম সম্মান ক্রিয়া করে না৷ তবে কি এটাও ঋষিকৌশল! তৎকালীন সমাজের বুকে ভিতরের অন্ধকার যেন উদ্ভাসিত, প্রকট হচ্ছে সময়ের গতিতে, এটাই তো পাওয়া।
সুদর্শনার মুখের কথাগুলো যেন বন্ধ দরজার তালাটা খুলে দেয়। হৃৎপিণ্ডের ওঠা পড়া কেবলই শব্দ শোনায় ; একলা ঘরে কেবলই জানাজানি হওয়ার ভয়। পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে যে প্রতিমূহূর্তে অভিমান মানায় না। নির্বোধের মতো আত্মঘাতী হওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরী নেই। কখনও মনে হয়েছে গর্ভের রক্তপিণ্ডের দলাটা বোঝার মতো ঘেন্নার আর নেই। আহা!ও তো রাগ! যদি ভীরু ভয় মনের লাগাম ছিনিয়ে খায়, তবে প্রাণপণে নিঃশেষে শুষে নিতে হয় নিজেরই বুকে, একথা তো কুন্তী জানেন৷ আজ তো উত্তেজনার ঘৃণা, তবে দেবতার কৃপালাভ যেন সৌভাগ্যের ঈর্ষা জ্ঞাপন।
চিত্রলেখা, ভোজরাজের মহিষী ; অন্যায় নিবেদন তাঁর মধ্যে আগ্নেয়গিরির গর্ভদেশে আগুন নিঃশেষ করেছে৷ কুন্তীর উপর ভর্ৎসনা মানামানি যেন কাজ করছে না। উন্মাদের মতো না হলেও উচিত অনুচিতের পর্যালোচনা যেন নিজেকেই করতে হয়। সিংহাসনের রাজ্য ঐশ্বর্য ছেড়ে বানপ্রস্থ যাবেন বলেই কি তিনি প্রদীপ জ্বেলেছিলেন কুন্তীর পালিত পিতা হয়ে! নাকি কেবলই অপরাধ৷ মাথা হেঁট করলেই অপরাধ লঘু হয় না, এখানেও জবাব চাই বইকি। চিত্রলেখা তো পালিতা মা! অনভিজ্ঞ কিশোরীকে একান্ত অনুগত চিত্তজয়ের খেলায় মাতালেন কেন! আসলে চিত্রলেখা নিজের তো সন্তান নেই ;
তাই কি মেয়েলী চিহ্নগুলোর পরিবর্তন জেনেও চিত্রলেখা চুপ করলেন। কুন্তী এবার মুক্ত। আসলে ভিতরের কথাগুলি এভাবে বলতে পারলে মুক্তি লাগে। এটাও প্রতিরোধহীন এক যুদ্ধ। মিথ্যা দোষের ফণা তুলে বিষধর যন্ত্রণা উগরে জমানো ক্ষোভ যে কান্নার৷ ভোজরাজ এবার মাথা হেঁট করে রইলেন।
চিত্রলেখা পুড়ে যাচ্ছেন আজ। স্বামীর অপমানের আগুন তাকে মাথাত উপর ছাদ ভেঙে দিচ্ছে৷ এ যে বেদনার ছাই, নিরুপায় অস্থিরতার অভিযোগ কিন্তু সত্যিই তাঁর৷ মিথ্যা বোঝার দায়িত্ব যে পরোক্ষে তাঁরই ; সময় এলো প্রসবের যন্ত্রনার। অস্তিত্বের সঙ্গে অদৃশ্যপটে অসহায় লড়াই। অসহায় বিপন্নের অজ্ঞাতবাসের রহস্য। সবটুকু অশান্তি আজ "কে "- তেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই নবজাতকের কি অপরাধ! ভাবলে স্নেহ, মমতা যেন দরদের পুকুরে শুকিয়ে যায়৷ তবু তো বিদ্রোহ টা জুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী খেলা।
বিদ্বেষ, উপেক্ষা, হাহাকার বিরুপতা৷ তবে যে এক প্রাণ থেকে আরো এক প্রাণে প্রদীপ জ্বলে ওঠাই বংশগতি।উল্টোস্রোতে চলা যায়, কিন্তু নিয়ম তো উল্টোস্রোতে চলে না৷ বিরুপতাকে জয় করার চেষ্টা বৃথা৷ নির্বিকারত্ব তো সুদর্শনাও আর ভালো লাগছে না। স্বর্গের কবচ কুন্ডল নিয়ে জন্মে যে ছেলে, তাকে ভরসা তো আজ নেই। তবু রাগ অভিমান মুহুর্তের প্রতিক্রিয়া আজ শুধুই যন্ত্রণার৷ কষ্টরুদ্ধ যন্ত্রণার বোধ যে প্রত্যাশাকে ছিন্ন করেছে, তাই আর দেরী নয়। জানাজানি হওয়ার আগেই মঞ্জুষস করে অশ্বা নদীতে ভাসিয়ে দিতে হবে। এক অদ্ভুত চক্রের অর্থহীন অধ্যায় শেষ হলো। ঠোঁট বজ্রের মতো এঁটে গেলো, আর্তির শব্দ প্রাণপণে আটকে গেলো। বাইরে থেকে কান্না কেউ শুনতে পেলো না৷ (ক্রমশঃ)
Post A Comment: