দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

আদিবাসীদের ডবো জোহার, লোটাদা সামাজিক দূরত্ব বজায় প্রথা! অতিথি অ্যাপ্যায়নে এই সামাজিক প্রথা আজও প্রাসঙ্গিক করোনা ভাইরাস রুখতে।  বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুরজিত সিং হাঁসদা বলেন, আজকের বিজ্ঞান যা বলছে, আমাদের পূর্বপুরুষরা তা বলে গিয়েছিলেন। আধুনিক সভ্যতার করমর্দন নয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লোটাদা করে জীবানু নাশক হয়ে তবেই গৃহে প্রবেশের নির্দেশ ছিল। যা আজকে আমরা আধুনিক সমাজকে। আদিবাসী সমাজে এই রীতি  চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। যে কোনও আদিবাসী গ্রামে গেলেই এই প্রথা দেখা যায়।
অতিথি আপ্যায়নের রীতি এই ডবো জোহার। যেখানে বাড়িতে কেউ অতিথি এলে তাকে বাড়ির বাইরে দড়ির খাটিয়া, মাচুলি বা চেয়ারে বেশ কিছুক্ষণ বসতে দেওয়া হয়। তারপরে কাঁসার ঘটিতে জল এনে তাকে হাত পা ধুতে জল দেওয়া হয়। যাকে বলে লোটাদা। দুটি প্রক্রিয়ার শেষে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে বসে থাকার সময় পরিবারের খবর নেন বাড়ির বাকি সদস্যরা। অতিথি বয়স্ক হলে তাকে প্রণাম করেন দূর থেকে। ছোটরা অতিথি বাড়িতে আসা বড়দের প্রণাম সারে, তবে দূর থেকেই। তারপরেই তাদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে আসা এই অতিথিদের সামাজিক দূরত্ব রেখে অতিথি আপ্যায়নের রীতিই এখন সরকারিভাবে ঘোষিত সামাজিক বিধিনিষেধ। আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সোরেণ বলেন, হাজার হাজার বছর আগে আমাদের সমাজ সংস্কারকরা এই ডবো জোহারের রীতি চালু করেছিল। তারা যে কত দূরদর্শী ছিল এই বিজ্ঞান ভিত্তিত রীতি তার প্রমাণ। তার থেকেও বড় আমরা আমাদের সমাজ এই রীতি বজায় রেখে চলছে তারজন্য আমি গর্বিত। লেখক লক্ষণ হাঁসদা জানান, অতিথিদের বসতে দেওয়া, ডবো জোহার, লোটাদা করার সঙ্গে একটা আন্তরিকতা আছে, তবে তা সামাজিক দূরত্ব রেখেই। যা আমাদের সমাজে এখনও হারিয়ে যায়নি।  বনবাসী হিসাবে আমাদের এই পদ্ধতি যে সঠিক তা স্বীকার করছে আজকের উন্নতশীল সমাজ। আর এটাই আমাদের গর্ব।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: