অপর্ণা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও সমাজসেবী, আসানসোল:

হ্যালো হ্যালো ,
কে নন্দনা বলছিস তো, না, আমি নন্দার
মা বলছি। ও আন্টি, একবার নন্দনাকে দাও না প্লিজ। ও তো এখনও ঘুমোচ্ছে রে, তুমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফোনটা ধরাও। উঃ, বাপরে বাপ তোরা পারিস বটে। এক্কেবারে ঘোড়ায় জিন দিয়ে থাকিস সর্বদা।
এই নন্দা ফোনটা ধর না, ঘুম জড়ানো গলায় নন্দা উত্তর দিল উঁ মা প্লিজ ঘুমোতে দাও না, কাল তিনটের সময় ঘুমিয়েছি। ওরে আমার রে রাত জেগে মুভি দেখে মেয়ে আমার চোদ্দ পুরুষকে উদ্ধার করেছেন। ফোনটা ধর ওপাশে অদ্রি অপেক্ষা করছে। উঃ, ওর আবার এত সকালে কি হল। এত সকাল নয় মা আমার ,বেলা নটা বাজে।
হ্যালো বলতেই ওপাশে অদ্রি এই মারে কি সেই মারে। এই অপদার্থ, এখনও ঘুমোচ্ছিস কোন আক্কেল?  আজ কি, তুই সব ভুলে গেছিস?  আরে পুরো গ্রুপ ওয়েট করছে তোর জন্য জলদি কনফারেন্স কলে আয়।
উরে সব্বোনাশ সব কটা হাজির। একসঙ্গে পুরো ব্রিগেড চীৎকার করে উঠল -- ইয়েএএএএএএ আমরা সবাই  বেঁচে আছি। রোহিত ওর কপালে পরে থাকা অবাধ্য চুল গুলো ডান হাতে সরিয়ে বলল -- বল, আমরা পরিবার সহ বেঁচে আছি। দিব্যর কথা বলার ধরণটা চিরকাল বিজ্ঞ বিজ্ঞ। ও কথা শুরু করলেই মেয়েরা হাসতে শুরু করে। তাই ও শুরু করল মেয়েদের সতর্ক করে। এই কেউ হাসবি না, যা বলব মন দিয়ে শোন। অলরেডি ফোনে ফোনে অনেক কাজ  এগিয়ে রেখেছি। হল বুক করা হয়ে গেছে, আজ বিকেলে পেমেন্ট করে আসব। ভাবতে কি ভাল লাগছে বলতো, কতদিন পর বাইক নিয়ে বেরবো। এবার প্রোগ্রাম বস্ তোমরা ঠিক করে নাও। অদ্রি উত্তর দিল, প্রোগ্রাম পুরো সেট্ আছে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই সারপ্রাইজ থাকবে। মা, বাবাদের বলা যাবে না যে আমরা নববর্ষ পালন করছি। নন্দনা হেসে উঠল হি হি হি জুলাই মাসে নববর্ষ। সবাই একযোগে চেঁচিয়ে উঠল, বেশী বোকোনা চাঁদু বেঁচে আছি এই আমাদের ভাগ্য। নবজন্ম যখন হল নববর্ষ তো পালন করতেই হবে।
রোহিত মনে করিয়ে দিল, সবার মনে আছে তো ওই দিনটা আমাদের মায়েদের ফুল রেস্ট। তিনটে মাস কিভাবে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখলেন মায়েরা, হ্যাটস অফ্। বিজ্ঞ দিব্য মাথা চুলকে বলে উঠল, ইয়ে মানে লাঞ্চ, ডিনার দুটোই হলে পকেটে একটু টান পরবে না। নন্দনা এতক্ষনে একটা কথার মত কথা বলল, মেনুটা কোন বড় কথা নয় ডাল ভাত খাওয়ালেও মায়েরা খুশী হবেন। আর তাছাড়া বাবারা এখন ভীষন কৃতজ্ঞ মায়েদের প্রতি কাজেই খরচা সামলানো যাবে ঘাবড়াস না। লকড্ ডাউন শেষের আনন্দে আত্মহারা ওরা।
নন্দনাকে ডাকতে এসে ওদের কথোপকথন শুনে মার দু চোখে জল। যাক, লকড্ ডাউন যতই ক্ষতি করে থাকুক  সম্পর্ক গুলোকে জোরালো করে গেল। বাচ্চা গুলো নিজেদের মস্তির কথা না ভেবে মায়েদের বিশ্রাম এবং আনন্দের কথা ভাবছে। সত্যিই আমাদের নবজন্ম হল।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: