চন্দন ভৌমিক, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

(প্রচ্ছদ ছবিটি করেছেন এই প্রতিবেদক)

 আজ বাংলার নববর্ষ..বৈশাখ মাস পড়লো..আর নববর্ষে বাঙালির বাঙালিয়ানা সে এক দেখার মতো জিনিস..নুতন জামা কাপড়..চৈত্রের সেলে কেনা..সকাল সকাল মন্দির এ গিয়ে একটু পুজো দিয়ে আসা..এরপর সকালের টিফিন খেয়ে বাজার যাওয়া..একটু ভালো মাছ..খাসির মাংস..নিদেনপক্ষে মুরগির মাংস..দই আর মিষ্টি তো চাই-ই-চাই..এর সাথে ফাউ হিসাবে চেনা পরিচিত দোকান থেকে দু একটা প্যাকেট..দুফুরে আস মিটিয়ে ভুরিভোজ..এরপর অল্প গরমে ঘর টা হালকা অন্ধকার করে..পাখা চালিয়ে একটা নিটোল ঘুম..সন্ধে বেলায় নুতন জামা কাপড় পরে পকেটে কিছু টাকা নিয়ে..হাতে ব্যাগ ঝুলিয়ে...মুদি, কাপড়, পান, দোকানের হালখাতা সেরে ..হাতের ব্যাগ ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট..আর ব্যাগ থেকে উঁকি মারা কেলেন্ডার হাতে রাত নয় টা নাগাদ বাড়ি ফেরা...বাঙ্গালীর নববর্ষের ট্রাডিশনাল ছবি..তবে এবার নববর্ষ এমন একটা সময় যখন সারা ভারত তথা পৃথিবীর  এক দুঃসময়..সারা পৃথিবী জুড়ে মরণ ধ্বংস লীলা চলছে...এই সময় আমরা সবাই গৃহবন্ধী..বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে করোনা..দখল করে নিয়েছে সারা পৃথিবী..মানব সভ্যতা আজ ধ্বংসের মুখে..হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, নেতা মন্ত্রী কোরোনার কাছ থেকে কারো রেহাই নেই..একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি চলছে..ডাক্তাররা এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন..নার্স, মেডিকেল স্টাফ, সাফাইকর্মী বীর সৈনিক এর মতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কোরোনার মতো মারাত্মক শত্রূর সঙ্গে..আর এই লড়াই আমরা জিতবোই .... জেতার জন্য আমাদের ঘরে থাকতে হবে..এছাড়া আর কোনো অস্ত্র নেই আমাদের...
সেই ছোটবেলাতে যখন লুডো খেলতাম তখন শিখে ছিলাম "ঘরে থাকলে কেউ খেতে পারবে না"..আজ কথাটার মানে বুঝতে পারছি..আপনি যদি ঘরে থাকেন তাহলে কোরোনার মতো  শত্রুকে ও পরাস্ত করতে পারবো আমরা..আর আজকের এইসময় নববর্ষ উৎসব করা একটা বিলাসিতা ..আমরা এবার ঘরে থেকেই নববর্ষ পালন করবো..যাই হোক আজকে এই নববর্ষর দিনে আমাদের ধুরন্ধর বাবুর ভীষণ মনখারাপ...আজ নববর্ষ..সারা জীবন এই দিনে ধুরন্ধর বাবুর ভীষণ ব্যস্ততা থাকতো...সকাল থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে থাকতো..এবার ব্যাপার টা অন্য রকম..আজ প্রায় একমাস ধুরন্ধর বাবু গৃহবন্ধী..তার উপর গৃহিণীর ফাইফরমাশ খাটা..রক্ত চক্ষু ..বাইরে বেরোতে পারছেন না..পুলিশের লাঠির ভয়ে..ঘরে তিষ্টোতে পারছেননা গৃহিণীর অত্যাচারে ..সন্ধে বেলায় যে একটু সোমরস পান করে মৌতাত করবেন তার ও উপায় নেই..জীবনটা যেন একটা মরুভুমি হয়ে গেছে..তাও একটা আসার আলো ছিল যে নববর্ষের দিন হালখাতার কটা নিমন্ত্রণ আসবে..সেও গুড়ে বালি..তাও দিন কয়েক আগে ফোন করলেন মুদি দোকানে..বললেন আরে ভাই তোমার টাকাটা আমি হালখাতার দিন গিয়ে দিয়ে আসবো...সাথে সাথে দোকানদার বললো না, না দাদা আপনাকে আসতে হবে না..এখন টাকা দিতে হবে না..আপনি ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন..ধুরন্ধর বাবু গোমড়া মুখ করে বসে ভাবলেন, যা বাবা কি দিনকাল পড়লো..পাওনাদার ও টাকা নিতে চাইছেনা..টাকাটা দিতে গেলে তাও একটু বাইরে ঘোরা ঘুড়ি করা যেত একটু আড্ডা ও দেওয়া যেত...এখন তো সে উপায় ও নেই..ধুরন্ধর বাবুর তো পাগল পাগল অবস্থা..তারপর হটাৎ  ধুরন্ধর বাবুর মনে পরে গেলো আরে পান বিড়ির দোকানেও তো কিছু টাকা পাবে..প্রতিবারে তো নেমন্তন্ন করে..দেখি একটা ফোন করি..  যথারীতি ফোন করলেন দোকানদারকে...আরে তারা তুমি তো কিছু টাকা পাবে..একটা কাজ করি হালখাতার দিন আমি গিয়ে টাকাটা দিয়ে আসব..সাথে সাথে তারা বললো না না কাকু এখন আসবেন না..এখন আমার টাকার দরকার নেই...আপনি ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন..শেষ আশাটাও চলে গেলো...সবার মুখে এক কথা..আপনি ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন..ধুরন্ধর বাবু অনেক চিন্তা করে দেখলেন যে সবাই তো ঠিকই বলছে...বাইরে করনার দল ঘুরে বেড়াচ্ছে..না বাপু কাজ নেই বাইরে বেরিয়ে..বেঁচে থাকলে হালখাতা তো সামনের বার ও  আসবে..সামনের বছর দেখা যাবে..এবছর না হয় ঘরে থেকেই কাটাই..আর শুনুন আপনারাও ঘরে থাকুন..খুব দরকার না পড়লে বাইরে যাবেন না..লুডো খেলার মতো...ঘরে থাকলে পরে কেউ খেতে পারবে না..নিজে ঘরে থাকুন..পরিবারের জন্য..দেশের জন্য..মানুষের জন্য...ঘরে থাকুন...

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: